বলিউডের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নেহা কাক্করের পরনে শাড়ি। ভারতীয় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। আর অঝোরে কাঁদছেন এই শিল্পী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েপড়া একাধিক ছবিতে এমন দৃশ্য দেখা যায়; যা এখন রীতিমতো ভাইরাল।

গত কয়েক দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে নেহা কাক্করের এই ছবি। ছড়িয়ে পড়া ছবির ক্যাপশনে বলা হয়েছে— “নেহা কাক্করের ক্যারিয়ারের করুণ সমাপ্তি! খবরটি সমস্ত ভারতীয় মানুষের কাছে বড় একটি ধাক্কা।” পাশাপাশি জানানো হয়, একটি ট্রেডিং কেলেঙ্কারি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে নেহা কাক্করকে।

বিষয়টি নিয়ে চর্চা চলছে অন্তর্জালে। নেটিজেনদের অনেকে এই খবরে হতবাক হয়েছেন। অনেক তার গ্রেপ্তারের খবর ও ছবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ভাইরাল ছবি ও খবরের সত্যতা কী?   

আরো পড়ুন:

‘কহো না পেয়ার হ্যায়’ সিনেমার রজত জয়ন্তী: স্মৃতির ডায়েরি খুললেন হৃতিক

রাহুল গান্ধীকে ‘গাধা’ বললেন পরেশ রাওয়াল!

দ্য ফ্রি প্রেস জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নেহা কাক্করের গ্রেপ্তারের খবরটি সত্য নয়। আর যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে তা-ও কৃত্রিমভাবে বানানো। মূলত, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ছবিটি। আরেকজন নারীকে গ্রেপ্তারের ছবি সম্পাদনা করে নেহার মুখ বসানো হয়েছে।

নেহার গ্রেপ্তারের খবর ও ছবি ছড়িয়ে পড়লেও এখনো নীরবতা ভাঙেননি এই শিল্পী কিংবা তার টিম।

গত বছর ভারতের একঝাঁক তারকার ডিপফেক ভিডিওর শিকার হন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তারকা অভিনেত্রীদের অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে অন্তর্জালে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ তালিকায় রয়েছেন— আলিয়া ভাট, রাশ্মিকা মান্দানা, সানি লিওন, আনুশকা শেঠি প্রমুখ।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

কাছের মানুষ পাশে থাকলে কঠিন যুদ্ধেও জেতা যায়, তার প্রমাণ বিসিএস ক্যাডার মালিহা

মালিহার মা আসমা বেগমের কথা না বললেই নয়। জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার কলমা গ্রামে। ঢাকায় বড় হয়েছেন। বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।

১৯৯৩ সালে জগন্নাথ কলেজে (সে সময় কলেজ ছিল, ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হয়) ভর্তি হন। এর এক বছর পর তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।

একঝটকায় ঢাকার শিক্ষার্থী থেকে ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বাকড়ি গ্রামের গৃহবধূ হয়ে গেলেন। আসমা বেগমের খুব ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করার।

স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার পাট চুকে গেল। চাকরির স্বপ্নের সমাপ্তি। মালিহা তাঁর মাকে সারাটা জীবন কেবল অন্যের জন্য করে যেতে দেখেছেন। বিনিময়ে মা পেয়েছে কেবল উপেক্ষা আর অবহেলা।

নতুন জীবন নতুন সংগ্রাম

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরই বিয়ে হয়ে যায় মালিহার। বিয়েতে মালিহার মায়ের কেবল একটা অনুরোধ ছিল পাত্র ও তাঁর মা-বাবার কাছে—তাঁর কন্যার লেখাপড়ার যাতে কোনো ত্রুটি না হয়। বিয়ের পর মায়ের ইচ্ছায়, স্বামীর পরামর্শে মালিহা ভর্তি হন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেনারি কলেজে।

মালিহা এই কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী। তখন কলেজটি ছিল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। বর্তমানে কলেজটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

২০১৯ সালের মার্চে ইন্টার্ন চলাকালীন মা হন মালিহা। মা হয়েও ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর সময় নষ্ট না করে শুরু করেন চাকরির পড়াশোনা।

সারা জীবন কেবল চেয়েছি মায়ের কষ্টের ভাগ নিতে। কী করলে আমার মা একটু স্বস্তি পাবে। আমার স্বামী সব সময় আমার পাশে ছিলেন। আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বলেছেন, “তুমি কেবল আবেগ নিয়ে কখনোই মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারবা না। এ জন্য তোমার পায়ের নিচের মাটি শক্ত হতে হবে।” আমাকে আরও বলত, “আমার মতো স্টুডেন্টের যদি সরকারি চাকরি (ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার) হয়, তোমার কেন হবে না। তুমি আমার চেয়ে বেশি যোগ্য, বেশি পরিশ্রমী, তোমার আরও ভালো চাকরি হবে।”মুলকে সাদ মালিহা, লাইভস্টক ক্যাডার, ৪৪তম বিসিএসযে কান্না আনন্দের

মালিহার মামি শিক্ষা ক্যাডার হন। সে সময় থেকে তাঁর রঞ্জু মামা তাঁকে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। মালিহা ২০২০ সাল থেকে চাকরির পড়াশোনা শুরু করেন। ২০২৫ সালে এসে প্রথম সরকারি চাকরি পান। যোগ দেন সরকারি ব্যাংকের অফিসার পদে।

এর কিছুদিন পর ৩০ জুন ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করে। তবে তখন ক্যাডার পদ আসেনি মালিহার। বেশ হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন।

লাইভস্টক ক্যাডারে ৬৮জন ‘রিপিট ক্যাডার’ ছিল। সেসব পুনর্মূল্যায়ন করে আবার যখন ৬ নভেম্বর নতুন ফল প্রকাশ করা হয়, তাতে নাম আসে মালিহার। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় তাঁর।

মালিহার মা আসমার নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন যেন মেয়ের ভেতর দিয়ে সত্য হয়ে ধরা দেয়। মালিহা যখন চাকরির সুখবর জানাতে মাকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে ‘আম্মুউউউ’ বলে একটা চিৎকার দিয়েছেন, মা আসমা বেগম ভয়েই অস্থির! নিশ্চয়ই মেয়ের কোনো বিপদ হয়েছে। এরপরই শুনলেন খবরটা। মা-মেয়ে দুজনেই ফোনের দুই পাশে কাঁদছেন, যে কান্না আনন্দের, প্রাপ্তির, সফলতার।

মামির শাড়ি আর ব্লেজার পরে বিসিএসের ভাইভা দিয়েছেন মালিহা

সম্পর্কিত নিবন্ধ