ইশতেহারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থ কি রক্ষা হবে
Published: 11th, December 2025 GMT
সমাজবিজ্ঞানের গবেষণার মনোযোগের প্রধান কেন্দ্র হলো মানুষ ও তার কল্যাণে কাজ করা। আর গবেষণাগার হিসেবে বিবেচনা করা হয় মানবসমাজকে। গবেষণার জন্য আকর্ষণীয় একটি ক্ষেত্র হচ্ছে নগরে অবস্থিত বস্তি কিংবা নগরের কাছাকাছি অবস্থিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। আমাদের রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠা কড়াইল ও অন্য বস্তিগুলো ঠিক তেমনই এলাকা, যা গবেষক ও এনজিও কর্মীদের কাজের একটি বড় ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে, বিশেষ করে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন, অথচ কড়াইল বস্তিতে গবেষণার জন্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার জন্য যেতে হয়নি, এমন গবেষক খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিলই হবে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ ধরনের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বাসস্থান গবেষকদের জন্য একটি আদর্শ স্থান। স্বদেশি থেকে শুরু করে বিদেশি গবেষক এবং দাতা সংস্থা ও এনজিওগুলোর কর্মকাণ্ড কড়াইল বস্তিতে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত।
বাংলাদেশকে একসময় বলা হতো এনজিওর স্বর্গরাজ্য। সে বিবেচনায় তাদের উপস্থিতি কড়াইলের মতো বস্তিতে থাকবে, সেটিই স্বাভাবিক। এমন জনগোষ্ঠীকে ঘিরে বেসরকারি খাতের নানাবিধ কর্মকাণ্ড ও প্রাতিষ্ঠানিক উপস্থিতি এই বস্তির জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সে তুলনায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি বেশ কম বা তেমন একটা নেই বললেই চলে। এর সঙ্গে রয়েছে অগ্নিকাণ্ডসহ নানাবিধ দুর্যোগ, যা তাদের প্রাত্যহিক জীবনে নানা ঝুঁকি তৈরি করে।
রাষ্ট্র তাদের জীবনমান উন্নয়নে খুব একটা অগ্রাধিকার না দিলেও বেসরকারি সংস্থাগুলো তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে কড়াইলের মতো এলাকার সমস্যার কিছুটা সমাধান ব্যতীত অন্য অবকাঠামোগত সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। সীমিত সুযোগ ও সামর্থ্যের কারণে তাদের কাছে সেটি আশা করাও বোধ হয় সঠিক প্রত্যাশা নয়।
আরও পড়ুনরাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে নতুনত্ব আনা জরুরি২৮ অক্টোবর ২০২৫সেই বিবেচনায় রাষ্ট্রের উচিত এ ধরনের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক উন্নয়নে বিশেষ পরিকল্পনা সাজানো। ঠিক এ জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে তাদের অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে বড় বড় প্রতিশ্রুতি থাকলেও এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকেন্দ্রিক প্রস্তাবনা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকে না। যদিও অনেকে বলে থাকে, একটি বৈষম্যহীন দেশ তারা গড়তে চায়, কিন্তু তারা সেটি কীভাবে করতে চায়, তার বিস্তারিত রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা থাকে না। যে কারণে সাধারণ মানুষও সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে খুব একটা আশাবাদী হতে পারেন না কিংবা একধরনের ধোঁয়াশায় থাকেন।
আমরা সব সময় দেখি, ভোটের রাজনীতিতে নির্বাচনের সময় এই ভোটারদের কদর বেড়ে যায়। তখন এই প্রান্তিক ভোটাররাই গুরুত্বের একটি জায়গায় চলে আসেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁদের স্বার্থ কতটা বিবেচিত হয়, সে এক প্রশ্ন। অথচ উন্নয়নের অন্যতম একটি লক্ষ্য হওয়া উচিত এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়ন।
আমরা যত দিন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে জাতীয় স্বার্থে রূপান্তরিত করতে না পারব, তত দিন উন্নয়নের সুফল আমাদের মতো সুবিধাভোগীদের ঘরেও পৌঁছাবে না। বিভিন্ন উন্নত দেশের দিকে তাকালে দেখতে পাই, তাদের অবকাঠামো গড়ে তোলা হয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থকে মাথায় রেখে। স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে সব সেবা তাদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। অথচ আমাদের এখানে এক স্বাস্থ্যসেবার পেছনেই দৌড়াতে দৌড়াতে আমাদের সর্বস্বান্ত হতে হয়। বাংলাদেশের বড় বড় হাসপাতালের খরচের দিকে তাকালে মনে হয়, অসুস্থ হওয়াটা যেন এক আজন্ম পাপ এ দেশে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে আমাদের উন্নয়ন ভাবনা ও পরিকল্পনায় বেশির ভাগ সময় ‘ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া’ বা ‘টপ ডাউন’ দৃষ্টিভঙ্গির বহুল ব্যবহার হয়ে থাকে, যা অনেক সময় সঠিক ও ইতিবাচক ফল নিয়ে আসে না। ফলে দারিদ্র্য বিমোচন কিংবা উন্নয়ন প্রকল্পকে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর চাহিদার আলোকে বিবেচনা করতে হবে। এর সঙ্গে উন্নয়ন পরিকল্পনায় এসব জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যের বয়ানকেও গুরুত্ব দিতে হবে।এ প্রসঙ্গে আমরা বিএনপির স্বাস্থ্যসেবার প্রস্তাবনার কথা নিয়ে আসতে পারি, যেখানে তারা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আসতে চায়। যদি তারা সেটি বাস্তবতায় নিয়ে আসতে পারে, সেটি হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) মডেলের হুবহু বাস্তবায়নের চিন্তা থেকে তাদের বের হয়ে আসতে হবে। কেননা আমরা বিগত সময়ে দেখেছি, পশ্চিমা মডেলগুলো হুবহু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়নযোগ্য হয় না।
এর সুফল পেতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশের পটভূমিতে এ মডেলগুলোর অভিযোজন জরুরি। যেমনটা চীন করে দেখিয়েছে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাফল্যের মধ্য দিয়ে। তারা হুবহু মার্ক্সীয় ধারণার প্রয়োগ করেনি; বরং নিজদের দেশের সাপেক্ষে একটি টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। আমাদেরও বৈশ্বিক নানা ব্যবস্থা থেকে ভালো উদাহরণটি নিয়ে আমাদের সামাজিক পটভূমিতে তার প্রয়োগ করতে হবে। তা না হলে এর মধ্য দিয়ে অনেক অর্থ বিনিয়োগ হবে, কিন্তু তার ফলাফল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌঁছাবে না; বরং সেই প্রকল্প হবে প্রশ্নবিদ্ধ।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে আমাদের উন্নয়ন ভাবনা ও পরিকল্পনায় বেশির ভাগ সময় ‘ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া’ বা ‘টপ ডাউন’ দৃষ্টিভঙ্গির বহুল ব্যবহার হয়ে থাকে, যা অনেক সময় সঠিক ও ইতিবাচক ফল নিয়ে আসে না। ফলে দারিদ্র্য বিমোচন কিংবা উন্নয়ন প্রকল্পকে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর চাহিদার আলোকে বিবেচনা করতে হবে। এর সঙ্গে উন্নয়ন পরিকল্পনায় এসব জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যের বয়ানকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
আরও পড়ুন'তারুণ্যবান্ধব' ইশতেহারে সত্য-মিথ্যার জোড়াতালি২৩ ডিসেম্বর ২০১৮এ প্রসঙ্গে আমরা বিখ্যাত গবেষক রবার্টস চেম্বারসের প্রস্তাবনাকে মাথায় রাখতে পারি, যেখানে তিনি বলেছেন দরিদ্র মানুষের চোখে দারিদ্র্যের সংজ্ঞা ভিন্ন—যেখানে দারিদ্র্যের পাশাপাশি মানসিক চাপ, ভয়, নিরাপত্তাহীনতা ও মর্যাদাপূর্ণ সামাজিক জীবনের অভাবকেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখতে হবে। দারিদ্র্যের অভিজ্ঞতাকে এ বিষয়গুলো আরও ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় নিয়ে যায়। যে কারণে দরিদ্র বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী সমাজের মূলধারায় সব সময় অদৃশ্য থাকে, অথচ আমাদের নাগরিক জীবনকে সহজ করার পেছনে তাদের অবদান অনস্বীকার্য।
এসব কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের প্রধান সমস্যাগুলো আগে চিহ্নিত করতে হবে। দারিদ্র্যকে দেখতে হবে ‘বটম আপ’ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, সেটিকে অনুধাবন করতে হবে ভুক্তভোগীর বয়ানের মধ্য দিয়ে।
এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, গ্রামীণ জনপদের সমস্যা শহুরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা থেকে ভিন্ন হলেও কিছু জায়গা আছে, যা সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য একই রকম, যেমন কর্মসংস্থানের অভাব ও বাসস্থানের সমস্যা। বিশেষ করে আমাদের নজর দিতে হবে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টির দিকে, যা বিএনপির নির্বাচনী প্রচারে আমরা দেখি, সেটি প্রশংসার দাবি রাখে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও এ দৃষ্টিভঙ্গির অনুকরণ করতে পারে। তবে এ নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ‘মেগা প্রকল্প’ এড়িয়ে স্থানিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থসংবলিত কর্মসংস্থানের জন্য বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিতে হবে, যা হতে হবে টেকসই।
আমাদের মনে রাখতে হবে, দারিদ্র্য কোনো ব্যক্তিগত ব্যর্থতা নয়; বরং এটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কাঠামোগত সীমাবদ্ধতার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। যে কারণে নৃবিজ্ঞানী পল ফার্মার দারিদ্র্যের এ সমস্যাকে একটি কাঠামোগত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ প্রচেষ্টায় রাষ্ট্র যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোও অন্যতম স্টেকহোল্ডার। তাই এ দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে এখানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিগত দুই দশকে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর জনগণের যে আস্থাহীনতা গড়ে উঠেছে, জনগণের সে আস্থা ফিরে পেতেও এ দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সামনে যেহেতু নির্বাচন, তাই আমরা প্রত্যাশা করব রাজনৈতিক দলগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালনের অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের মাধ্যমে নিজেদের জনবান্ধব দলে পরিণত করবে। আর সেটি করতে পারলেই উন্নয়নের সুফল পৌঁছে যাবে পিছিয়ে পড়া সব জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায়।
বুলবুল সিদ্দিকী অধ্যাপক, রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
*মতামত লেখকের নিজস্ব
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ন ত ক জনগ ষ ঠ র স ক জনগ ষ ঠ র স ব র থ জনগ ষ ঠ র দ র ইশত হ র প রকল প র সমস য ব যবস থ দর দ র র স ফল আম দ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
হাজার হাজার উড়ান বাতিল ভারতের ইন্ডিগোর, বাজার মূলধন কমেছে ৪,৫০০ কোটি ডলার
হাজার হাজার উড়ান বাতিল হওয়ায় ভারতের বৃহত্তম বিমান পরিবহন সংস্থা ইন্ডিগোর অবস্থা এখন শোচনীয়। সুনামের ক্ষতি তো হচ্ছেই, সেই সঙ্গে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে তারা।
এই পরিস্থিতিতে গত এক সপ্তাহে ইন্ডিগোর মূল কোম্পানি ইন্টারগ্লোব এভিয়েশনের শেয়ারের দাম ১৭ শতাংশ কমেছে। গত ২৭ নভেম্বর কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল ৫ হাজার ৯১৭ রুপি। গতকাল মঙ্গলবার সেই শেয়ারের দাম কমে হয়েছে ৪ হাজার ৯১৩ রুপি। সেই সঙ্গে ইন্ডিগো যেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে, সেই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামও কমেছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের সূত্রে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের বাজার মূলধন ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি ডলার কমেছে। বিশ্লেষকেরা বলেছেন, উড়ান বাতিল, গ্রাহকদের টাকা ফেরত, জরিমানা, রুপির দুর্বল অবস্থান ও বিমানের কর্মী-সংক্রান্ত ব্যয়বৃদ্ধির চাপ মূল সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস মনে করছে, রাজস্ব ক্ষতি ও ভাবমূর্তি হ্রাসের কারণে এসব বিষয় ‘ঋণমানের পক্ষে নেতিবাচক’ হয়ে গেছে।
বাস্তবতা হলো, গত কয়েক দিনে ইন্ডিগোর দুই হাজারের বেশি উড়ান বাতিল হওয়ার জেরে লাখ লাখ যাত্রী ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। এই নজিরবিহীন পরিস্থিতির জন্য সরকারের কাছে ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চেয়েছে দেশটির বৃহত্তম বিমান সংস্থা। নিজেদের জবাবে ইন্ডিগো জানিয়েছে, যাত্রীদের অসুবিধার জন্য তারা ‘গভীরভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী’।
কিন্তু ক্ষমা চেয়ে তো আর আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারছে না ইন্ডিগো। বৈশ্বিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস রেটিং সতর্ক করেছে, ইন্ডিগোর ঋণমান নেতিবাচক করে দেওয়া হতে পারে। মুডিস আরও বলেছে, এর ফলে আয়ের ঘাটতি থেকে শুরু করে সম্ভাব্য জরিমানা—উভয় দিক দিয়েই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে ইন্ডিগোকে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে ইন্ডিগোর সাম্প্রতিক এই অস্থিরতাবিষয়ক আরও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। মুডিস বলেছে, উড়ান-সংক্রান্ত সাম্প্রতিক এই অস্থিরতা থেকে প্রমাণিত হয়, ইন্ডিগোর পরিকল্পনা, তদারকি ও সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ঘাটতি ছিল। যদিও নতুন নিয়ম (এফডিটিএল) এসেছে, সেগুলো সম্পর্কে তারা আরও এক বছর আগেই থেকেই অবগত ছিল।
মুডিস বলেছে, ইন্ডিগো নতুন বিধিনিষেধের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মতো সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। ফলে পুরো ব্যবস্থায় পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন হয়। পরিণতিতে এই হাজার হাজার উড়ান বাতিল।
ইন্ডিগো কী বলছে
প্রাথমিকভাবে এই বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করেছে ইন্ডিগো। সেগুলো হলো-
১. ছোটখাটো প্রযুক্তিগত ত্রুটি;
২. শীতকালীন সময়সূচি পরিবর্তন;
৩. খারাপ আবহাওয়া ও দৃশ্যমানতা কমে যাওয়া;
৪. আকাশপথে ও বিমানবন্দরগুলোয় অত্যধিক যানজট;
৫. পাইলটদের দায়িত্বসংক্রান্ত নতুন নিয়ম বা এফডিটিএল ও পালা নির্ধারণে সমস্যা।
সরকারের কঠোর অবস্থান
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারত সরকারও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ এই বিপর্যয় ঘটানো হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির বিমানমন্ত্রী রামমোহন নায়ডু। তাঁর কথায়, ‘ইন্ডিগো যেভাবে কাজ করে, তাতে এ ধরনের ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়।’
সংবাদমাধ্যমগুলোকে নায়ডু এ-ও জানান, তদন্তে যদি ইন্ডিগোর সিইওর কোনো গাফিলতি বেরিয়ে আসে, তাহলে তাঁকে বরখাস্ত করা হবে। পাশাপাশি ইন্ডিগোকে জরিমানা করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। নায়ডু আরও বলেন, ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশনের (ডিজিসিএ) কাছেও জানতে চাই—হচ্ছেটা কী। তদন্ত শেষ হলে আমরা ডিজিসিএর দিকেও নজর দেব।’ দুর্ভোগে পড়া যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে গতকাল ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে ডিজিসিএ। বিমানমন্ত্রী নায়ডু গত সোমবারই আভাস দিয়েছিলেন, ইন্ডিগোর শীতকালীন বিমানসূচি কমানো হবে। তাদের ‘স্লট’ বা বিমান চালানোর সূচি অন্য বিমান সংস্থাকে দেওয়া হবে।
এর পরেই গতকাল ডিজিসিএ ইন্ডিগোর পরিষেবা ৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। পরে আরও ৫ শতাংশ কমানোর কথাও জানায় তারা। অর্থাৎ বর্তমানে প্রতিদিন ইন্ডিগোর যা উড়ান-সংখ্যা রয়েছে, তার চেয়ে ১০ শতাংশ কম বিমান উড়বে। আজ বুধবার বিকেলের মধ্যে ইন্ডিগোকে নতুন সূচি প্রকাশের নির্দেশও দিয়েছে ডিজিসিএ। যাত্রীদের টিকিটের ভাড়ার টাকা দিতে হবে—এমন নির্দেশও দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।