নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কর্মসংস্থান বাড়াতে এই সিদ্ধান্ত
Published: 11th, December 2025 GMT
আবারও নীতি সুদহার কমাল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। এ নিয়ে বছরে তিনবার এ হার কমানো হলো। ফলে বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও বিনিয়োগকারীরা এত দিন যে ধারণা করছিলেন, তা সত্য প্রমাণিত হলো।
গতকাল বুধবার ফেডারেল রিজার্ভের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশীয় হারে নীতি সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার এখন ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশের মধ্যে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার এখন তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। খবর বিবিসির।
বাস্তবতা হলো, ফেডের নীতি সুদহারের প্রভাব কেবল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বিশ্ব অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়ে। সে কারণে সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীরা ফেডের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থানের গতি কমে গেছে। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও ঊর্ধ্বমুখী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব মার্কিন ভোক্তাদের জীবনে পড়তে শুরু করেছে। ফেডারেল রিজার্ভ কীভাবে এই দ্বিমুখী বাস্তবতা মোকাবিলা করবে, তা নিয়ে অবশ্য দ্বিমত আছে। ফেড এ বিষয়ে একমত হতে পারেনি। এর মধ্যও তারা জানিয়েছে, আগামী বছর একবার নীতি সুদহার কমানো হতে পারে, যদিও বিষয়টি নির্ভর করবে অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্তের ওপর।
ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছেন, চলতি বছর যে তিনবার নীতি সুদহার কমানো হলো, মার্কিন অর্থনীতিতে তার কী প্রভাব পড়ল, ফেড তা খতিয়ে দেখবে। আগামী জানুয়ারি মাসে আবারও ফেডের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক। তার আগে নীতিপ্রণেতারা সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবেন। সাংবাদিকদের পাওয়েল বলেন, ‘অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়ে, তা দেখার জন্য ভালো অবস্থানে আছি। ফলে যাঁরা চান, ফেড আরও বেশি হারে নীতি সুদহার হ্রাস করুক, তাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই দলে আছেন।’
পাওয়েল বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ এখন বড় চ্যালেঞ্জর সম্মুখীন। একদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়তি, আরেক দিকে বেকারত্বও বাড়তি—এ দুই বিষয় একসঙ্গে মোকাবিলা করা যায় না বলে মন্তব্য করেন পাওয়েল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবরই নীতি সুদহার কমানোর পক্ষপাতী। ফলে ফেড যে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশীয় হারে নীতি সুদহার কমিয়েছে, তাতে তিনি সন্তুষ্ট নন। গতকাল ফেডের বৈঠকের ট্রাম্প বলেছেন, অন্তত শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশীয় হারে নীতি সুদহার কমানো উচিত ছিল।
হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের নীতি সুদহার আরও কম হওয়া উচিত ছিল। বলা উচিত, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম সুদের হার আমাদের হওয়া উচিত।’
মূলত কর্মবাজার চাঙা করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো কম সুদে ঋণ নিয়ে সম্প্রসারণে যাবে আর তার হাত ধরে কর্মসংস্থান বাড়বে—অর্থনীতির এই অমোঘ নিয়ম মেনে এই নীতি সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত।
নীতি সুদ কীঅর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নীতি সুদহার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে হারে অর্থ ধার নেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ব্যাংকগুলো আবার তার সঙ্গে নিজেদের মুনাফা যোগ করে গ্রাহকদের ঋণ দেয়।
ফলে নীতি সুদহার বাড়লে ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে যায়। তখন মানুষের পক্ষে ঋণ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এতে সমাজে তারল্য কমে যায়। বিনিয়োগ কমে যায়। ফলে কর্মসংস্থান কমে। সামগ্রিকভাবে সমাজে তারল্য প্রবাহ কমে যায়। মানুষের হাতে ব্যয় করার মতো অর্থ কমে গেলে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পায়। আবার যখন কর্মসংস্থান বাড়াতে হয় বা সমাজে অর্থপ্রবাহ বাড়াতে হয়, তখন নীতি সুদহার কমানো হয়।
ফেডের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো, বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়। ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র বন ড র দ ম হ র কম ন দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
টেলিটকের সঙ্গে চুক্তি করল কে অ্যান্ড কিউ
পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কে অ্যান্ড কিউ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে একটি এ২পি (অ্যাপ্লিকেশন-টু-পার্সন) অ্যাগ্রেগেটর চুক্তি করেছে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কোম্পানিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড এবং কেই অ্যান্ড কিউ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের মধ্যে একটি “এ২পি অ্যাগ্রেগেটর অ্যাগ্রিমেন্ট” স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় কেই অ্যান্ড কিউ (বাংলাদেশ) লিমিটেড টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের জন্য এ২পি (অ্যাপ্লিকেশন-টু-পার্সন) অ্যাগ্রেগেটর হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর লাইসেন্সের আওতায় এ সেবা প্রদান করা হবে।
কোম্পানিটি আশা করছে, এ চুক্তি তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।
ঢাকা/এনটি/ইভা