Samakal:
2025-09-18@02:43:13 GMT

সড়ক বন্ধের সংস্কৃতি বন্ধ হোক

Published: 12th, January 2025 GMT

সড়ক বন্ধের সংস্কৃতি বন্ধ হোক

রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে মানুষের আবেগ-উচ্ছ্বাস থাকবে। এটি দোষের কিছু নয়। কিন্তু সেই আবেগ প্রদর্শন যদি অসংখ্য মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়; তবে সেটি বিবেক দিয়ে ভাবা দরকার। জনস্বার্থবিরোধী যে কোনো আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সড়ক অবরোধ করে প্রটোকল দেওয়া রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। 

একজন রাজনীতিবিদ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিভিন্ন প্রয়োজনে দেশ-বিদেশ সফর করতেই পারেন। কিন্তু সেটিকে কেন্দ্র করে যখন মানুষের ভোগান্তি বাড়ে, তখন তা অত্যন্ত হতাশার। যেমন ৭ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাঁর এই যাত্রা দেশের রাজনীতিতে যেমন আলোচিত ছিল, তেমনি নেতাকর্মীর মধ্যেও খুব আনন্দের উপলক্ষ। ফলে তাঁকে বিদায় জানাতে এয়ারপোর্ট এলাকায় ছিল নেতাকর্মীর ভিড়। ওইদিন সন্ধ্যার পর থেকেই এয়ারপোর্টমুখী সড়কে যান চলাচলে স্থবিরতা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে গাড়ির চাকা থেমে যায়। এতে প্রায় চার ঘণ্টার যানজটে পড়েন যাত্রীরা। এর প্রভাব পড়ে প্রায় পুরো ঢাকার সড়কপথে। দীর্ঘদিন পর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর এবারের বিদেশযাত্রা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভ্রমণের রাজনৈতিক-কূটনৈতিক গুরুত্ব আলোচনা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। 

এ অবস্থায় কর্মীদের উচিত নেতার সুস্থতা কামনায় দোয়া করা। এর চেয়ে বড় সমর্থন আর কী হতে পারে? কিন্তু দোয়ার পরিবর্তে তারা ঢাকার ব্যস্ততম সড়কগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। এতে রাস্তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে পথচারীদের ভয়াবহ ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। 

দেশে এ ধরনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু আমরা কেন এ ধরনের আচরণ যুগের পর যুগ ধরে রাখব? এমনিতেই ঢাকার ট্রাফিকের চাপ অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। এ ধরনের যানজটে বহু মুমূর্ষু রোগী অ্যাম্বুলেন্সে আটকে থাকেন। কতজনের জরুরি মিটিং মিস হয়। আমি নিজেও এ রকম পরিস্থিতিতে একটা অনুষ্ঠানে যেতে পারিনি; মাঝপথ থেকে ফিরে এসেছি। ৩০ মিনিটের রাস্তায় ৩ ঘণ্টা আটকে ছিলাম।
আমরা যারা ঢাকায় বসবাস করি, তাদের প্রতিনিয়ত এই বিড়ম্বনায়  পড়তে হয়। ‘ভিআইপি পাস’-এর নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে কাটাতে হয়। নাগরিকদের ভোগান্তি দেওয়ার এই সংস্কৃতি কি পৃথিবীর কোনো দেশে আছে?
লাখ লাখ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে প্রটোকল দেওয়ার রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির পরিবর্তন হতে হবে। আমাদেরও এই অপসংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে। সব রাজনৈতিক সংগঠনকে এমন কার্যকলাপ পরিহার করা অত্যন্ত আবশ্যক। 

একটা ঘটনা বলে শেষ করব। ছাত্রজীবনে যখন আমরা হলে থাকতাম, তখন মনে মনে শেখ হাসিনার পতন চাইতাম। কেন জানেন? বড় কোনো কারণে নয়। উচ্চ শব্দে যাতে মাইক বাজানো বন্ধ হয়। দলের কিছু কর্মী ক্যাম্পাসে পুরো মাস মাইক বাজাত। ৭ মার্চের ভাষণ আমরা প্রত্যেকেই পছন্দ করি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বিরতিহীনভাবে উচ্চ স্বরে আপনি তা শুনতে বাধ্য করবেন। আমাদের ক্যাম্পাস ছিল ১৭৫ একরের ছোট্ট গণ্ডি। সেখানে অন্তত ১০টি মাইক বাজানো হতো। সবই উচ্চ স্বরে। আবাসিক হলগুলোতে কে অসুস্থ কিংবা কার পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে, তা দেখার সময় যেন কারও নেই। 
সবচেয়ে মুশকিলের কথা, এসব নিয়ে আপনি কিছু বলতেও পারবেন না। বললেই বিপদ। মামলার আসামিও হতে পারেন! এমন পরিস্থিতিতে একজন দুর্বল কল্পনাবিলাসীর পক্ষে মনে মনে মহাপ্রতাপশালীর পতন চাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। ‘অ্যান্টি কনসেন্ট’ কত ক্ষুদ্র ভুলের কারণে উৎপাদন হতে পারে– রাজনৈতিক দলগুলোকে সে কথা মনে করিয়ে দিলাম আর কি। আশা করি, তারা এ বিষয়কে গুরুত্ব দেবে। 

অনি আতিকুর রহমান: সহসম্পাদক, সমকাল 
atikbanglaiu@gmail.

com 
 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে