বিদায়ী দুই উপদেষ্টা সরকারে থেকে কেমন করলেন
Published: 11th, December 2025 GMT
বিদায়ী দুই উপদেষ্টা কেমন করলেন—জানতে চাওয়া হয়েছিল দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্র প্রতিনিধি দুই উপদেষ্টার কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক। সেই প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভূমিকা তাঁরা রাখতে পেরেছেন, তা বলা যাবে না; বরং তাঁদের মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং তাঁদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মেধাবীদের লড়াই ও দেশে মেডিকেলে ভর্তির বাস্তবতা
১২ ডিসেম্বর সারা দেশে একযোগে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এই পরীক্ষার আয়োজন করেছে। সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও সুশৃঙ্খল এই পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নপূরণের সুযোগ পান।
বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি, বেসরকারি ও সামরিক বাহিনীর পরিচালিতসহ মোট ১১২টি মেডিকেল কলেজ আছে। এগুলোতে মোট আসনসংখ্যা ১২,১৮৯। এর মধ্যে সরকারি কলেজে ৩৭, বেসরকারি কলেজে ৬৮ এবং সামরিক বাহিনী পরিচালিত কলেজ ৭টি। প্রতিবছর প্রায় এক লাখের বেশি শিক্ষার্থী মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। মেধার জায়গা থেকে অনেকেই উপযুক্ত হলেও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৪০ থেকে ৫০ হাজার শিক্ষার্থী।
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রত্যেকেই হয়তো এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হওয়ার যোগ্য। কিন্তু আসনসংখ্যা সীমিত হওয়ায় মাত্র ১১ হাজার শিক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। ফলে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে বোঝা যায় যে শুধু কঠিন প্রতিযোগিতার কারণেই অনেক যোগ্য শিক্ষার্থী মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পায় না।
মেডিকেল ভর্তি প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি মেধাভিত্তিক এবং এখানে আর্থিক বা ব্যক্তিগত কোনো প্রভাব খাটানোর সুযোগ নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে শুরু করে বেসরকারি কলেজ—সবার জন্য একই দিনে, একই প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি তত্ত্বাবধানে বেসরকারি কলেজে ভর্তি হলেও পরিচালনা পর্ষদের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
আজও মা–বাবার কাছে উচ্চশিক্ষার প্রথম পছন্দ মেডিকেল। সামাজিক মর্যাদা, কর্মস্থলের নিরাপত্তা এবং পেশাগত সম্মানের কারণে চিকিৎসক পাত্র-পাত্রীরা বিশেষ গুরুত্ব পান। তবুও অজানা কারণে চিকিৎসকদের সম্মান ও কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।গত কয়েক বছর ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অটোমেশন যুক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা তাদের নম্বর ও পছন্দ অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে কলেজ পায়। ফলে আর্থিক সামর্থ্য বা পরিচিতি এখানে কোনো ভূমিকা রাখে না। তবুও অনেকেরই ভুল ধারণা আছে যে টাকা দিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হওয়া যায়। বহু উচ্চপদস্থ ব্যক্তি প্রায়ই ফোন করে জানতে চান, ‘কত টাকা লাগবে?’ যা শুনে বিব্রত হতে হয়। তাদের বুঝিয়ে বলতে হয় যে, মেডিকেল ভর্তি সম্পূর্ণ জাতীয় মেধানির্ভর–প্রক্রিয়া এবং ভর্তির খরচও সরকার নির্ধারিত।
অনেকের ধারণা, মেডিকেলে পড়ার খরচ খুব বেশি; কিন্তু বাস্তবে ভারত বা নেপালের প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে পড়তে প্রায় এক কোটি টাকা লাগে, যেখানে বাংলাদেশে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য খরচ অর্ধেক এবং দেশীয় শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কম। তা ছাড়া বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষার মান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। রোগীর বৈচিত্র্য ও সংখ্যার দিক থেকেও বাংলাদেশের ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতা বিশ্বে উল্লেখযোগ্য।
আরও পড়ুনভর্তি পরীক্ষা: মেধা যাচাই নাকি প্রাতিষ্ঠানিক ট্যাগের দৌরাত্ম্য২৪ নভেম্বর ২০২৫বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুনাম অর্জন করেছে। উদাহরণ হিসেবে ভুটানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসক লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। নেপালের বিখ্যাত হৃদ্রোগ সার্জন চিকিৎসক ভগবান কৈরালা বাংলাদেশে জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট থেকে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এসব উদাহরণ প্রমাণ করে বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মানজনক অবস্থানে রয়েছে।
তার পরও চিকিৎসক ও চিকিৎসা পেশাকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং হাসপাতালে চিকিৎসায় বাধা সৃষ্টির মতো ঘটনা মাঝেমধে৵ দেখা যায়। এসব আচরণ মূলত অজ্ঞতা থেকে আসে। রাষ্ট্র যদি এ বিষয়ে আরও কঠোর অবস্থান নেয়, তবে এ ধরনের প্রবণতা কমে যাবে।
আজও মা–বাবার কাছে উচ্চশিক্ষার প্রথম পছন্দ মেডিকেল। সামাজিক মর্যাদা, কর্মস্থলের নিরাপত্তা এবং পেশাগত সম্মানের কারণে চিকিৎসক পাত্র-পাত্রীরা বিশেষ গুরুত্ব পান। তবুও অজানা কারণে চিকিৎসকদের সম্মান ও কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
সবশেষে বলতে চাই, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে যারা কঠোর পরিশ্রম করে মেধার ভিত্তিতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, তাদের সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন। জয় হোক মেধাবীদের।
আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী চিকিৎসক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
*মতামত লেখকের নিজস্ব