২০২১ সাল থেকে বিশ্বের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোতে যে ছাঁটাই প্রবণতা শুরু হয়েছে, তা ২০২৫ সালেও চলবে। তবে ছাঁটাই আর এখন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; মিডিয়া, আর্থিক, উৎপাদন ও খুচরা বিক্রেতা কোম্পানিগুলোতেও ছাঁটাই হবে।

ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও দ্রুত প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্যে এই ছাঁটাই হবে। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের জগতে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। অনেক কোম্পানি এখন এআইতে বিনিয়োগ করতে বাধ্য হচ্ছে।

বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনের সূত্রে ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বের ৪১ শতাংশ কোম্পানি এআই গ্রহণের কারণে কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হবে। ২০২৫ সালে যেসব কোম্পানি কর্মী ছাঁটাই করতে পারে, তার তালিকা নিচে দেওয়া হলো—

মাইক্রোসফট

পারফরম্যান্স বা কর্মনৈপুণ্য ব্যবস্থাপনা কৌশলের অংশ হিসেবে মাইক্রোসফটে কর্মী ছাঁটাই অব্যাহত আছে। সত্য নাদেলার নেতৃত্বে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে তাদের। তথ্যানুসারে মাইক্রোসফট বিভিন্ন বিভাগের যেসব কর্মী কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে কাজ করতে পারছেন না, তাঁদের ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে তাঁদের নিরাপত্তা বিভাগের কর্মীরাও আছেন। তবে এবার বেশি কর্মী ছাঁটাইয়ের শিকার হবেন না বলে জানা গেছে।

ব্ল্যাকরক

বৈশ্বিক বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা করপোরেশন ব্ল্যাকরক চলতি বছর ২০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করেছে। মূলত কোম্পানির কৌশলগত পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পদের পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবে এবার কর্মী ছাঁটাই করবে কোম্পানিটি। এদিকে ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি নিয়োগ দেওয়ারও পরিকল্পনা আছে তাদের।

ব্রিজওয়াটার অ্যাসোসিয়েটস

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ হেজ ফান্ড ব্রিজওয়াটার অ্যাসোসিয়েটস ইতিমধ্যে ৯০ জন কর্মী ছাঁটাই করেছে। মূলত কোম্পানি ব্যয় নির্বাহ ও পরিচালনাগত দক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে তারা এই ছাঁটাই করেছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট ৪ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ডিজিটাল মাধ্যমের পাঠক কমে যাওয়ায় পত্রিকাটি যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তা পোষাতেই তাদের ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা। তবে বার্তাকক্ষে ছাঁটাই হচ্ছে না বলে জানিয়েছে তারা। ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত বিভাগে এই ছাঁটাই হবে।

অ্যালাই ফাইন্যান্সিয়াল

আরেক ডিজিটাল আর্থিক সেবা অ্যালাই ফাইন্যান্সিয়াল চলতি বছর ৫০০ কর্মী ছাঁটাই করার পরিকল্পনা করেছে। কোম্পানির কর্মী সংখ্যা যথাযথ পর্যায়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে তারা এই ছাঁটাই পরিকল্পনা করেছে।

অ্যামাজন

অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি জ্যাসি বলেছেন, কোম্পানির পরিচালনাগত উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রায় ১৪ হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা আছে চলতি বছর। এতে কোম্পানির বার্ষিক প্রায় ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার বাঁচবে বলে জানিয়েছে তারা।

এ ছাড়া বোয়িংসহ আরও কয়েকটি এয়ারলাইনস বা বিমান পরিষেবা দেওয়া কোম্পানি চলতি বছর কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে।

সারা বিশ্বে কর্মী ছাঁটাইয়ের পেছনে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বড় ভূমিকা আছে বলে ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে। ড্রপবক্স, গুগল ও আইবিএমের মতো কোম্পানি এআই অধিগ্রহণজনিত ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জরিপে দেখা গেছে, এআই গ্রহণের কারণে আরও অনেক কোম্পানি ভবিষ্যতে কর্মী ছাঁটাই করবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়

‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।

উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’

গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’

প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্‌ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।

আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)

সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে  প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।

আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫

‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।

কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।

আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সেরা
  • একঝলক (১৫ জুন ২০২৫)
  • ‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৫ জুন ২০২৫)
  • অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আরও যাঁরা পেয়েছেন ‘দ্য কিংস ফাউন্ডেশন পুরস্কার ২০২৫’
  • সৌদি আরবের ৫০ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ, আবেদনের শেষ তারিখ আজ 
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৪ জুন ২০২৫)
  • মুহাম্মদ ইলিয়াসের তাবলিগি দর্শন
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে মাস্টার্স, ক্লাস শুক্র ও শনিবার
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৩ জুন ২০২৫)