শুল্ক-অশুল্ক বাধাই পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যে বড় চ্যালেঞ্জ
Published: 13th, January 2025 GMT
বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উচ্চ শুল্ক ও অশুল্ক বাধাকেই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন পাকিস্তানি ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বিপুল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। সেটি কাজে লাগাতে হলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্কহার কমানোর পাশাপাশি ভিসা সহজীকরণ, ঢাকা-করাচি আকাশপথে সরাসরি উড়োজাহাজের চলাচল চালুসহ অশুল্ক বাধাগুলোও দূর করতে হবে।
রাজধানীর একটি হোটেলে আজ সোমবার বাংলাদেশ-পাকিস্তান বিজনেস ফোরামে এ কথাগুলো বলেন সে দেশের সফররত ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত এ সভায় দেশি ব্যবসায়ীরাও উপস্থিত ছিলেন। সভায় এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো.
পাকিস্তানের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দেন দ্য ফেডারেশন অব পাকিস্তান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফপিসিসিআই) সভাপতি আতিফ ইকরাম শেখ। তাঁর সঙ্গে আরও ছিলেন এফপিসিসিআইয়ের সহসভাপতি সাকিব ফায়াজ মাগুন ও ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমদ মারুফ।
স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। তবে কৃষি, বস্ত্র, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তিসহ সম্ভাবনাময় অনেক খাত এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব।
হাফিজুর রহমান জানান, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাকিস্তানে ৬ কোটি ১৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এর বিপরীতে সে দেশ থেকে বাংলাদেশে ৬২ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়। তার মানে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে।
এফপিসিসিআইয়ের সভাপতি আতিফ ইকরাম শেখ বলেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে বিপুল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে কৃষি, ওষুধ, চামড়া, মেশিনারি, রাসায়নিক ও আইসিটি খাতে দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক যোগাযোগের সুবিধা কাজে লাগানো যেতে পারে। বাণিজ্য বাড়াতে অবকাঠামো, বন্দর ও লজিস্টিকস সক্ষমতা উন্নয়নেও জোর দেন তিনি।
পাকিস্তানি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলটি এর আগে গত রোববার বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকের কথা উল্লেখ করে এফপিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাকিব ফায়াজ মাগুন বলেন, ‘বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন অশুল্ক বাধা দূর করার বিষয়ে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। এ জন্য আমরা খুশি।’
পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমদ মারুফ বলেন, ‘উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে ঢাকা-করাচির মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট বা উড়োজাহাজের চলাচল শুরু করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি, এই বছরের মাঝামাঝি সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে। বাংলাদেশের কোনো বিমান সংস্থা কিংবা পাকিস্তানের যে কেউ প্রথমে ফ্লাইট চালু করতে পারে।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ ওয়াসিফ, বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাওসার চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ও সহায়ক কমিটির সদস্য গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।
শেষে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য শক্তিশালী করতে বিজনেস কাউন্সিল গঠনের বিষয়ে এফবিসিসিআই ও এফপিসিসিআই একটি সমঝোতা চুক্তি সই করে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে