ছবি: পেক্সেলস

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির প্রার্থী নিয়ে বিরোধ মেটেনি

কুষ্টিয়ার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতেই বিএনপির প্রার্থী নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে তিনটি আসনে নিয়মিত আন্দোলন চালিয়ে আসছেন দলের একাংশের নেতা–কর্মীরা। তবে তফসিল ঘোষণা হলে সবাই ধানের শীষের প্রার্থীকে জয়ী করতে একসঙ্গে কাজ করবেন বলে মনে করছেন দলীয় প্রার্থীরা। তাঁরা মাঠে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন।

জেলার সব কটি আসনে প্রায় ১০ মাস আগে প্রার্থী ঘোষণা করে জামায়াতে ইসলামী। অবশ্য মধ্যে একটি আসনে প্রার্থী বদল করেছে দলটি। জামায়াতের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় নিয়মিত উপজেলা থেকে ইউনিয়ন, ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ডে ছুটছেন দলীয় নেতা–কর্মীরা।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করলেও একাধিক আসনে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন নেতারা। এককভাবে প্রতিটি আসনে প্রচার চালাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থীরা।

১৯৯১ সালে জেলার তিনটি আসনে জয় পায় বিএনপি। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে সব কটি আসনেই তারা জয় পায়। ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সব আসনে জয় পান। জামায়াত ১৯৮৬ সালে জেলার একটি আসনে জয় পেয়েছিল।

কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর)

সীমান্তবর্তী দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি চরবেষ্টিত। মাদক, চোরাচালান, অস্ত্র পাচার, বেকারত্ব, নদীভাঙন এলাকার মূল সমস্যা। ১৯৯১ সাল থেকে পরপর তিনটি সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির প্রয়াত নেতা আহসানুল হক (পচা মোল্লা)। তিনি ২০০১ সালে প্রতিমন্ত্রীও হন। তিনি মারা যাওয়ার পর ২০০৪ সালের উপনির্বাচনে তাঁর ছেলে রেজা আহমেদ (বাচ্চু মোল্লা) জয়ী হন। এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহমেদ।

ঢাকা মহানগর যুবদল উত্তরের আহ্বায়ক শরীফ উদ্দিন জুয়েল মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। শেষ পর্যন্ত দল যাঁকে নির্ধারণ করবে, তাঁর পক্ষে কাজ করব।’

রেজা আহমেদ বলেন, ‘এ উপজেলার যত উন্নয়ন হয়েছে, আমার বাবার হাত ধরে। দলের কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে।’

এখানে জামায়াতের প্রার্থী মোহাম্মদ বেলাল উদ্দীন। তিনি দৌলতপুর উপজেলা জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এবার জামায়াতকে ভোট দিতে চান। নারী ভোটাররাও এবার আগ্রহী। আমাদের ভোট অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে।’

এনসিপি থেকে এই আসনে লড়তে চান দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম। তিনিসহ কয়েকজন এখানে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এ আসনে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী আমিনুল ইসলাম এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন।

কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর)

এবার আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য রাগীব রউফ চৌধুরী। তাঁর বাবা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুর রউফ চৌধুরী ১৯৯১ সালে বিএনপির মনোনয়নে এখানে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।

দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আসনটিতে বিএনপির বিরোধ মেটেনি। দলের সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল–সমাবেশ করে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছেন।

বাবার আসনে জয় পেতে নিয়মিত উঠান বৈঠকের পাশাপাশি নারী-পুরুষ আর তরুণদের ভোট টানতে আলাদা দল গঠন করেছেন রাগীব রউফ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমাকে দল মনোনয়ন দিয়েছে। আমি নতুন কিছু করতে চাই। আমি নির্বাচিত হলে টেন্ডারবাজি, নিয়োগ–বাণিজ্য, ভাগাভাগি বন্ধ হয়ে যাবে, এ কারণে হাতে গোনা কয়েকজন নেতা বিরোধিতা করছেন।’

১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী আবদুল ওয়াহেদ আসনটিতে জয় পেয়েছিলেন। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আশা নিয়ে জামায়াত আসনটিতে প্রার্থী করেছে মিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল গফুরকে। তিনি জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির। তিনি প্রথমে ইউপি সদস্য, পরে ইউপি চেয়ারম্যান ও শেষে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আবদুল গফুর বলেন, ‘আমরা নারী ও তরুণদের ভোট এবার বেশি পাব বলে আশা করছি।’

এনসিপি থেকে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলের দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক নয়ন আহমেদ ও সাংবাদিক ইয়াসির আরাফাত। ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের নেতারা এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন।

কুষ্টিয়া-৩ (সদর)

জামায়াত প্রথম দিকে দলের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ফরহাদ হুসাইনকে কুষ্টিয়া-৩ আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। পরে গত ২৫ মে তাঁকে বাদ দিয়ে আলোচিত ইসলামি বক্তা আমির হামজাকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। তিনি নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

জেলা জামায়াতের আমির আবুল হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, পৌরসভাসহ প্রতিটি ইউনিয়নে জামায়াতের ব্যাপক কর্মী–সমর্থক রয়েছেন। জেলার সব আসনে মানুষ পরিবর্তন চাইছেন। সেটাই হবে।

১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সদর আসনটিতে বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন। বিএনপি থেকে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন জাকির হোসেন সরকার। তিনি জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় (২০১৪) বড় ব্যবধানে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জয়ী জাকির হোসেন সংসদ নির্বাচনেও জয় পাবেন বলে মনে করছেন কর্মী–সমর্থকেরা। তবে মনোনয়ন না পাওয়া বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিনের কর্মী–সমর্থকেরা আন্দোলন চালিয়ে আসছেন দলীয় প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে।

জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘সদরে আমি বিপুল ভোটে জামায়াতের প্রার্থীকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। ভোটের ব্যবধান ছিল অনেক। এবারও আশা করছি, আসনটি দলকে উপহার দিতে পারব।’

এদিকে এনসিপির জেলার প্রধান সমন্বয়ক ভেড়ামারার বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস টনিসহ কয়েকজন এখানে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। ইসলামী আন্দোলন থেকে আহম্মদ আলী, গণ অধিকার পরিষদ থেকে আবদুল খালেক ও খেলাফত মজলিস থেকে আবদুল লতিফ প্রার্থী হতে পারেন।

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা)

সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীকে কুষ্টিয়া–৪ আসনে প্রার্থী করেছে বিএনপি। তবে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদী তাঁর সমর্থকদের নিয়ে মাঠে আন্দোলন করছেন। কুমারখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র নূরুল ইসলাম আনছার প্রামাণিকের সমর্থকেরাও সোচ্চার মাঠে। এ অবস্থায় দলীয় প্রার্থীকে দুই পক্ষকে সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে।

বিএনপির প্রার্থী মেহেদী আহমেদ বলেন, ‘আমাকে দল মনোনয়ন দিয়েছে। আমি এর আগে এমপি হয়ে এলাকায় বিপুল উন্নয়ন করেছি। মাঠে আমার বিপুল জনপ্রিয়তা আছে।’

আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মোহাম্মদ আনোয়ার খানও মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনী জোট হলে এখানে জামায়াত আসনটি ইসলামী আন্দোলনকে ছাড় দিতে পারে বলে ভোটের মাঠে আলোচনা আছে।

এ আসনে এনসিপি থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন সাংবাদিক কে এম আর শাহিন। এ ছাড়া গণ অধিকার পরিষদের যুবসংগঠন যুব অধিকার পরিষদের সহসভাপতি শাকিল আহমেদ দলীয় প্রার্থী হবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ