ওসমান হাদিকে গুলি: প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সলের স্ত্রী-শ্যালকসহ তিনজনকে আটক
Published: 14th, December 2025 GMT
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করার ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের স্ত্রী ও শ্যালকসহ তিনজনকে আটক করেছে র্যাব। তবে ফয়সল করিমের কোনো খোঁজ এখনো বের করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ফয়সলের স্ত্রী সামিয়া, শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়াকে আটক করা হয়েছে বলে র্যাবের সদরদপ্তরের গণমাধ্যম শাখার একটি সূত্র প্রথম আলোকে তথ্য নিশ্চিত করেছে। ওই সূত্র বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করা হয়। তাঁদেরকে আজকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। মোটরসাইকেলে থাকা আততায়ী তাঁকে গুলি করে মোটরসাইকেলে করেই পালিয়ে যায়। মাথায় গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। আগামীকাল তাঁকে এয়ারঅ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে।
ওসমান হাদি চলন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশায় থাকা অবস্থায় পেছনে থেকে আসা মোটরসাইকেল থেকে তাঁকে গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলেছে, ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে ফয়সল করিমকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ছবি রয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে গুলি করা ব্যক্তির চেহারার সাদৃশ্য রয়েছে বলে অনেকে দাবি করছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।
ফয়সাল করিম কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হয়েছিলেন। তাঁকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আদাবর থানায় একটি মামলা হয়েছিল। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। তখন তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, পাঁচটি গুলি, তিনটি মুঠোফোন ও পাঁচ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল।
ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। তাঁকে গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালালেও এখনো তাঁর হদিস পাওয়া যায়নি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তাদের গাড়িতে হামলা, গ্রেপ্তার ২
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) বদরুল আরেফিন ভূঁইয়ার গাড়িতে হামলার ঘটনায় দুই সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা (পশ্চিম) বিভাগ। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বান্দরবান সদর উপজেলার সিকদারপাড়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- কাজী মো. ইমন হোসেন (২৩) ও মো. সুজন (২৪)। তারা নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
গাইবান্ধায় তরুণের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে প্রতিপক্ষ
বগুড়ার জুলাই শহীদ কমর উদ্দিনের বাড়িতে হামলা
আরো পড়ুন: চট্টগ্রাম বন্দরে অবৈধ পণ্যের চালান আটক করায় কাস্টমস কর্মকর্তাকে হত্যার চেষ্টা
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান জানান, গ্রেপ্তার দুইজন এবং পলাতক একজনসহ মোট তিনজন হামলার ঘটনায় জড়িত। কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর হামলার জন্য তাদের ভাড়া করা হয়েছিল।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখানোর জন্য ‘এক ব্যক্তি’ টাকার বিনিময়ে ওই তিনজনকে ভাড়া করে ঘটনাটি ঘটান। কী কারণে এবং কত টাকায় ওই ব্যক্তিদের ভাড়া করা হয়েছিল, সে বিষয়ে জানতে পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
আরো পড়ুন: ‘গুলি কর’ বলে চট্টগ্রামে কাস্টমস কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা
পুলিশ ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভাষ্য, গত ৪ ডিসেম্বর সকালে প্রাইভেট কারে চড়ে অফিসে যাচ্ছিলেন আসাদুজ্জামান খান ও বদরুল আরেফিন ভূঁইয়া। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা নগরের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় পৌঁছান। তিন ব্যক্তি মোটরসাইকেলে এসে হঠাৎ সামনে থেকে তাঁদের গতি রোধ করে। মুহূর্তের মধ্যে গাড়িতে হামলা ও কাচ ভাঙচুর শুরু করে তারা। তাদের একজনের হাতে চাপাতি ছিল। এ সময় তারা ‘গুলি কর, গুলি কর’ বলে চিৎকার করতে থাকে। হামলা ও গুলি করার হুমকির মুখে ওই দুই কর্মকর্তা কোনোমতে গাড়ি থেকে নেমে দৌঁড়ে পাশের একটি গলিতে আশ্রয় নেন।
হামলার পর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ডবলমুরিং থানায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলা হওয়ার পরই মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল ঘটনার সূত্র উদঘাটন এবং হামলাকারীদের শনাক্তে কাজ শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে বান্দরবানের সিকদারপাড়া এলাকা থেকে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হামলার দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করেছে। পরিকল্পনা করে এই হামলা চালানো হয়েছে।
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ