বাড়ির দেয়ালে ‘সমন্বয়ক, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ লিখে হুমকি
Published: 13th, January 2025 GMT
বাড়ির দেয়ালে লিখনের মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা প্রতিনিধি ফা-আরদ্বীন রহমানকে (১৮) হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছ। রোববার দিবাগত রাতে সরদহ ইউনিয়নের পশ্চিম বালিয়াডাঙা এলাকায় তার বাড়ির দেয়ালে ‘সমন্বয়ক, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ লিখে এ হুমকি দেওয়া হয়। এতে তার পরিবারের সদস্যদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ফা-আরদ্বীন রহমান বালিয়াডাঙা এলাকার বজলুর রহমানের ছেলে। তিনি সিটি পলিটেকনিক অ্যান্ড টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চারঘাট উপজেলা প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
জানা যায়, গত ১৮ জুলাই রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। সেই মিছিল থেকে ফা-আরদ্বীন রহমানসহ আটক হন আট শিক্ষার্থী। আটকের পর থানায় নিয়ে তাদের ওপর নির্যাতন চালায় পুলিশ। পরদিন তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, আন্দোলন চলাকালীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেখ হাসিনা সরকারকে স্বৈরাচার অ্যাখা দিয়ে একাধিক পোস্ট দেওয়ায় ২১ জুলাই রাতে জেলখানার টর্চার সেলে ফা-আরদ্বীনকে হাত-পা বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট মুক্তি পান তিনি। কিন্তু শারীরিক নির্যাতনের পর যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত ঠিকমত হাঁটতে পারেন না তিনি। এরই মধ্যে তার বাড়ির দেয়ালে লিখনের মধ্যে দিয়ে মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয়েছে ফা-আরদ্বীনকে।
এ বিষয়ে ফা-আরদ্বীন রহমান সমকালকে বলেন, ‘রোববার রাত ১০টার দিকে বাবার সঙ্গে বাজার থেকে বাসায় ফিরি। এ সময় দেয়ালে লেখাটি দেখতে পাই। বিকেলেও লেখাটি ছিল না। ১৮ জুলাই পুলিশের হাতে আটকের পর থানা ও জেলখানায় দফায় দফায় নির্যাতনের শিকার হয়েছি। এখনো সুস্থ হতে পারিনি। অধিকাংশ সময় বাবা-মা বাড়ি একা থাকেন। তাদের নিরাপত্তার কথা হবে আতঙ্কে আছি। বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চারঘাট উপজেলার প্রতিনিধি হিসাবে কাজ শুরু করায় আমাকে হুমকি দিতেই পরিকল্পিতভাবে কাজটি করা হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি রোহানা সেতু বলেন, ‘ফা-আরদ্বীনকে হত্যার হুমকির বিষয়টি রাতেই জেনেছি। শুক্রবার ফা-আরদ্বীন আমরা চারঘাট উপজেলায় ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের’ পক্ষে জনমত তৈরির জন্য লিফলেট বিতরণ করেছি। সে অন্যায় অবিচারের বিপক্ষে জনমত তৈরিতে চারঘাট উপজেলায় কাজ করছে। এজন্য তার কার্যক্রম ব্যাহত করতেই এভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছি।’
চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে ফা-আরদ্বীন রহমান লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ চলছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।