রাজশাহীর তানোরে ৩০-৩৫ ফুট গভীর গর্তে পড়ে যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধারকাজ অব্যাহত আছে। গতকাল বুধবার রাতভর উদ্ধার অভিযান চালায় ফায়ার সার্ভিস। প্রায় ১৬ ঘণ্টার চেষ্টার পরও শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় উদ্ধারকাজ চলছিল।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, মূল গর্তের পাশ থেকে কেটে শিশুটিকে উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। ৩৫ ফিট গভীরে গিয়েও শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। এ সম্পর্কে আজ সকালে তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্ধার কাজ শেষ হয়নি। খনন চলছে।’

গতকাল বেলা একটার দিকে তানোর উপজেলার কোয়েল হাট পূর্ব পাড়া গ্রামে সাজিদ নামের দুই বছরের একটি শিশু গভীর গর্তে পড়ে যায়। সে কোয়েল হাট পূর্বপাড়া গ্রামের মো.

রাকিবের ছেলে।

স্থানীয় লোকজন জানান, রাজশাহীর তানোর উপজেলার পচন্দর ইউনিয়নের এই গ্রামে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। এ এলাকায় এখন গভীর নলকূপ বসানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে। এ অবস্থার মধ্যে কোয়েলহাট গ্রামের কছির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি তাঁর জমিতে পানির স্তর পাওয়া যায় কি না, সেটা যাচাই করার জন্য গর্তটি খনন করেছিলেন। সেই গর্ত ভরাটও করেছিলেন, কিন্তু বর্ষায় মাটি বসে গিয়ে নতুন করে গর্ত হয়। সেই গর্তেই শিশুটি পড়ে যায়।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে দুই বছরের শিশু ৩০ ফুট গভীর গর্তে, ফায়ার সার্ভিস অক্সিজেন দিচ্ছে১৫ ঘণ্টা আগে

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এক্সকাভেটর দিয়ে খনন শুরু হয়। ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট কাজ করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় পুলিশ ও সেনাবাহিনী। রাত ১০টার দিকে ছোট এক্সকাভেটর দিয়ে আর খনন করা সম্ভব হয়নি। রাজশাহী সিটি করপোরেশন থেকে পাঠানো বড় এক্সকাভেটর দিয়ে খনন শুরু করা হয়েছিল। রাতভর একই কাজ চলেছে। আজ সকাল আটটার দিকে প্রায় ৩৫ ফিট গভীরে গিয়ে মূল গর্তের পাশ কেটে শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, বাচ্চা আরও গভীরে চলে গেছে।

আরও পড়ুনপেছনে ফিরে দেখেন ছেলে নেই, গর্তের ভেতর থেকে ডাকছে ‘মা, মা’ বলে১২ ঘণ্টা আগে

ফায়ার সার্ভিসের রাজশাহীর সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম গতকাল রাতে জানান, তারা বেলা আড়াইটার দিকে এই ঘটনার খবর পান। দ্রুতই উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়। তারা যাওয়ার আগে স্থানীয় লোকজন প্রাথমিকভাবে চেষ্টা করার কারণে কিছু মাটির ভেতরে পড়েছিল। এতে কিছুটা অসুবিধা হয়েছে। তারা এসেই পাইপের মাধ্যমে গর্তে অক্সিজেন দেওয়া শুরু করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উদ ধ র ক গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

শরিক ২৯ দলের বৈঠক, বিএনপির সঙ্গে দ্রুত ফয়সালার সিদ্ধান্ত

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ২৯টি দল গতকাল বুধবার বৈঠক করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে দলগুলো আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিকদের আসন সমঝোতার বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে দ্রুত একটা ফয়সালায় আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শরিক দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, রাষ্ট্রকাঠামোর মৌলিক সংস্কার, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তি, গণতন্ত্রের উত্তরণে সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন প্রশ্নে বিএনপি যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিল, এখন সেখান থেকে দলটির সরে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। বিশেষ করে একসঙ্গে নির্বাচনের প্রশ্নে রাজনৈতিক মিত্র দলগুলোকে এড়িয়ে চলতে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তাঁরা বিএনপির সঙ্গে বসতে চাইছেন।

শরিক দলের সূত্রগুলো বলছে, এ বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে কথা বলার জন্য গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী সাইফুল হককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি গতকাল রাতেই বিএনপির দুজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছেন, তাঁরা আজ বৃহস্পতিবার অথবা আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যে তাঁদের সঙ্গে বসতে চান।

আমরা ২৯ দল বসেছিলাম। আমরা বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কটা ছিন্ন করতে চাই না সংস্কার এবং গণতন্ত্রের উত্তরণের স্বার্থে। তবে এই সম্পর্কে যেন সবার সম্মান, মর্যাদা এবং অধিকারটা থাকে।১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা

গতকাল বিকেলে শরিক দলগুলোর এই বৈঠক হয় নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে বৈঠকে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণতন্ত্র মঞ্চের সাইফুল হক ও জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক, নেজামে ইসলাম পার্টির আশরাফুল ইসলাম, ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়কারী ফরিদুজ্জামান ২৯ দলের নেতারা অংশ নেন।

সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ২৯ দল বসেছিলাম। আমরা বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কটা ছিন্ন করতে চাই না সংস্কার এবং গণতন্ত্রের উত্তরণের স্বার্থে। তবে এই সম্পর্কে যেন সবার সম্মান, মর্যাদা এবং অধিকারটা থাকে।’

এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিনজন নেতা বৈঠক করেন।

শরিক দলগুলোর একটি সূত্র জানায়, এ বিষয়গুলো গতকাল রাতের আলোচনায় উঠেছিল। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল। কিন্তু তারা অপারগ, কারণ মনোনয়নের এ সিদ্ধান্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতের আলোচনায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাইফুল হক সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আলোচনা অসমাপ্ত রেখে বের হয়ে আসেন। এ বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার সারমর্ম হচ্ছে, সাইফুল হক যে আসনে নির্বাচন করতে চাইছেন, সেখানে বিএনপি তাঁর মনোনয়ন নিশ্চিত করতে কিছুটা অপারগতার ইঙ্গিত দেয়। এতে সাইফুল হক একমত হতে পারেননি, তিনি আলোচনা অসমাপ্ত রেখে বের হন।

জানা গেছে, সাইফুল হক ঢাকা-৮ আসনে (মতিঝিল-পল্টন-শাহজাহানপুর-শাহবাগ ও রমনা) নির্বাচন করতে আগ্রহী। সেটি সম্ভব না হলে তিনি ঢাকা-১২ আসনে (তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল-হাতিরঝিল-শেরেবাংলা নগর আংশিক) নির্বাচন করতে চান। তিনি এই এলাকার বাসিন্দা।

বিএনপি যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, সেখান থেকে যদি বিএনপি সরে আসে, সেটার দায়দায়িত্ব বিএনপির। আমাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আলোচনা অব্যাহত আছে।সাইফুল হক, ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক

যদিও দুটি আসনেই বিএনপি গত ২ নভেম্বর প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ঢাকা-৮ আসনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং ঢাকা-১২ আসনে ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল আলম (নীরব)। ঢাকা-১২ আসনের প্রার্থীকে নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে বেশ আলোচনা-সমালোচনা আছে। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তাঁর বিরুদ্ধে ‘দখল-চাঁদাবাজির’ অভিযোগ ওঠায় ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়।

শরিক দলগুলোর একটি সূত্র জানায়, এ বিষয়গুলো গতকাল রাতের আলোচনায় উঠেছিল। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল। কিন্তু তারা অপারগ, কারণ মনোনয়নের এ সিদ্ধান্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের।

আমরা কোনো দলের সঙ্গে বৈঠক করছি না, ব্যক্তিপর্যায়ে কথা বলছি। গতকাল (মঙ্গলবার) সাইফুল হক সাহেব এসেছিলেন। আলোচনা হয়েছে, কথা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম

সাইফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, সেখান থেকে যদি বিএনপি সরে আসে, সেটার দায়দায়িত্ব বিএনপির। আমাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আলোচনা অব্যাহত আছে।’

সংশ্লিষ্ট একটি জানায়, মঙ্গলবার রাতের আলোচনায় মিত্র দলগুলোর মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করা না হলে বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কের ইতি টানার ইঙ্গিত দিয়ে আসেন সাইফুল হক।

তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোনো দলের সঙ্গে বৈঠক করছি না, ব্যক্তিপর্যায়ে কথা বলছি। গতকাল (মঙ্গলবার) সাইফুল হক সাহেব এসেছিলেন। আলোচনা হয়েছে, কথা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ