চিটাগংয়ের জয়ে শেষটা বিবর্ণ সিলেটের
Published: 13th, January 2025 GMT
ঘরের মাঠে সিলেট স্ট্রাইকার্সের শেষটা ভালো হলো না। চিটাগং কিংসের কাছে ৩০ রানে হেরেছে সিলেট। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে চিটাগং কিংস ৬ উইকেটে ২০৩ রান করে। জবাব দিতে নেমে অনেক চেষ্টার পরও সিলেট করতে পারে কেবল ১৭৩ রান।
তিন ম্যাচ হারের পর টানা দুই জয়ে সিলেট কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছিল দর্শকদের। কিন্তু সিলেট পর্বের শেষটা ভালো হলো না স্বাগতিকদের। নির্বিষ বোলিংয়ের পর শুরুর ব্যাটিং হলো ছন্নছাড়া। মাঝে লড়াই করলো তারা। শেষটাতেও হাল ছাড়ল না। কিন্তু ৩০ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি।
২০৪ রান তাড়া করতে নেমে শুরুর ১০ ওভারে ম্যাচ ছুট হয়ে যায় সিলেটের। ১০.
পঞ্চম উইকেটে সিলেট লড়াইয়ে ফেরে। জাকেরকে নিয়ে লড়াই করেন জর্জ মুনসে। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মুনসে শুরুতে রান পেতে ভুগছিলেন। থিতু হওয়ার পর চালান তাণ্ডব। প্রথম ২৫ রান পেতে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান খেলেছেন ২৬ বল। পরের ২৫ তুলেছেন ১০ বলে। শেষ পর্যন্ত ৩৭ বলে ৪টি করে চার ও ছক্কায় ৫২ রান করে ফেরেন সাজঘরে।
আরো পড়ুন:
সিলেটকে দুইশ রানের চ্যালেঞ্জ চিটাগংয়ের
রেকর্ড রানে জেতার ম্যাচে ঢাকার প্রাপ্তি লিটন-তানজিদের সেঞ্চুরি
এরপর আরিফুল এসে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে আশার আলো দেখান। কিন্তু ১২ রানের বেশি আসেনি তার ব্যাট থেকেও। শেষ পর্যন্ত উইকেটে টিকে ছিলেন জাকের আলী। ২৩ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৭ রান করে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনেন তিনি।
চিটাগংয়ের হয়ে ২৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা ছিলেন মোহাম্মদ ওয়াসিম।
এর আগে তিন বিদেশির হাত ধরে উড়েছে চিটাগংয়ের ব্যাটিং ইনিংস। শুরুতে উসমান খানের ঝড়ো ফিফটি। মাঝে গ্রাহাম ক্লার্কের বিধ্বংসী ইনিংস। এবং শেষে হায়দার আলীর ক্যামিও।
টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে চিটাগং কিংসকে অল্পতে আটকে রাখার পরিকল্পনা ছিল সিলেট স্ট্রাইকার্সের। কিন্তু গোটা ইনিংসে তাদের বোলাররা যেভাবে হাত খুলে রান দিয়েছেন তাতে একবারও মনে হয়নি অধিনায়কের সিদ্ধান্ত যথার্থ।
ধারাবাহিক রানে থাকা উসমান এবারও দলের হাল ধরেন শুরুতে। ৩৫ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৫৩ রান করেন। আরেক ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন এক ছক্কা হাঁকিয়ে আটকে যান। দ্বিতীয় উইকেটে ক্লার্ক ও উসমান ৩৯ বলে ৬৮ রানের জুটি গড়েন। প্রতি আক্রমণে গিয়ে দ্রুত রান তুলে দলকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন তারা।
ফিফটির পর উসমান থেমে গেলেও গ্রাহাম টিকে ছিলেন আরও কিছুক্ষণ। সিলেটের অধিনায়ককে বেরিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে থার্ড ম্যান অঞ্চলে ক্যাচ দেন উসমান। ৫ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৩ বলে ৬০ রান করা ক্লার্ক সাজঘরে ফেরেন নাহিদুল ইসলামের বলে।
শামীম হোসেনের পরবর্তী পাঁচে হায়দার আলীকে আসতে দেখে অবাক হয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু ডানহাতি হার্ডহিটার শেষের দাবি মিটিয়েছেন বেশ ভালোভাবে। মাত্র ১৮ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৪২ রান করেন। ২৩৩.৩৩ স্ট্রাইক রেটে সাজানো ইনিংসটিতে ছিল কাভার ও মিড উইকেট দিয়ে হাঁকানো দৃষ্টিনন্দন ছক্কায়। এছাড়া মিথুন ১৯ বলে ২৮ রান তুলে রাখেন অবদান।
ইনিংসের প্রথম ১০ ওভারে ৯৯ রান তোলা চিটাগং শেষ ১০ ওভারে পায় ১০৪ রান। বোঝাই যাচ্ছে একই ছন্দে তারা ব্যাটিং করেছে। যেখানে সিলেটের বোলাররা ছিলেন স্রেফ দর্শক। ৩৮ রানে ২ উইকেট নিয়ে তানজিম সাকিব ছিলেন তাদের সেরা।
চিটাগং কিংসের তৃতীয় জয়ের দিনে সিলেট পেল চতুর্থ পরাজয়ে তিক্ত স্বাদ পেল। পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে এখন চিটাগংয়ের অবস্থান।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।