বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ২৯টি দল গতকাল বুধবার বৈঠক করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে দলগুলো আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিকদের আসন সমঝোতার বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে দ্রুত একটা ফয়সালায় আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শরিক দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, রাষ্ট্রকাঠামোর মৌলিক সংস্কার, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তি, গণতন্ত্রের উত্তরণে সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন প্রশ্নে বিএনপি যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিল, এখন সেখান থেকে দলটির সরে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। বিশেষ করে একসঙ্গে নির্বাচনের প্রশ্নে রাজনৈতিক মিত্র দলগুলোকে এড়িয়ে চলতে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তাঁরা বিএনপির সঙ্গে বসতে চাইছেন।

শরিক দলের সূত্রগুলো বলছে, এ বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে কথা বলার জন্য গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী সাইফুল হককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি গতকাল রাতেই বিএনপির দুজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছেন, তাঁরা আজ বৃহস্পতিবার অথবা আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যে তাঁদের সঙ্গে বসতে চান।

আমরা ২৯ দল বসেছিলাম। আমরা বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কটা ছিন্ন করতে চাই না সংস্কার এবং গণতন্ত্রের উত্তরণের স্বার্থে। তবে এই সম্পর্কে যেন সবার সম্মান, মর্যাদা এবং অধিকারটা থাকে।১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা

গতকাল বিকেলে শরিক দলগুলোর এই বৈঠক হয় নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে বৈঠকে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণতন্ত্র মঞ্চের সাইফুল হক ও জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক, নেজামে ইসলাম পার্টির আশরাফুল ইসলাম, ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়কারী ফরিদুজ্জামান ২৯ দলের নেতারা অংশ নেন।

সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ২৯ দল বসেছিলাম। আমরা বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কটা ছিন্ন করতে চাই না সংস্কার এবং গণতন্ত্রের উত্তরণের স্বার্থে। তবে এই সম্পর্কে যেন সবার সম্মান, মর্যাদা এবং অধিকারটা থাকে।’

এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিনজন নেতা বৈঠক করেন।

শরিক দলগুলোর একটি সূত্র জানায়, এ বিষয়গুলো গতকাল রাতের আলোচনায় উঠেছিল। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল। কিন্তু তারা অপারগ, কারণ মনোনয়নের এ সিদ্ধান্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতের আলোচনায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাইফুল হক সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আলোচনা অসমাপ্ত রেখে বের হয়ে আসেন। এ বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার সারমর্ম হচ্ছে, সাইফুল হক যে আসনে নির্বাচন করতে চাইছেন, সেখানে বিএনপি তাঁর মনোনয়ন নিশ্চিত করতে কিছুটা অপারগতার ইঙ্গিত দেয়। এতে সাইফুল হক একমত হতে পারেননি, তিনি আলোচনা অসমাপ্ত রেখে বের হন।

জানা গেছে, সাইফুল হক ঢাকা-৮ আসনে (মতিঝিল-পল্টন-শাহজাহানপুর-শাহবাগ ও রমনা) নির্বাচন করতে আগ্রহী। সেটি সম্ভব না হলে তিনি ঢাকা-১২ আসনে (তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল-হাতিরঝিল-শেরেবাংলা নগর আংশিক) নির্বাচন করতে চান। তিনি এই এলাকার বাসিন্দা।

বিএনপি যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, সেখান থেকে যদি বিএনপি সরে আসে, সেটার দায়দায়িত্ব বিএনপির। আমাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আলোচনা অব্যাহত আছে।সাইফুল হক, ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক

যদিও দুটি আসনেই বিএনপি গত ২ নভেম্বর প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ঢাকা-৮ আসনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং ঢাকা-১২ আসনে ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল আলম (নীরব)। ঢাকা-১২ আসনের প্রার্থীকে নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে বেশ আলোচনা-সমালোচনা আছে। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তাঁর বিরুদ্ধে ‘দখল-চাঁদাবাজির’ অভিযোগ ওঠায় ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়।

শরিক দলগুলোর একটি সূত্র জানায়, এ বিষয়গুলো গতকাল রাতের আলোচনায় উঠেছিল। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল। কিন্তু তারা অপারগ, কারণ মনোনয়নের এ সিদ্ধান্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের।

আমরা কোনো দলের সঙ্গে বৈঠক করছি না, ব্যক্তিপর্যায়ে কথা বলছি। গতকাল (মঙ্গলবার) সাইফুল হক সাহেব এসেছিলেন। আলোচনা হয়েছে, কথা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম

সাইফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, সেখান থেকে যদি বিএনপি সরে আসে, সেটার দায়দায়িত্ব বিএনপির। আমাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আলোচনা অব্যাহত আছে।’

সংশ্লিষ্ট একটি জানায়, মঙ্গলবার রাতের আলোচনায় মিত্র দলগুলোর মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করা না হলে বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কের ইতি টানার ইঙ্গিত দিয়ে আসেন সাইফুল হক।

তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোনো দলের সঙ্গে বৈঠক করছি না, ব্যক্তিপর্যায়ে কথা বলছি। গতকাল (মঙ্গলবার) সাইফুল হক সাহেব এসেছিলেন। আলোচনা হয়েছে, কথা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র সমন বয়ক ব এনপ র স গণতন ত র র জন ত ক ল ইসল ম দল র স ন করত গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ধর্মের নামে ট্যাবলেট বিক্রি করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার পরিকল্পনা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, একটি দল শুধু ধর্মের নামে ট্যাবলেট বিক্রি করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার পরিকল্পনা করছে। তাদেরকে (ওই দল) জনগণ এরই মধ্যে চিনেছে। তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।

আজ সোমবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।

বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সারা দেশের জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন ইউনিটের হাজারের বেশি নেতা অংশ নেন।

কোনো নাম উল্লেখ না করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ধর্ম ব্যবসায়ীদের দল একটি মার্কায় ভোট দিলে জান্নাতে যাওয়ার কথা বলছে। তারা কেবলই বলছে, এখানে একটা মার্কাতে ভোট দিলে তরতরাইয়া জান্নাতে যাওয়া যাবে। তার আগে ইহকালে কীভাবে চলবে—এটা নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই।’

বিএনপি জনগণের ভোট চায় জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি জনগণকে কী দিতে চায়, সেই পদক্ষেপ নিয়েছে। বিএনপি ধর্মের ট্যাবলেট বিক্রি করতে পারে না।

বিএনপিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় চালানো অপপ্রচারের পাল্টা জবাব দিতে ছাত্রদলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান এই নেতা।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালে প্রায় ছিনতাইকৃত গণতন্ত্রকে ৭ নভেম্বরের সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে পুনরুদ্ধার করেছেন। এরপর তিনি রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে পঞ্চম সংশোধনীর মধ্য দিয়ে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রচলন করেছিলেন। সেদিন বাংলাদেশের মূল ভিত্তি রচনা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করেন যুগ্মমহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। উপস্থিত ছিলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ।
ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি ও কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করা হবে—এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিএনপি।

এসব অনুষ্ঠান শুক্রবার বাদে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্য সহযোগী সংগঠনের নেতারা অংশ নেবেন।

আরও পড়ুন:
’৭১-এ জামায়াত কী কী করেছিল, মনে রাখতে বললেন তারেক রহমান
জামায়াতের টিকিট কাটলে জান্নাতের টিকিট কাটা হবে, কোথায় আছে বলুক তারা: মির্জা ফখরুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচন ঘিরে সরগরম কেরাণীগঞ্জের রাজনীতি
  • যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিলে নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তত ইউক্রেন, বললেন জেলেনস্কি
  • একটি দলের কর্মীরা হেলমেট মাথায় দিয়ে মহড়া দিচ্ছে: এ্যানি
  • ‘তানিয়া রবের প্রচারণায় হামলা গণতন্ত্রের ওপর হুমকি’
  • মানবাধিকার রক্ষা প্রতিদিনের জন্য অপরিহার্য: তারেক
  • খালেদা জিয়া: কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন নাম
  • ‘একজন ভালো আর সবাই খারাপ’- আ. লীগ আমলের এই প্রচার এখনো চলছে: তারেক রহমান
  • ধর্মের নামে ট্যাবলেট বিক্রি করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার পরিকল্পনা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • জনমানসের পরিবর্তন একক কারণে নয়