সিরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ এখন অবশ্যম্ভাবী: ইসরায়েল
Published: 11th, December 2025 GMT
সিরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ ‘এখন অবশ্যম্ভাবী’ হয়ে গেছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন একজন ইসরায়েলি মন্ত্রী। গত মঙ্গলবার সিরিয়ার কুনেইত্রা শহরের কাছে সংঘটিত এক ঘটনার পর এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ইসরায়েলের প্রবাসীবিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই চিকলি এ মন্তব্য করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র ব্যক্তিরা কুনেইত্রার কাছে ইসরায়েলি সেনাদের অবস্থানের কাছাকাছি সরে আসছেন।
আরও পড়ুনবাশারমুক্ত সিরিয়ায় বিদেশি শক্তির পাশাখেলা০৮ ডিসেম্বর ২০২৫তেল আবিব সিরিয়ার এ কার্যক্রমকে ‘নিরাপত্তা হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। যদিও ওই অঞ্চল বছরের পর বছর ইসরায়েলি হামলা, অনুপ্রবেশ ও সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘনের শিকার হয়ে আসছে।
হিব্রু সংবাদপত্র ইয়েদিওথ আহরোনথ জানিয়েছে, মঙ্গলবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট ও সিরিয়ার সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে কুনেইত্রায় উত্তেজনা বেড়ে যায়। ওই সময় জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ ও ইসরায়েলের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন মাঠপর্যায়ের এক সফরে ছিলেন।হিব্রু সংবাদপত্র ইয়েদিওথ আহরোনথ জানিয়েছে, মঙ্গলবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট ও সিরিয়ার সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে কুনেইত্রায় উত্তেজনা বেড়ে যায়। ওই সময় জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ ও ইসরায়েলের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন মাঠপর্যায়ের এক সফরে ছিলেন।
আরও পড়ুনতুরস্কের যে কৌশলে ‘জিহাদি’ শারা হয়ে উঠলেন সিরিয়ার ‘আমির’২ ঘণ্টা আগেসংবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ওয়াল্টজ ও ড্যানন সফরের সময় ওল্ড কুনেইত্রায় সুরক্ষা সরঞ্জাম পরিহিত অবস্থায় প্রবেশ করেন ও সেখানকার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেন। পরে নিজেদের গাড়িতে ফেরার সময় একটি ‘অস্বাভাবিক ঘটনা’ ঘটে। একটি সশস্ত্র বহর পেরোনোর পর গোলাগুলি হয় এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করে, ইসলামিক জিহাদের এক সদস্যকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হয়েছিল।
সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, দুই রাষ্ট্রদূত সরাসরি এ ঘটনার সাক্ষী হননি। তবে তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে মাত্র কয়েক শ মিটার দূরে ছিলেন।
আরও পড়ুনইসরায়েল অন্য দেশে সংকট ছড়িয়ে দিচ্ছে, ‘কল্পিত শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছে’: সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট০৬ ডিসেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনইসরায়েলের সিরিয়া আক্রমণ যেভাবে বুমেরাং হচ্ছে২৩ জুলাই ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র স ব দপত র
এছাড়াও পড়ুন:
হাজার হাজার উড়ান বাতিল ভারতের ইন্ডিগোর, বাজার মূলধন কমেছে ৪,৫০০ কোটি ডলার
হাজার হাজার উড়ান বাতিল হওয়ায় ভারতের বৃহত্তম বিমান পরিবহন সংস্থা ইন্ডিগোর অবস্থা এখন শোচনীয়। সুনামের ক্ষতি তো হচ্ছেই, সেই সঙ্গে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে তারা।
এই পরিস্থিতিতে গত এক সপ্তাহে ইন্ডিগোর মূল কোম্পানি ইন্টারগ্লোব এভিয়েশনের শেয়ারের দাম ১৭ শতাংশ কমেছে। গত ২৭ নভেম্বর কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল ৫ হাজার ৯১৭ রুপি। গতকাল মঙ্গলবার সেই শেয়ারের দাম কমে হয়েছে ৪ হাজার ৯১৩ রুপি। সেই সঙ্গে ইন্ডিগো যেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে, সেই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামও কমেছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের সূত্রে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের বাজার মূলধন ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি ডলার কমেছে। বিশ্লেষকেরা বলেছেন, উড়ান বাতিল, গ্রাহকদের টাকা ফেরত, জরিমানা, রুপির দুর্বল অবস্থান ও বিমানের কর্মী-সংক্রান্ত ব্যয়বৃদ্ধির চাপ মূল সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস মনে করছে, রাজস্ব ক্ষতি ও ভাবমূর্তি হ্রাসের কারণে এসব বিষয় ‘ঋণমানের পক্ষে নেতিবাচক’ হয়ে গেছে।
বাস্তবতা হলো, গত কয়েক দিনে ইন্ডিগোর দুই হাজারের বেশি উড়ান বাতিল হওয়ার জেরে লাখ লাখ যাত্রী ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। এই নজিরবিহীন পরিস্থিতির জন্য সরকারের কাছে ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চেয়েছে দেশটির বৃহত্তম বিমান সংস্থা। নিজেদের জবাবে ইন্ডিগো জানিয়েছে, যাত্রীদের অসুবিধার জন্য তারা ‘গভীরভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী’।
কিন্তু ক্ষমা চেয়ে তো আর আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারছে না ইন্ডিগো। বৈশ্বিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস রেটিং সতর্ক করেছে, ইন্ডিগোর ঋণমান নেতিবাচক করে দেওয়া হতে পারে। মুডিস আরও বলেছে, এর ফলে আয়ের ঘাটতি থেকে শুরু করে সম্ভাব্য জরিমানা—উভয় দিক দিয়েই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে ইন্ডিগোকে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে ইন্ডিগোর সাম্প্রতিক এই অস্থিরতাবিষয়ক আরও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। মুডিস বলেছে, উড়ান-সংক্রান্ত সাম্প্রতিক এই অস্থিরতা থেকে প্রমাণিত হয়, ইন্ডিগোর পরিকল্পনা, তদারকি ও সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ঘাটতি ছিল। যদিও নতুন নিয়ম (এফডিটিএল) এসেছে, সেগুলো সম্পর্কে তারা আরও এক বছর আগেই থেকেই অবগত ছিল।
মুডিস বলেছে, ইন্ডিগো নতুন বিধিনিষেধের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মতো সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। ফলে পুরো ব্যবস্থায় পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন হয়। পরিণতিতে এই হাজার হাজার উড়ান বাতিল।
ইন্ডিগো কী বলছে
প্রাথমিকভাবে এই বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করেছে ইন্ডিগো। সেগুলো হলো-
১. ছোটখাটো প্রযুক্তিগত ত্রুটি;
২. শীতকালীন সময়সূচি পরিবর্তন;
৩. খারাপ আবহাওয়া ও দৃশ্যমানতা কমে যাওয়া;
৪. আকাশপথে ও বিমানবন্দরগুলোয় অত্যধিক যানজট;
৫. পাইলটদের দায়িত্বসংক্রান্ত নতুন নিয়ম বা এফডিটিএল ও পালা নির্ধারণে সমস্যা।
সরকারের কঠোর অবস্থান
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারত সরকারও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ এই বিপর্যয় ঘটানো হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির বিমানমন্ত্রী রামমোহন নায়ডু। তাঁর কথায়, ‘ইন্ডিগো যেভাবে কাজ করে, তাতে এ ধরনের ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়।’
সংবাদমাধ্যমগুলোকে নায়ডু এ-ও জানান, তদন্তে যদি ইন্ডিগোর সিইওর কোনো গাফিলতি বেরিয়ে আসে, তাহলে তাঁকে বরখাস্ত করা হবে। পাশাপাশি ইন্ডিগোকে জরিমানা করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। নায়ডু আরও বলেন, ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশনের (ডিজিসিএ) কাছেও জানতে চাই—হচ্ছেটা কী। তদন্ত শেষ হলে আমরা ডিজিসিএর দিকেও নজর দেব।’ দুর্ভোগে পড়া যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে গতকাল ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে ডিজিসিএ। বিমানমন্ত্রী নায়ডু গত সোমবারই আভাস দিয়েছিলেন, ইন্ডিগোর শীতকালীন বিমানসূচি কমানো হবে। তাদের ‘স্লট’ বা বিমান চালানোর সূচি অন্য বিমান সংস্থাকে দেওয়া হবে।
এর পরেই গতকাল ডিজিসিএ ইন্ডিগোর পরিষেবা ৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। পরে আরও ৫ শতাংশ কমানোর কথাও জানায় তারা। অর্থাৎ বর্তমানে প্রতিদিন ইন্ডিগোর যা উড়ান-সংখ্যা রয়েছে, তার চেয়ে ১০ শতাংশ কম বিমান উড়বে। আজ বুধবার বিকেলের মধ্যে ইন্ডিগোকে নতুন সূচি প্রকাশের নির্দেশও দিয়েছে ডিজিসিএ। যাত্রীদের টিকিটের ভাড়ার টাকা দিতে হবে—এমন নির্দেশও দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।