Prothomalo:
2025-01-15@14:55:37 GMT

ঘরের নানা কাজ করে দিচ্ছে বানর

Published: 11th, January 2025 GMT

পোষা প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। অনেক প্রাণী তার মনিবের কথা বুঝতে পারে। তাঁর কথামতো নানা কসরত করে থাকে। তবে ভারতের উত্তর প্রদেশের রায়বেরলিতে একটি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বানরের অসাধারণ সম্পর্ক অনেকের দৃষ্টি কেড়েছে। ওই বানরের নাম দেওয়া হয়েছে রানি। সে অন্যান্য বানরের চেয়ে অনেকটা আলাদা। পরিবারের নানা কাজ সে করে দেয়। এ কারণে তাকে ‘কাজের বানর’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

রায়বেরলির সাদওয়া গ্রামের কৃষক বিশ্বনাথের পরিবারে আট বছর আগে আনা হয় রানিকে। তখন থেকেই তাঁর পরিবারের সদস্যরা ওই রানিকে লালন–পালন করতে থাকেন।

জানা যায়, আট বছর আগে ওই গ্রাম দিয়ে বানরের একটি দল যাচ্ছিল। ওই সময় দলের অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রানি। তখন তাকে একা পেয়ে বিশ্বনাথের স্ত্রী ঘরে নিয়ে আসেন।

রানি বিশ্বনাথের পরিবারে নতুন এক পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়। হয়ে যায় ওই পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সে দ্রুতই মানুষের আচার–আচরণ রপ্ত করে নেয়। পরিবারের অন্যদের মতো সে–ও একই খাবার–পানীয় খেতে শুরু করে। ঘরের দৈনন্দিন কাজও রপ্ত করে নেয়।

রুটি বানানোসহ বিশ্বনাথের পরিবারের নানা কাজ করে দেওয়ার সুবাদে সবার ভালোবাসা অর্জন করে। তার ডাক নাম দেওয়া হয় ‘কাজের বানর’। এমনকি অবসর সময়ে মুঠোফোনে নানা ভিডিও দেখে থাকে রানি। রানির বুদ্ধিমত্তা আর আচরণ আশপাশের মানুষকে মুগ্ধ করে তোলে।

বিশ্বনাথের ছেলে আকাশ রানির নানা কর্মকাণ্ডের ভিডিও করে ইউটিউব চ্যানেল ‘রানি ব্লগ আরবিএল’–এ দিতে থাকে। দ্রুতই এই চ্যানেলের লাখ লাখ ভিউ হয়। রানির ব্যতিক্রমী কাজের দক্ষতা আর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার সম্পর্কের ভিডিও বিশ্বজুড়ে দর্শক–শ্রোতাকে মুগ্ধ করে।

মানুষের সঙ্গে রানির দারুণ বন্ধনের জন্য তাকে অবশ্য মূল্যও দিতে হয়েছে। বানরের দল এখন তাকে আর তাদের দলে নিচ্ছে না। কারণ, সে এখন বানরদের চেয়ে ভিন্ন রকম আচার–আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে এখন রানি পুরোপুরি মানব পরিবারের ওপর নির্ভরশীল।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গুয়ানতানামো, ২৩ বছর পরও সর্বব্যাপী এক হুমকি

৬ জানুয়ারি ১১ জন ইয়েমেনি বন্দীকে ওমানে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা গুয়ানতানামো বন্দিশালায় ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাঁদের মুক্তির অনুমতি দিয়েছে। 

এর আগে পেন্টাগন রিদাহ বিন সালেহ আল-ইয়াজিদি নামের একজনকে গুয়ানতানামো কারাগার থেকে ছেড়ে দিয়ে তিউনিসিয়ায় ফেরত পাঠায়। তিনি ২০০২ সালে গুয়ানতানামো খোলার সময় থেকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই বন্দী ছিলেন। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি আরও তিনজন বন্দী মুক্তি পান। তাঁদের দুজনকে মালয়েশিয়ায় এবং একজনকে কেনিয়ায় পাঠানো হয়। 

গুয়ানতানামো কারাগার বানানোর ২৩ বছর পর এখন সেখানে বন্দীর সংখ্যা সবচেয়ে কম। বর্তমানে সেখানে মাত্র ১৫ জন বন্দী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ‘নাইন–ইলেভেন ফাইভ’খ্যাত পাঁচজনও রয়েছেন। 

বন্দীর সংখ্যা কমে গেলেও এই অধ্যায় শেষ হয়নি। কারণ, যাঁরা এখনো বন্দী, তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আর যাঁরা মুক্তি পেয়েছেন, তাঁদের অনেকেই এখনো গুয়ানতানামোর নির্যাতন–পরবর্তী মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির সঙ্গে লড়াই করছেন। 

গুয়ানতানামো শুধু একটি বন্দিশালা নয়; এটি সাম্রাজ্যবাদ, বৈষম্য ও নিষ্ঠুরতার প্রতীক। এটি দেখায় যে ভিন্ন সম্প্রদায়কে অপরাধী সাব্যস্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র কত নিচে নামতে পারে। একই সঙ্গে এটি কিউবার ভূমির ওপর মার্কিন দখলদারির কথাও মনে করিয়ে দেয়।

দুই দশকের বেশি সময় ধরে গুয়ানতানামো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন একটি জায়গা হিসেবে পরিচিত, যেখানে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কারা শাস্তি পাবে আর কারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত থাকবে। 

মার্কিন গবেষক অ্যামি ক্যাপলান তাঁর ‘হয়্যার ইজ গুয়ানতানামো?’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘গুয়ানতানামোকে আজকের বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়টি জায়গাটির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। এটি সাম্রাজ্যবাদের একটি উদাহরণ; যেখানে জাতীয় সীমান্তের বাইরে এবং আইনের শাসনের বাইরে রাষ্ট্রের ক্ষমতা জোর করে ব্যবহার করা হয়।’ 

গুয়ানতানামো দখল করেও যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, কিউবার এই এলাকার সার্বভৌমত্ব আছে। কিন্তু কিউবার এখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বা মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে কিছু করার ক্ষমতা নেই। এই সাম্রাজ্যবাদী আচরণের কারণেই গুয়ানতানামোয় এত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক দেশে যুদ্ধ করেছে, দখল করেছে এবং অনেক বন্দীকে এসব দেশ থেকে ধরে এনেছে। 

গুয়ানতানামো দখল করেও যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, কিউবার এই এলাকার সার্বভৌমত্ব আছে। কিন্তু কিউবার এখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বা মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে কিছু করার ক্ষমতা নেই। এই সাম্রাজ্যবাদী আচরণের কারণেই গুয়ানতানামোয় এত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক দেশে যুদ্ধ করেছে, দখল করেছে এবং অনেক বন্দীকে এসব দেশ থেকে ধরে এনেছে। 

এ সহিংসতা শুধু ওই অঞ্চলে নয়, বন্দীদের শরীরেও ফুটে উঠেছে। দখল করা কিউবার মাটিতে বন্দীদের প্রতি এ আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার এক নগ্ন উদাহরণ।

এ অবস্থা এখনো চলছে। অনেক বন্দীকে তাঁদের নিজের দেশ, বিশেষ করে ইয়েমেনে ফেরত পাঠানো হয়নি। কারণ, সেখানে এখনো যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ চালাচ্ছে। 

মিশেল ফুকো তাঁর ডিসিপ্লিন অ্যান্ড পানিশ বইয়ে বলেছেন, উনিশ শতকের শুরুতে শাস্তি দেওয়ার প্রকাশ্য পদ্ধতি বদলে যায়। শারীরিক যন্ত্রণা বা প্রকাশ্য শাস্তি কমে আসে। কারণ, ক্ষমতা প্রয়োগের সূক্ষ্ম পদ্ধতি মানুষের ক্ষোভ কমিয়ে কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চায়। কিন্তু গবেষক সোহাইল দৌলতজাই দেখিয়েছেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের’ ক্ষেত্রে ফুকোর তত্ত্বের উল্টোটা ঘটেছে। নাইন–ইলেভেন হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র শাস্তি ও নির্যাতনের একটি ‘অতিরিক্ত যুগ’ চালু করে। বিশেষ করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এ নির্যাতন প্রকাশ্যে দেখানো হয়। এখানে যুদ্ধ জেতার প্রমাণ হিসেবে এ নির্যাতনকে প্রকাশ্যে আনা হয় এবং নির্যাতনকে ন্যায়সংগত বলে প্রচার করা হয়। 

দৌলতজাই আরও বলেন, মুসলিমদের শাস্তি যেন স্বাভাবিক ও সঠিক মনে করা হয়; কারণ, ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ মুসলিমদের হুমকির প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। 

২৩ বছর আগে গুয়ানতানামোয় আনা বন্দীদের একটি ছবি তোলা হয়েছিল। ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছিল, বন্দীরা কমলা রঙের পোশাক পরে হাঁটু গেড়ে বসে ছিলেন। তাঁদের চোখে চশমা ছিল। মুখ বাঁধা অবস্থায় ছিল। নাইন–ইলেভেন হামলার পর মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ইচ্ছা করে এ ছবি প্রকাশ করেছিল। 

জেনারেল রিচার্ড মায়ার্স তখন বলেছিলেন, এই বন্দীরা এত বিপজ্জনক যে তাঁরা দাঁত দিয়ে কামড়ে বিমান ভেঙে ফেলতেও সক্ষম। ক্যাম্প এক্স-রের কমান্ডার মাইকেল লেহনার্ট তাঁদের ‘সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধী’ বলে বর্ণনা করেছিলেন।

এ ধরনের কথাবার্তা মুসলিম বন্দীদের শত্রু হিসেবে তুলে ধরতে এবং তাঁদের আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে সাহায্য করেছিল।

এ কারাগার যত দিন খোলা থাকবে, তত দিন এটি বন্দীদের জন্য একটি অবিচারের স্থান হিসেবে থাকবে। তাই এটি বন্ধ করা সময়ের দাবি। 

ড. মাহা হিলাল গবেষক ও লেখক। তিনি মুসলিম কাউন্টারপাবলিকস ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক এবং উইটনেস এগেইনস্ট টর্চারের সংগঠক

মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কোহলিকে কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ বাদ দেওয়ার পরামর্শ চ্যাপেলের
  • গুয়ানতানামো, ২৩ বছর পরও সর্বব্যাপী এক হুমকি