মিষ্টি গায়কি ও হৃদয়ছোঁয়া সুরের সংগীতশিল্পী মৌমিতা তাশরিন নদী। এবার শ্রোতাদের জন্য নিয়ে এসেছেন নতুন উপহার—নতুন একক গান ‘তুমিহীনা’। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) শিল্পীর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পেয়েছে গানটি।
গানটির কথা লিখেছেন নদী। তাকে লেখায় সহযোগিতা করেছেন হৃদয় হাসিন ও হেমা। সুর করেছেন নদী ও হৃদয় হাসিন, আর সংগীতায়োজন করেছেন হৃদয় হাসিন। রিদম প্রোগ্রামিংয়ে ছিলেন সায়েম রহমান। ‘তুমিহীনা’ গান নিয়ে মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করেছেন সোহেল রাজ। এতে মডেল হয়েছেন শিল্পী নদী নিজেই।
আরো পড়ুন:
আফগান সীমান্তের কাছে সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানের ৬ সেনা নিহত
তবুও স্বীকৃতি নেই তার!
নতুন গান নিয়ে নদী বলেন, “এই গান আমার কাছে অনেক বিশেষ। নানা কারণে আমরা শিল্পীরা সবসময় নিজের পছন্দমতো কাজ করতে পারি না। কিন্তু এবার একেবারে নিজের ভালো লাগাকে কেন্দ্র করেই ‘তুমিহীনা’ করেছি। কথা, সুর, অ্যারেঞ্জমেন্ট থেকে ভিডিও নির্মাণ—সব জায়গায় আমার নিজের অনুভূতি ও পছন্দকে গুরুত্ব দিয়েছি। নিজের ভালো লাগার একটি কাজ করতে পেরে সত্যিই আনন্দিত।”
ভালো লাগার কথা জানিয়ে নদী বলেন, “গানটি একটু ভিন্ন আঙ্গিকের, তাই হয়তো সবার কাছে ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু আমি এমন গানই করতে চেয়েছি বহুদিন ধরে। কোনো গান আমার ব্যক্তিত্বের সাথে মানিয়ে না নিলে আমি গাইতে পারি না। সেদিক থেকে ‘তুমিহীনা’ পুরোপুরি আমার মতো—যেমন আমি, তেমনই এই গানটি।”
শ্রোতাদের উদ্দেশে নদী বলেন, “আপনারাই একজন শিল্পীর কাজকে বাঁচিয়ে রাখেন ভালোবাসা ও উৎসাহ দিয়ে। ‘তুমিহীনা’ আমার খুব প্রিয় একটি কাজ। শুনবেন, মতামত জানাবেন।”
‘তুমিহীনা’ গানটি নির্মিত হয়েছে শিল্পীর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘নদীমাতৃক প্রোডাকশন’ এর ব্যানারে। ইউটিউব ছাড়াও গানটি শোনা যাবে, স্পটিফাই, অ্যাপল মিউজিকসহ দেশি–বিদেশি বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে।
এর আগে নদীর গাওয়া ‘জলছায়া’, ‘নিঃশ্বাস’, ‘রঙিলা আকাশ’, ‘অচিনপুর’, ‘মুগ্ধতা’, ‘আমারতো কেউ নেই তুমি ছাড়া’, ‘দেশি গার্ল’, ‘হারানো যাবে না’, ‘কথা দিলাম’, ‘তোমাকে দেব না হারাতে’ এবং ‘পোড়ামন ২’ সিনেমায় গাওয়া ‘সুতো কাটা ঘুড়ি’ শ্রোতাদের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বসার দাবি উচ্ছেদ হওয়া হকারদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা থেকে সম্প্রতি উচ্ছেদের শিকার হকাররা আবারও আগের জায়গায় বসার দাবি জানিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে শাহবাগে বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন ভবনের ২ নম্বর কক্ষে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ ও ভুক্তভোগী হকারদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মাশরুমচাষি ও ক্যাম্পাসে হকারদের কাছে মাশরুম সরবরাহকারী রুবি আক্তার। সঞ্চালনা করেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ঢাকা জেলার আহ্বায়ক শবনম হাফিজ। এতে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম, ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য ইকবাল কবির ও আঁখি মনি এবং ভাসমান উদ্যোক্তা নুরুজ্জামান কমলসহ উচ্ছেদের শিকার কয়েকজন হকার।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শবনম হাফিজ। তিনি বলেন, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক হকার কাজ করতেন। গত অক্টোবরে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ এনে ডাকসুর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এতে অসংখ্য হকার বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন।
শবনম হাফিজ আরও বলেন, এই মানুষগুলোকে উচ্ছেদের নামে হয়রানি করা হলো, জিনিসপত্র নষ্ট করা হলো। এই ক্ষতির জবাবদিহি চাই, ক্ষতিপূরণ চাই এবং তাঁদের যেন সসম্মানে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়, সেটি চাই। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ যেন তাঁদের পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করে দেয়।
আয়োজকেরা বলেন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ও ভুক্তভোগী হকাররা উচ্ছেদের পর নিজেদের কার কী পরিস্থিতি ও কীভাবে তাঁদের বর্তমান জীবন চলছে, তা জানতে একটি জরিপ পরিচালনা করছেন। এর আওতায় এ পর্যন্ত তাঁরা ৫০ জনের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছেন। এর মধ্য দিয়ে যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে, তা তুলে ধরার লক্ষ্যেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে রুবি আক্তার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির সময় স্বামীর গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা মাশরুম চাষ শুরু করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চাহিদার ওপরই নির্ভর ছিল তাঁদের সংসার। হকার উচ্ছেদের পর সেই বাজার প্রায় হারিয়ে গেছে।
রুবি আক্তার বলেন, ‘একজন হকারের সঙ্গে আরও অনেকের আয় জড়িয়ে থাকে—সরবরাহকারী, পানিওয়ালা ও সবজিওয়ালা। একজনের আয় বন্ধ হলে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা চাই, হকারদের কাজের জায়গা আবারও ফিরিয়ে দেওয়া হোক, বসতে দেওয়া হোক আগের জায়গায়। তাতে আরও অনেক পরিবার বেঁচে যাবে।’
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, হকার উচ্ছেদ ডাকসুর দায়িত্ব নয়। এটি মানবিক বা ন্যায়সংগত কোনো পদক্ষেপ নয়। হকারদের সম্মানজনক ব্যবসার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। এ বিষয়ে যথাযথ পরিকল্পনা করা সম্ভব।
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকার ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করা অন্যায় ও অমানবিক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও কয়েকজন হকার নিজেদের বর্তমান সংকটের কথা জানান।
চার দফা সুপারিশঅনুষ্ঠানে আয়োজকেরা চার দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হলো উচ্ছেদ করা হকারদের আগের কাজের জায়গায় ফেরার সুযোগ দেওয়া; কিছুদিন পরপর উচ্ছেদের নামে হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করা এবং যাঁরা এই নির্যাতন করেছেন, তাঁদের বিচার করা; প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা সিটি করপোরেশন বা নিজেদের সমবায় বা ট্রেড ইউনিয়নের পরিচয়পত্র ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা এবং কয়েক দফায় ভাসমান উদ্যোক্তাদের হাঁড়িপাতিল ও অন্যান্য যে মালামাল প্রক্টরিয়াল টিম নিয়ে গেছে, তা দ্রুত ফেরত দিতে হবে।