আফ্রিকার দিগন্তজোড়া সাভানা আর বন্য প্রকৃতির দেশ কেনিয়া। কিন্তু এই শান্ত প্রকৃতির আড়ালে লুকিয়ে আছে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের এক উত্তপ্ত ইতিহাস। আজ ১২ ডিসেম্বর কেনিয়ার ‘জামহুরি দিবস’ (Jamhuri Day)। সোয়াহিলি ভাষায় ‘জামহুরি’ শব্দের অর্থ ‘প্রজাতন্ত্র’। এই দিনটি কেনিয়াবাসীর কাছে দ্বিগুণ আনন্দের—কারণ, ১৯৬৩ সালের এই দিনে তারা ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এবং ঠিক এক বছর পর ১৯৬৪ সালের একই দিনে দেশটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

কেনিয়ার এই বিজয়ের পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। ১৯৫০-এর দশকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ‘মাউ মাউ বিদ্রোহ’ (Mau Mau Uprising) ছিল এই স্বাধীনতার মূল চালিকাশক্তি। জঙ্গল ও পাহাড়ের আড়াল থেকে সাধারণ কৃষকেরা ব্রিটিশদের আধুনিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে দা, কুড়াল আর পুরোনো বন্দুক নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল। ব্রিটিশরা হাজার হাজার স্বাধীনতাকামীকে বন্দী করে, হত্যা করে ও নির্যাতন চালায়। কিন্তু মাউ মাউ যোদ্ধাদের সেই আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। তাদের সেই রক্তস্রোতই শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশদের কেনিয়া ছাড়তে বাধ্য করে।

কেনিয়াবাসী ঘটা করে উদ্‌যাপন করে ‘জামহুরি দিবস’.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ধ নত

এছাড়াও পড়ুন:

হোসনেয়ারা বেগমরা আমাদের অনুপ্রেরণা

বাংলাদেশে প্রসবকালীন মা ও শিশুর মৃত্যুর হার কমাতে গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগ, স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ এবং তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের ফলেই এই সাফল্য এসেছে। এই সাফল্যে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার চন্দ্রশেখরদী গ্রামের হোসনেয়ারা বেগমের মতো নারীদের অবদান কোনোভাবেই কম নয়। ৩৫ বছর ধরে বিনা মূল্যে ১১ হাজারের বেশি প্রসূতির সফল প্রসব করিয়েছেন তিনি, যেখানে একটিও মাতৃমৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। মাতৃস্বাস্থ্যের জন্য এটি নিঃসন্দেহে অনন্য একটি ঘটনা। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৯০ সালে হোসনেয়ারা অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাভাবিক প্রসব করানোর বিষয়ে সরকারি প্রশিক্ষণ শুরু করেন। টানা ৩৬ মাস চলে সেই প্রশিক্ষণ। তখন থেকে উপজেলার নানা গ্রামে গিয়ে কাজ করেন তিনি। এই কাজের উৎসাহ পেয়েছিলেন তাঁর শাশুড়ি জয়বাহার আক্তারের কাছ থেকে। মা ও নবজাতকের হাসির অনুপ্রেরণায় সেই কাজটি কয়েক দশক ধরে করে যাচ্ছেন হোসনেয়ারা।

যখন দুর্যোগে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে, যখন ঝড়–বৃষ্টির রাতে অসুস্থ শরীর নিয়েও হাসপাতালে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়ে অথবা ঈদের দিনের প্রস্তুতি ফেলে যখন প্রসবব্যথায় কাতর মায়ের পাশে ছুটে যেতে হয়, ঠিক তখনই তাঁরা হয়ে ওঠেন গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা নারীদের বিপদের একমাত্র বন্ধু, আস্থার শেষ ভরসা। ২০০২ সালে দুর্ঘটনার শিকার এক মায়ের যমজ সন্তান প্রসব করানো এবং তাঁদের শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করার মতো ঘটনা প্রমাণ করে হোসনেয়ারা কেবল একজন ধাত্রী নন, তিনি সংকটের মুহূর্তে জীবন বাঁচানোর দক্ষ কারিগর।

বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস করার ক্ষেত্রে গ্রামের এই নার্সদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। হোসনেয়ারার ৩৫ বছরের কর্মজীবনে একটিও মাতৃমৃত্যু না হওয়াটা তাঁর দক্ষতা, নিষ্ঠা এবং প্রথাগত জ্ঞানের সঙ্গে সরকারি প্রশিক্ষণের সফল মিশ্রণকে তুলে ধরে। প্রত্যন্ত অঞ্চল, যেখানে জরুরি ভিত্তিতে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো কঠিন, সেখানে হোসনেয়ারা বেগমদের মতো প্রশিক্ষিত ধাত্রীরাই প্রসবকালীন জটিলতা নিরসনে প্রাথমিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। পারিশ্রমিক ছাড়াই হোসনেয়ারা এ কাজ করে যাচ্ছেন, তার মানে মানবসেবা তাঁর কাছে পেশা নয়, বরং একটি ব্রত।

একটি বড় প্রশ্ন, যে মহৎপ্রাণ মানুষটি প্রায় তিন যুগ ধরে হাজার হাজার জীবন বাঁচালেন, অসুস্থ শরীরেও ছুটে গেলেন দুর্যোগে, তিনি কেন এখনো স্বাস্থ্যসেবায় অবদানের জন্য কোনো সরকারি বা বেসরকারি পুরস্কারে ভূষিত হননি? হোসনেয়ারা বেগমের মতো যাঁরা তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার ভিত্তি হিসেবে কাজ করছেন, তাঁদের শুধু সম্মাননা দিলেই হবে না, বরং তাঁদের কাজের পদ্ধতিকে আনুষ্ঠানিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে আরও শক্তিশালীভাবে যুক্ত করতে হবে। তাঁদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন ধাত্রী বা স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষিত করা সময়ের দাবি। হোসনেয়ারা বেগমরা আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁদের প্রতি অভিবাদন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ