শাহজাদী বেগমের (৩৫) স্বামী একটি বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) চাকরি করেন। স্বামীর একার আয়ে সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য ছিল না। সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে নিজেও কিছু করার ভাবনা আসে তাঁর মাথায়। ইউটিউবে মাশরুম চাষে মানুষের সফলতার গল্প শুনে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা।

প্রথম দিকে স্থানীয় লোকজন শাহজাদী বেগমকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেও তাঁর সফলতা দেখে অনেকেই এখন মাশরুম চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। স্বল্প পরিসরে বাড়িতে মাশরুম চাষ শুরু করা শাহজাদীর এখন মাসে আয় ৩০ হাজার টাকার মতো।

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের সিংসাড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহজাদী। তিনি ওই গ্রামের বাবলুর রহমানের স্ত্রী। সম্প্রতি শাহজাদীর সঙ্গে কথা হয় তাঁর মাশরুম প্রকল্পে। দুই সন্তানের এই মা সংসার সামলে বাড়ির পাশে গড়ে তোলা প্রকল্পে মাশরুমের পরিচর্যা ও বাজারজাত করার কাজ করেন।

১০ হাজার টাকা পুঁজিতে শুরু

কীভাবে এ কাজে যুক্ত হলেন, তা জানতে চাইলে শাহজাদী বেগম বলেন, ‘প্রথম দিকে হাঁস-মুরগি পালন ও বাসাবাড়ির সামনে সবজি চাষ করতাম। কিন্তু তাতে সংসারে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য আসত না। একদিন ইউটিউবে মাশরুম চাষ নিয়ে একটি ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হই। মাশরুম চাষে আগ্রহ দেখালে স্বামী তাঁর পরিচিত একজন কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে বগুড়া থেকে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করেন। চাষাবাদের পদ্ধতি ইউটিউব দেখে আয়ত্ত করে মাশরুম চাষ শুরু করি। আত্রাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তারাও বুদ্ধিপরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।’

শাহজাদী বলেন, মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ২০২৩ সালে তিনি মাশরুম চাষ শুরু করেন। বসবাসের ঘরের পাশে একটি আধা পাকা ঘর ও একটি মাটির ঘরকে মাশরুম চাষের উপযোগী করেন। শুরুতে ৫০টি সিলিন্ডারে (পলিথিন ও খড়ে মোড়ানো স্পঞ্জ প্যাকেট) মাশরুম চাষ শুরু করেন। বর্তমানে সেখানে ৪০০টি সিলিন্ডার বা স্পঞ্জ আছে। প্রতিদিন তাঁর প্রকল্পে ৫ থেকে ৬ কেজি মাশরুম বিক্রি হয়। প্রতি কেজি মাশরুমের বর্তমান পাইকারি বাজার দর ৩০০ টাকা। মাসে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি হয়। খরচ বাদ দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা মাসে আয় করছেন তিনি।

অনেকেই আগ্রহ দেখান, তিনিও শেখান

শাহজাদী বেগমের সফলতা দেখে এখন অনেকেই মাশরুম চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকেই আমারটা দেখে মাশরুম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আমার কাছে প্রকল্প দেখছেন। যতটুকু জানি, তাঁদের হাতে–কলমে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

মাশরুম চাষ খুবই সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, ‘মাশরুম উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। মাশরুম প্রকল্পের আওতায় উদ্যোক্তা শাহাজাদীকে আমরা মাশরুম উৎপাদনের জন্য আনুসাঙ্গিক সব শিখিয়ে দিয়েছি। শাহজাদীর দেখাদেখি বর্তমানে অনেকেই মাশরুম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আমাদের কাছে মাশরুম চাষ সম্পর্কে জানতে অনেকেই আসছেন।’

মাশরুমের উপকারিতা সম্পর্কে এই কর্মকর্তা বলেন, মাশরুম রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ও হজমশক্তি বাড়ায়, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে, হৃদ্‌রোগ ও ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এতে ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন, অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকে।

আরও বড় পরিসরে করার চিন্তা

শাহজাদী বেগম বলেন, বর্তমানে দেশে মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা আছে। চাহিদা থাকলেও উৎপাদন কম হওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী তিনি মাশরুম সরবরাহ করতে পারছেন না। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে মাশরুম চাষ করতে চান তিনি।

শাহজাদীর তথ্যমতে, ৩০ থেকে ৩৪ দিনের মধ্যে মাশরুম বিক্রির উপযোগী হয়। চাষের ২৫ থেকে ২৭ দিনের মধ্যে তা তুলে শুকানো হয়। এর এক সপ্তাহের মধ্যে সেগুলো বিক্রি করা হয়। কাঁচা ৩০০ ও শুকনা ২ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। তাঁর নির্দিষ্ট কয়েকজন ক্রেতা আছেন, যাঁদের কাছে তিনি কাঁচা ও শুকনা মাশরুম পৌঁছে দেন।

মাশরুম বিক্রির আয় দিয়ে সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়ায় ব্যয় করছেন বলে জানান শাহজাদী বেগম। তিনি বলেন, শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকায় এখন উৎপাদন বেশি হচ্ছে। তবে গরমের সময় তাপমাত্রা বেশি থাকায় চাষাবাদ করতে সমস্যা হয়। তখন তিন থেকে চার মাস চাষাবাদ বন্ধ রাখেন। বর্ষা ও শীতকাল মাশরুম চাষের উপযোগী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত উদ ব দ ধ শ হজ দ র প রকল প অন ক ই

এছাড়াও পড়ুন:

একঘেয়ে পড়াশোনা থেকে মুক্তি: ‘উইক প্ল্যান’ পদ্ধতিতে মেলে সফলতা

১৯৯৪ সালে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা’ ধারণা প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। তিন দশকের বেশি সময় পরও প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করা এখনো জটিল একটি বিষয়।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা এখনো নানা ধরনের বঞ্চনার মুখোমুখি হয়। অনেক সময় তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খুব কমই মিশতে পারে। সহায়ক কর্মী বা প্রয়োজনীয় সহায়তা না পাওয়ার কারণে অনেকের শিক্ষাজীবনও সীমিত হয়ে যায়। এতে শিক্ষকেরা প্রায়ই শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যময় চাহিদা পূরণে হিমশিম খেয়ে যান।

‘বিকল্প শিখনপদ্ধতি’র শিকড়

বিংশ শতাব্দীর শিক্ষাবিদ মারিয়া মন্টেসরি (ইতালি), সেলেস্তাঁ ফ্রেনে (ফ্রান্স), পিটার পিটারসেন (জার্মানি) ও হেলেন পারখার্স্ট (যুক্তরাষ্ট্র) প্রবর্তিত শিক্ষা আন্দোলনগুলোই আধুনিক বিকল্প শিক্ষা মডেলের ভিত্তি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রচলিত, একঘেয়ে ও বর্জনমূলক শ্রেণিকক্ষ পদ্ধতির বিকল্প তৈরি করা, যেখানে শিশুর শেখার স্বাধীনতা ও অংশগ্রহণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ‘গড় শিক্ষার্থী’ ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে শ্রেণিকক্ষে বিকল্প শিখনপদ্ধতি প্রয়োগ করলে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও শেখার মান বাড়ে। এটি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

আরও পড়ুনকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে ব্রিটেনে কারিগরি শিক্ষার উত্থান০৬ ডিসেম্বর ২০২৫‘উইক প্ল্যান ওয়ার্ক’: শিক্ষার্থীর হাতে নিয়ন্ত্রণ

এই আন্দোলনগুলো থেকে বিকশিত একটি পদ্ধতি হলো ‘উইক প্ল্যান ওয়ার্ক’, যেখানে শিক্ষার্থীরা এক সপ্তাহের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজেদের কাজ সম্পন্ন করে। শিক্ষক (কখনো শিক্ষার্থীর সহযোগিতায়) সাপ্তাহিক পরিকল্পনা তৈরি করেন—যেখানে শেখার লক্ষ্য, করণীয় কাজ ও ধাপগুলো নির্ধারিত থাকে।

কানাডায় পরীক্ষামূলক প্রয়োগ

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় বিশেষজ্ঞ এক গবেষক নোভা স্কোশিয়ার হ্যালিফ্যাক্স রিজিওনাল এডুকেশন সেন্টারের শিক্ষক হ্যারিয়েট জনস্টনের সঙ্গে মিলে নবম ও একাদশ শ্রেণির ইংরেজি ক্লাসে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেন।

প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সপ্তাহের শুরুতে একটি ফোল্ডার দেওয়া হয়, যেখানে নির্দিষ্ট কাজ ও কার্যক্রমের তালিকা থাকে। তারা নিজের মতো করে কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করতে পারে—এককভাবে বা দলগতভাবে। সপ্তাহ শেষে কাজ মূল্যায়ন ও আলোচনা হয়।

এই পদ্ধতিতে শিক্ষক সরাসরি পাঠদান কমিয়ে ‘কোচ’ বা ‘মেন্টর’-এর ভূমিকা পালন করেন। এতে শিক্ষক একান্ত সহায়তার প্রয়োজন এমন শিক্ষার্থীদের প্রতি বেশি মনোযোগ দিতে পারেন।

ছবি: কবির হোসেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ইয়াকিন’ কীভাবে অর্জন করা যায়
  • একঘেয়ে পড়াশোনা থেকে মুক্তি: ‘উইক প্ল্যান’ পদ্ধতিতে মেলে সফলতা