সারা দেশের মতো রাজশাহীর বাজারেও উঠেছে নতুন আলু। তাতে পুরোনো আলুর দাম হিমাগার পর্যায়ে আরেক দফা কমে গেছে। ফলে হিমাগারে আলু রেখে বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ২০-২৫ দিনে পুরোনো আলুর দাম কেজিতে আট টাকা কমে গেছে। তাঁদের মতে, ‘নতুন আলু যেন পুরোনো আলুর কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিল।’

রাজশাহীর সরকার কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক রুহুল আমিন জানান, হিমাগারে পুরোনো আলুর কোনো ক্রেতা নেই এখন। বেচাকেনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাঁদের হিমাগারে এখনো ১৩ হাজার ৫০০ বস্তা আলু অবিক্রীত রয়েছে।

রাজশাহীর মোহনপুরের আলুচাষি লিমন আহমেদ জানান, গত বছর তিনি ১১৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। সেই আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছিল কেজিতে ২২ থেকে ২৫ টাকা। সেই আলু বিক্রি করেছেন ১২ থেকে ১৪ টাকায়। এ কারণে এ বছর তিনি আলু চাষ করেননি। চাষের বদলে তিনি আলুর ব্যবসা শুরু করেছেন। গত মঙ্গলবার তানোরের রহমান ব্রাদার্স ইউনিট-২ থেকে ৫০০ বস্তা আলু কিনেছেন। প্রতি কেজি আলুর দাম পড়েছে ১১ টাকা। কিছুদিন আগে হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম কেজিতে ১৯ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। মঙ্গলবার থেকে হিমাগারে আলুর কোনো ক্রেতা নেই। তাতে হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম নেমেছে কেজিতে ১১ টাকা।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নের চোরখৈর গ্রামের আলুচাষি রানা চৌধুরী এবার হিমাগারে ১ হাজার ২৫০ বস্তা আলু রেখেছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, সরকার ৫০ হাজার টন আলু ২২ টাকা দরে কেনার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো আলু কেনা হয়নি। বাধ্য হয়ে গত সোমবার ২০০ বস্তা আলু ১৪ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন। মঙ্গলবার আলুর দাম আরও কমে ১১ টাকায় নেমেছে। রানা চৌধুরী বলেন, নতুন আলু বাজারে এসে পুরোনো আলুর কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে।

চাষিরা বলছেন, উৎপাদন খরচ, হিমাগার, পরিবহন ভাড়া ও বস্তা ক্রয় মিলিয়ে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে ৩৫ টাকা। এখন সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকায়। তাতে কেজিতে ২৪ টাকা লোকসান। উৎপাদন খরচের চেয়ে বাজারে দাম কম হওয়ায় উৎপাদন খরচই উঠছে না। সে জন্য অনেকেই হিমাগার থেকে আলু বের করছেন না। অথচ হিমাগারে এখনো ২২ টাকা কেজি দরে আলু কেনার সরকারি নির্দেশনা ঝুলছে।

এদিকে রাজশাহীর সাহেব বাজারে গত মঙ্গলবার খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পুরোনো আলু ২৫ টাকায় বিক্রি হয়। আর নতুন আলু বিক্রি হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকায়। এর মধ্যে দেশি নতুন লাল আলু বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। আর সাদা আলু ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীতে ৩৯টি হিমাগার রয়েছে। গত শনিবার পর্যন্ত এসব হিমাগারে ৪৪ হাজার ১১০ মেট্রিক টন আলু মজুত ছিল। চাষিরা এখনো সরকার নির্ধারিত ২২ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির আশায় রয়েছেন।

রাজশাহী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহানা আখতার জাহান গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে যেসব নতুন আলু এসেছে, সেগুলো এখনো পরিপক্ব হয়নি। চাষিরা বেশি দামের আশায় পরিপক্ব হওয়ার আগে কিছু আলু তুলে বাজারে নিয়ে আসছেন।

শাহানা আখতার জাহান আরও বলেন, সরকার হিমাগার পর্যায়ে ২২ টাকা কেজি দরে আলু কেনার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু হিমাগার থেকে ওই দামে আলু কেনার কোনো ক্রেতা নেই। সরকার আলু কেনার বিষয়ে এখনো কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। শুধু সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একজন উপদেষ্টা মৌখিকভাবে বলেছিলেন। সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের নির্দেশনা জারি হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ ম গ র পর য য় আল র দ ম ২২ ট ক ত ন আল ১১ ট ক আল র ক সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

হাজার হাজার উড়ান বাতিল ভারতের ইন্ডিগোর, বাজার মূলধন কমেছে ৪,৫০০ কোটি ডলার

হাজার হাজার উড়ান বাতিল হওয়ায় ভারতের বৃহত্তম বিমান পরিবহন সংস্থা ইন্ডিগোর অবস্থা এখন শোচনীয়। সুনামের ক্ষতি তো হচ্ছেই, সেই সঙ্গে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে তারা।

এই পরিস্থিতিতে গত এক সপ্তাহে ইন্ডিগোর মূল কোম্পানি ইন্টারগ্লোব এভিয়েশনের শেয়ারের দাম ১৭ শতাংশ কমেছে। গত ২৭ নভেম্বর কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল ৫ হাজার ৯১৭ রুপি। গতকাল মঙ্গলবার সেই শেয়ারের দাম কমে হয়েছে ৪ হাজার ৯১৩ রুপি। সেই সঙ্গে ইন্ডিগো যেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে, সেই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামও কমেছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের সূত্রে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের বাজার মূলধন ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি ডলার কমেছে। বিশ্লেষকেরা বলেছেন, উড়ান বাতিল, গ্রাহকদের টাকা ফেরত, জরিমানা, রুপির দুর্বল অবস্থান ও বিমানের কর্মী-সংক্রান্ত ব্যয়বৃদ্ধির চাপ মূল সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস মনে করছে, রাজস্ব ক্ষতি ও ভাবমূর্তি হ্রাসের কারণে এসব বিষয় ‘ঋণমানের পক্ষে নেতিবাচক’ হয়ে গেছে।

বাস্তবতা হলো, গত কয়েক দিনে ইন্ডিগোর দুই হাজারের বেশি উড়ান বাতিল হওয়ার জেরে লাখ লাখ যাত্রী ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। এই নজিরবিহীন পরিস্থিতির জন্য সরকারের কাছে ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চেয়েছে দেশটির বৃহত্তম বিমান সংস্থা। নিজেদের জবাবে ইন্ডিগো জানিয়েছে, যাত্রীদের অসুবিধার জন্য তারা ‘গভীরভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী’।

কিন্তু ক্ষমা চেয়ে তো আর আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারছে না ইন্ডিগো। বৈশ্বিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস রেটিং সতর্ক করেছে, ইন্ডিগোর ঋণমান নেতিবাচক করে দেওয়া হতে পারে। মুডিস আরও বলেছে, এর ফলে আয়ের ঘাটতি থেকে শুরু করে সম্ভাব্য জরিমানা—উভয় দিক দিয়েই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে ইন্ডিগোকে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে ইন্ডিগোর সাম্প্রতিক এই অস্থিরতাবিষয়ক আরও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। মুডিস বলেছে, উড়ান-সংক্রান্ত সাম্প্রতিক এই অস্থিরতা থেকে প্রমাণিত হয়, ইন্ডিগোর পরিকল্পনা, তদারকি ও সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ঘাটতি ছিল। যদিও নতুন নিয়ম (এফডিটিএল) এসেছে, সেগুলো সম্পর্কে তারা আরও এক বছর আগেই থেকেই অবগত ছিল।

মুডিস বলেছে, ইন্ডিগো নতুন বিধিনিষেধের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মতো সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। ফলে পুরো ব্যবস্থায় পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন হয়। পরিণতিতে এই হাজার হাজার উড়ান বাতিল।

ইন্ডিগো কী বলছে

প্রাথমিকভাবে এই বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করেছে ইন্ডিগো। সেগুলো হলো-

১. ছোটখাটো প্রযুক্তিগত ত্রুটি;

২. শীতকালীন সময়সূচি পরিবর্তন;

৩. খারাপ আবহাওয়া ও দৃশ্যমানতা কমে যাওয়া;

৪. আকাশপথে ও বিমানবন্দরগুলোয় অত্যধিক যানজট;

৫. পাইলটদের দায়িত্বসংক্রান্ত নতুন নিয়ম বা এফডিটিএল ও পালা নির্ধারণে সমস্যা।

সরকারের কঠোর অবস্থান

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারত সরকারও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ এই বিপর্যয় ঘটানো হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির বিমানমন্ত্রী রামমোহন নায়ডু। তাঁর কথায়, ‘ইন্ডিগো যেভাবে কাজ করে, তাতে এ ধরনের ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়।’

সংবাদমাধ্যমগুলোকে নায়ডু এ-ও জানান, তদন্তে যদি ইন্ডিগোর সিইওর কোনো গাফিলতি বেরিয়ে আসে, তাহলে তাঁকে বরখাস্ত করা হবে। পাশাপাশি ইন্ডিগোকে জরিমানা করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। নায়ডু আরও বলেন, ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশনের (ডিজিসিএ) কাছেও জানতে চাই—হচ্ছেটা কী। তদন্ত শেষ হলে আমরা ডিজিসিএর দিকেও নজর দেব।’ দুর্ভোগে পড়া যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে বলে জানান তিনি।

এদিকে গতকাল ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে ডিজিসিএ। বিমানমন্ত্রী নায়ডু গত সোমবারই আভাস দিয়েছিলেন, ইন্ডিগোর শীতকালীন বিমানসূচি কমানো হবে। তাদের ‘স্লট’ বা বিমান চালানোর সূচি অন্য বিমান সংস্থাকে দেওয়া হবে।

এর পরেই গতকাল ডিজিসিএ ইন্ডিগোর পরিষেবা ৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। পরে আরও ৫ শতাংশ কমানোর কথাও জানায় তারা। অর্থাৎ বর্তমানে প্রতিদিন ইন্ডিগোর যা উড়ান-সংখ্যা রয়েছে, তার চেয়ে ১০ শতাংশ কম বিমান উড়বে। আজ বুধবার বিকেলের মধ্যে ইন্ডিগোকে নতুন সূচি প্রকাশের নির্দেশও দিয়েছে ডিজিসিএ। যাত্রীদের টিকিটের ভাড়ার টাকা দিতে হবে—এমন নির্দেশও দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ