অপতথ্য প্রতিরোধে সাইবার নিরাপত্তা সেল গঠন করবে ইসি
Published: 27th, November 2025 GMT
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে চূড়ান্ত প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই বৈঠক শেষে ইসির সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, অপতথ্য প্রতিরোধ ও গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণে একটি বিশেষ সাইবার নিরাপত্তা সেল গঠন করা হবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে করা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবও উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে জামায়াতের মনোনয়ন পেলেন ফয়জুল হক
বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় জার্মানি
ইসি সচিব বলেছেন, নির্বাচনকালে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকির মূল দায়িত্বে থাকবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কমিশন সামগ্রিক সমন্বয় করবে এবং কাজের সুবিধার্থে একটি পর্যবেক্ষণ সেলও থাকবে। সেলের প্রতিনিধিত্ব সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর প্রস্তাব অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে।
তিনি জানান, অপতথ্য ও গুজব প্রতিরোধে বিভিন্ন গণমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম পর্যবেক্ষণ করবে নতুন সাইবার নিরাপত্তা সেল। এ কাজে ইউএনডিপির প্ল্যাটফর্মসহ তথ্য মন্ত্রণালয়, সিআইডি ও অন্যান্য তথ্য যাচাইকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
যোগাযোগ কৌশল প্রসঙ্গে আখতার আহমেদ বলেন, নির্দেশনা শুধু ওপর থেকে নিচে যাবে না; তৃণমূল থেকেও তথ্য উঠে আসবে, যাতে দ্রুত সমন্বয় করা যায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোতায়েন পরিকল্পনা তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে—স্ট্যাটিক মোতায়েন, মোবাইল ইউনিট এবং কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ফোর্স। এসবের পাশাপাশি থাকবে চেকপোস্ট, মোবাইল চেকপোস্ট ও বিশেষ স্ট্রাইকিং ফোর্স। এনটিএমসির প্রযুক্তি এবং পূজার সময় ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কাজে লাগানো হবে।
বৈঠকে ইন্টারনেট দুর্বল এলাকায় সংযোগ নিশ্চিত করা, বডি-ওর্ন ক্যামেরার সঠিক ব্যবহার, হারানো বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সন্ত্রাসী নজরদারির ওপর জোর দেওয়া হয়।
ইসি সচিব বলেন, বিদেশ থেকে আসা পোস্টাল ভোটের নিরাপত্তায় এয়ারপোর্ট ও তেজগাঁও ডাক বাছাই কেন্দ্রে দ্বিগুণ নজরদারি রাখা হবে। সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও গণনা—সব ধাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরো জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের আপ্যায়ন গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যানবাহন সংকট হলে দপ্তরের গাড়ি অধিগ্রহণ বা ভাড়ায় ব্যবস্থার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
আখতার আহমেদ বলেন, কমিশনের নিজস্ব বাহিনী না থাকায় প্রথম দিন থেকেই আচরণবিধি প্রয়োগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত ভূমিকার ওপর নির্ভর করতে হবে। বাহিনীগুলো নির্বাচনকালীন সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে।
ঢাকা/এএএম/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইস ইস সমন ব
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের প্রতিশ্রুতি ও কাজে মিল দেখতে চাই
মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী ও ভক্ত-অনুরাগীদের ওপর হামলা ও হুমকি ধারাবাহিক মব সহিংসতা এবং তা ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। গত সাড়ে ১৪ মাসে রাজনীতির নামে হোক আর ধর্মের নামে হোক বা যেকোনো স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারণে দেশে মব সহিংসতার যে বিস্তার ঘটেছে, তা জননিরাপত্তা নিয়ে নাগরিক উদ্বেগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাজার, খানকা, দরগায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ থেকে শুরু করে বাউল–বয়াতিদের ওপর আক্রমণ—কোনো ঘটনাকেই বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। আইনের দৃষ্টিতে এসব ফৌজদারি অপরাধ। আর এসব কর্মকাণ্ড নিশ্চিতভাবেই যে সহনশীলতা ও বহুত্ববাদী সংস্কৃতি আমাদের সমাজকে ভেতর থেকে সম্প্রীতির সুতায় বেঁধে রেখেছে, তার মূলে আঘাত। নাজুক সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠীগুলোর সুরক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতির বিপরীতে নেওয়া পদক্ষেপে বিস্তর ফারাক থাকায় বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে আমরা মনে করি।
৪ নভেম্বর মানিকগঞ্জের একটি পালাগানের আসরে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের একটি মন্তব্য ঘিরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা হয়। তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীরা তাঁর মুক্তির দাবিতে গত রোববার মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেন। একই দিন ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে একদল লোক বিক্ষোভ মিছিল বের করে। একপর্যায়ে তাদের একটি অংশ আবুল সরকারের অনুসারী ও ভক্তদের ওপর হামলা করে। লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে মেরে কয়েকজনকে আহত করে। তাদেরও একজন আহত হয়।
কারও বক্তব্যে কেউ বিক্ষুব্ধ হলে সে ক্ষেত্রে আইনি প্রতিকারের সুযোগ রয়েছে। বাউলশিল্পী আবুল সরকারের মামলায় বিচারিক প্রক্রিয়া যখন চলমান, তখন কর্মসূচি দিয়ে হুমকি ও হামলা করা কেন হবে? পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকার পরও মানিকগঞ্জ প্রশাসন ও পুলিশ কেন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারল না? এর আগে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে একটি মাজারে হামলা ও কবর থেকে লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় দেখা গিয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কার পরও আগাম কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছিল সেখানকার প্রশাসন ও পুলিশ।
চব্বিশের ৫ আগস্টের পর পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার সুযোগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মব সহিংসতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যায়। পুলিশ পুনর্গঠন করে তাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার যথেষ্ট সময় পেয়েছে বলে মনে করি। মানিকগঞ্জে বাউলদের ওপর যে সহিংসতা ঘটেছে, সেটা ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারাটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
নাজুক সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠীর ওপর একের পর এক হামলা হলেও সরকার হামলাকারীদের এই বার্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, যে দল-মত-পথের অনুসারী হোক না কেন, একজন নাগরিকের জানমালের ওপর হামলা ও ধর্ম চর্চার স্বাধীনতার ওপর আক্রমণের অধিকার কারও নেই এবং এ রকম কোনো হামলা হলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ব্যর্থতা থেকেই একদল লোক মনে করছে, তারা চাইলেই যেকোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা করার অধিকার রাখে।
নাগরিক সমাজের নানা পক্ষ শুরু থেকেই মব সহিংসতা ঠেকাতে সরকারকে জোরালো ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। পরিতাপের বিষয় হলো, সরকারের কোনো কোনো অবস্থানের কারণে মব সহিংসতা প্রশ্রয় পাচ্ছে। আমরা দল-মত-পথনির্বিশেষ নাগরিকের জানমাল ও অধিকার রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতি ও পদক্ষেপে মিল দেখতে চাই।
বাউল, সুফি দর্শন ও মানবতাবাদী চর্চা এ অঞ্চলের দীর্ঘ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বাউল, বয়াতি, গায়েনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মানিকগঞ্জে হামলার ঘটনায় যুক্তদের চিহ্নিত করে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।