সব মত, পথ, বৈচিত্র্যময় চিন্তার বহিঃপ্রকাশ তুলে ধরাই গণমাধ্যমের কাজ: কামাল আহমেদ
Published: 13th, January 2025 GMT
রাজনৈতিক দলীয় আদর্শ দিয়ে সংবাদমাধ্যমকে প্রভাবিত করার ধারা বন্ধ করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ। তিনি বলেছেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সচ্ছলতার ওপর। সব মত পথ বৈচিত্র্যময় চিন্তার বহিঃপ্রকাশ তুলে ধরাই গণমাধ্যমের কাজ। কিন্তু রাজনৈতিক দলবাজি, প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকপক্ষ প্রভাব বিস্তার করে স্বাধীন সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক দলবাজি বন্ধ করা দরকার।
আজ সোমবার বরিশাল নগরের বান্দরোড এলাকায় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিভাগের ছয় জেলার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় এই সভা শুরু হয়ে চলে বেলা ২টা পর্যন্ত। মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন জেলার সাংবাদিকেরা গণমাধ্যমের সংস্কারের জন্য তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।
সভায় কামাল আহমেদ বলেন, ‘একই হাউস থেকে একাধিক সংবাদপত্র বের হচ্ছে। পাঠক একই জিনিস ঘুরেফিরে পাচ্ছে। দেখা যায়, একই ব্যক্তির মালিকানায় পত্রিকাও আছে, টেলিভিশনও আছে। যে কেউ পত্রিকা বের করে ফেলছে। এগুলোয় শৃঙ্খলা আনতে হবে। দুষ্ট চক্র ভাঙতে হবে। আমরা আপনাদের কথা অনুযায়ী সুপারিশ করব। সেটি বাস্তবায়ন করবে সরকার। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা পরামর্শ-সুপারিশ নেব।’
সভায় অংশ নেওয়া সাংবাদিকেরা মফস্বল সাংবাদিকদের বেতন কাঠামো নিয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরে বলেন, ওয়েজ বোর্ড দেওয়া হয় কিন্তু মফস্বলের সাংবাদিকেরা এর সুবিধা পান না। কিছু পত্রিকা ন্যূনতম বেতন-ভাতা দিলে অধিকাংশ কোনো বেতন-ভাতা দেয় না।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিকদের রুটিরুজির সংস্থান না করে ভালো সাংবাদিকতা আশা করা যায় না। মানোন্নয়ন করা অসম্ভব। এসব কারণেই সাংবাদিকতার মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ জন্য ওয়েজ বোর্ডকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। ঢাকার বাইরেও সংবাদকর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া অনেকে অভিজ্ঞতা ছাড়াই সম্পাদক হয়ে যাচ্ছেন। এর একটি নীতিমালা থাকা দরকার।
জবাবে কামাল আহমেদ বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক স্বচ্ছতা না থাকলে সেই ব্যক্তি অনৈতিক পথে হাঁটবেন, এটাই স্বাভাবিক। সাংবাদিকদের আর্থিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে হবে। ওয়েজ বোর্ডের সুবিধা পান মালিকেরা, সাংবাদিকেরা পান না। রাজনৈতিক চাপে গণমাধ্যমের ইতিবাচক পরিবর্তন হয় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘চলতি মাসেই কমিশনের কাজ শেষ করা হবে। এরপর আমরা আপনাদের মতামতগুলো সরকারের কাছে প্রতিবেদন আকারে জমা দেব।’
মতবিনিময় সভায় বিভাগের শতাধিক সাংবাদিক অংশ নেন। এ সময় সংস্কার কমিশনের সদস্য আকতার হোসেন খান, কামরুনেসা হাসান, জিমি আমীর, টিটু দত্তগুপ্ত ও আবদুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসলাম অনুসারে সন্তানের আধুনিক নাম
সন্তানের নাম দেওয়া একটি পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ দায়িত্ব। ইসলামে নামকরণ শুধু একটি সামাজিক রীতি নয়, বরং এটি সন্তানের পরিচয়, যা চরিত্র ও ভবিষ্যৎ জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
আধুনিক যুগে মুসলিম পরিবারগুলো সন্তানের নাম রাখার ক্ষেত্রে এমন নাম খুঁজছে, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, অথচ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক, সংক্ষিপ্ত ও শ্রুতিমধুর।
ফলে ইসলামের আলোকে মুসলিম সন্তানের নামকরণের গুরুত্ব, আধুনিক নামের প্রবণতা এবং কীভাবে ইসলামি ও আধুনিকতার সমন্বয় ঘটানো যায়, তা নিয়ে আলোচনার দাবি রাখে।
ইসলামে নামকরণের গুরুত্বইসলামে সন্তানের নামকরণ একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দায়িত্ব। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক সন্তানের বেলায় পিতার দায়িত্ব হলো তাকে একটি সুন্দর নাম দেওয়া এবং তাকে ভালো শিক্ষা দেওয়া।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৯৪৯)
নাম শুধু একটি পরিচয় নয়, বরং এটি সন্তানের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইসলামে নামের অর্থের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। রাসুল (সা.) নিজে কিছু নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন, যদি সেগুলোর অর্থ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বা অশোভন হতো। তিনি ‘হারব’ (যুদ্ধ) নামটি পরিবর্তন করে ‘হাসান’ (সুন্দর) রেখেছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,১৯০)
এটি প্রমাণ করে যে নামের অর্থ সুন্দর, ইতিবাচক ও ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
আরও পড়ুনদস্তরখানের নামে সুরার নাম০৪ মার্চ ২০২৫রাসুল (সা.) নিজে কিছু নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন, যদি সেগুলোর অর্থ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বা অশোভন হতো। তিনি ‘হারব’ (যুদ্ধ) নামটি পরিবর্তন করে ‘হাসান’ (সুন্দর) রেখেছিলেন।আধুনিক নামকরণের প্রবণতাআধুনিক যুগে মুসলিম সমাজে নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু নতুন প্রবণতা লক্ষ করা যায়। মা–বাবা এখন এমন নাম পছন্দ করেন, যা সংক্ষিপ্ত, উচ্চারণে সহজ এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্য। যেমন ‘আয়ান’, ‘ইয়াসির’, ‘জায়ান’, ‘নুয়াইরা’, ‘আদিয়া’ ইত্যাদি নাম বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই নামগুলোর অর্থও ভালো, যেমন ‘আয়ান’ অর্থ ‘ঐশী উপহার’ এবং ‘নুয়াইরা’ অর্থ ‘আলো’ বা ‘দীপ্তি’।
আধুনিক নামের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো প্রায়ই লিঙ্গ-নিরপেক্ষ। ‘রায়ান’, ‘ইমান’ বা ‘নূর’–এর মতো নাম ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলা, আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষার শব্দের পাশাপাশি কিছু নাম স্থানীয় সংস্কৃতি থেকেও গৃহীত হচ্ছে, যা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।
ইসলামি ও আধুনিক নামের সমন্বয়ইসলামি নাম বলতে শুধু আরবি নাম বোঝায় না। ইসলাম যেকোনো ভাষার নাম গ্রহণ করতে উৎসাহিত করে, যতক্ষণ তা অর্থপূর্ণ ও ইতিবাচক। শায়েখ উসাইমিন (রহ.) বলেন, ‘নাম যেকোনো ভাষার হতে পারে, যদি তা শরিয়াহের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় এবং অর্থে কোনো নেতিবাচকতা না থাকে।’ (ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দারব, পৃষ্ঠা: ১২৫, দারুল ইফতা প্রকাশনী: ১৯৯৮)
আধুনিক নামকরণে এই নীতি মেনে চলা যায়। যেমন ‘তাহা’ (কোরআনের সুরার নাম), ‘ইলিয়াস’ (একজন নবীর নাম), ‘আমিনা’ (রাসুলের মায়ের নাম) ইত্যাদি নাম ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আধুনিক পরিবেশেও গ্রহণযোগ্য।
নাম যেকোনো ভাষার হতে পারে, যদি তা শরিয়াহের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় এবং অর্থে কোনো নেতিবাচকতা না থাকে।শায়েখ সালেহ উসাইমিন (রহ.), ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দারবএ ছাড়া ‘জায়নাব’, ‘ফাতিমা’, ‘আলি’, ‘ওমর’ ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী নাম আজও জনপ্রিয় এবং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে।
আরও পড়ুনপাপ থেকে প্রত্যাবর্তন করার নাম তওবা২৮ জানুয়ারি ২০২৫নামকরণে সতর্কতানামকরণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।
প্রথমত, নামের অর্থ যেন ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। কোনো দেব-দেবীর নাম বা শিরকের সঙ্গে সম্পৃক্ত নাম ব্যবহার করা উচিত নয়।
দ্বিতীয়ত, জটিল বা উচ্চারণে কঠিন নাম এড়িয়ে চলা ভালো।
তৃতীয়ত, নামটি এমন হওয়া উচিত, যা সন্তানের জন্য গর্বের এবং সমাজে তার পরিচয়কে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে।
অনেক মা–বাবা পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে এমন নাম রাখেন, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ‘ডায়ানা’র মতো নাম অর্থের দিক থেকে সুন্দর হলেও ইসলামি পরিচয়ের সঙ্গে সব সময় মানানসই না–ও হতে পারে। এই ক্ষেত্রে মা–বাবাকে নামের অর্থ ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
মা–বাবার করণীয় অনেক মা–বাবা পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে এমন নাম রাখেন, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।ইসলামে নামকরণের জন্য কিছু নির্দেশনা রয়েছে।
প্রথমত, সন্তান জন্মের পর সপ্তম দিনে নামকরণ করা সুন্নাহ। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৮৩২)
এই সময়ে আকিকা দেওয়ার রীতিও রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, নাম রাখার আগে পরিবারের সদস্য, আলেম বা বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
তৃতীয়ত, নামটি এমন হওয়া উচিত, যা সন্তানের জন্য আত্মবিশ্বাসের উৎস হয়।
আধুনিক যুগে নামকরণের ক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, বই ও অ্যাপের সাহায্য নেওয়া যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ, অনেক সময় ভুল অর্থ বা অপ্রমাণিত তথ্য দেওয়া হতে পারে।
নাম শুধু একটি শব্দ নয়, এটি সন্তানের পরিচয়, চরিত্র ও সমাজে তার অবস্থানের প্রতিফলন। তাই মা–বাবার উচিত এমন নাম নির্বাচন করা, যা ইসলামি মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও শ্রুতিমধুর।
আরও পড়ুন‘আল-ওয়াহিদ’ আল্লাহর অনন্য নাম২৩ জুন ২০২৫