বাড়ির দেয়ালে লিখনের মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা প্রতিনিধি ফা-আরদ্বীন রহমানকে (১৮) হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছ। রোববার দিবাগত রাতে সরদহ ইউনিয়নের পশ্চিম বালিয়াডাঙা এলাকায় তার বাড়ির দেয়ালে ‘সমন্বয়ক, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ লিখে এ হুমকি দেওয়া হয়। এতে তার পরিবারের সদস্যদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ফা-আরদ্বীন রহমান বালিয়াডাঙা এলাকার বজলুর রহমানের ছেলে। তিনি সিটি পলিটেকনিক অ্যান্ড টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চারঘাট উপজেলা প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। 

জানা যায়, গত ১৮ জুলাই রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। সেই মিছিল থেকে ফা-আরদ্বীন রহমানসহ আটক হন আট শিক্ষার্থী। আটকের পর থানায় নিয়ে তাদের ওপর নির্যাতন চালায় পুলিশ। পরদিন তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়। 

জানা গেছে, আন্দোলন চলাকালীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেখ হাসিনা সরকারকে স্বৈরাচার অ্যাখা দিয়ে একাধিক পোস্ট দেওয়ায় ২১ জুলাই রাতে জেলখানার টর্চার সেলে ফা-আরদ্বীনকে হাত-পা বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট মুক্তি পান তিনি। কিন্তু শারীরিক নির্যাতনের পর যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত ঠিকমত হাঁটতে পারেন না তিনি। এরই মধ্যে তার বাড়ির দেয়ালে লিখনের মধ্যে দিয়ে মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয়েছে ফা-আরদ্বীনকে। 

এ বিষয়ে ফা-আরদ্বীন রহমান সমকালকে বলেন, ‘রোববার রাত ১০টার দিকে বাবার সঙ্গে বাজার থেকে বাসায় ফিরি। এ সময় দেয়ালে লেখাটি দেখতে পাই। বিকেলেও লেখাটি ছিল না। ১৮ জুলাই পুলিশের হাতে আটকের পর থানা ও জেলখানায় দফায় দফায় নির্যাতনের শিকার হয়েছি। এখনো সুস্থ হতে পারিনি। অধিকাংশ সময় বাবা-মা বাড়ি একা থাকেন। তাদের নিরাপত্তার কথা হবে আতঙ্কে আছি। বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চারঘাট উপজেলার প্রতিনিধি হিসাবে কাজ শুরু করায় আমাকে হুমকি দিতেই পরিকল্পিতভাবে কাজটি করা হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’ 

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি রোহানা সেতু বলেন, ‘ফা-আরদ্বীনকে হত্যার হুমকির বিষয়টি রাতেই জেনেছি। শুক্রবার ফা-আরদ্বীন আমরা চারঘাট উপজেলায় ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের’ পক্ষে জনমত তৈরির জন্য লিফলেট বিতরণ করেছি। সে অন্যায় অবিচারের বিপক্ষে জনমত তৈরিতে চারঘাট উপজেলায় কাজ করছে। এজন্য তার কার্যক্রম ব্যাহত করতেই এভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছি।’

চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে ফা-আরদ্বীন রহমান লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ চলছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

বোচাগঞ্জ থানার ওসির অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন 

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় এবং আসামি গ্রেপ্তারে বিলম্ব করার অভিযোগ এনে বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান জাহিদের অপসারণের দাবি মানববন্ধন করা হয়েছে। 

সোমবার (১৬ জুন) দুপুর ১২টায় সেতাবগঞ্জ চৌরাস্তায় মানববন্ধন শেষে ঝাড়ু মিছিল নিয়ে থানার প্রধানগেটে মিছিল করে  স্থানীয়রা। 

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সন্ত্রাসী হামলায় আহত শাহরিয়ার শিশিরের বাবা সাবেক কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদ, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সেতাবগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি নওশাদ আলী, দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোজাহারুল ইসলাম, বোচাগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রেদওয়ানুল কারীম রাবিদ, পৌর বিএনপির উপদেষ্টা এমওয়ালী ফ্লাড, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রিয়াদ হাসান চৌধুরী, এমরুল রেজা, মাসুদ খাঁন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রীতি আক্তার নিশি, সাবেক কাউন্সিলর মামুন প্রমুখ। 

আরো পড়ুন:

কালীগঞ্জে মাদকবিরোধী সমাবেশ 

মুন্সীগঞ্জে গুমে জড়িতদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন 

তারা বলেন, বোচাগঞ্জের মাটিতে একের পর এক সন্ত্রসী ঘটনা ঘটছে কিন্তু বোচাগঞ্জ থানার ওসি হাসান জাহিদ সরকার সেই সন্ত্রসীদের বিরুদ্ধে মামলা নেন না। কারণ ওই সন্ত্রাসীরা হলেন তথাকথিত সমন্বয়ক ফয়লাল মোস্তাকের ক্যাডার বাহিনী। তিনি মামলার বাদীকে চিহ্নিত সন্ত্রাসীর নাম বাদ দিয়ে মামলা করতে বাধ্য করেন। তার পরও এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করছেন না। 

তারা অবিলম্বে ওসি হাসান জাহিদের অপসারণ ও কিশোর গ্যাংয়ের সকল সদস্যদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।

এ বিষয়ে বোচাগঞ্জ থানার ওসি হাসান জাহিদ সরকার জানান, গত ৯ জুন সেতাবগঞ্জ চিনিকল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে শাহরিয়ার শিশিরকে মারধরের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় আটজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।  

তিনি আরো বলেন, ‘‘যারা আমার কাছে অবৈধভাবে সুবিধা নিতে পারেননি। তাদের একটি অংশ আমার বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করছেন। আমার পদত্যাগ দাবি করছেন। আর যে মামলায় আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে। ওই মামলার আসামিরা আদালতের মাধ্যমে জামিন পেয়েছেন বলে আমি আদালত মারফত জানতে পেরেছি।’’

ঢাকা/মোসলেম/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ