ইলিশ নিয়ে হা-হুতাশের শেষ নেই। নিম্ন আয়ের মানুষ তো দূরে, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্তেরও প্রায় নাগালের বাইরে জলের এই রুপালি শস্য। চড়া দামের কারণে অনেকে ইলিশের স্বাদ ভুলতে বসেছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীবাসীকে কম দামে ইলিশের স্বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। সংস্থাটি ৪৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি করবে কেজিপ্রতি ৬০০ টাকায়।

রোববার দুপুরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর এই ইলিশ মাছ কারওয়ান বাজারের বিএফডিসি ভবনের মৎস্য বিতানে বিক্রি করা হবে। কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

বিএফডিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) সুরাইয়া আখতার জাহান জানিয়েছেন, রোববার উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাছের মজুত থাকা সাপেক্ষে এই বিক্রয় কার্যক্রম চলবে।

বিএফডিসির পরিচালক অদ্বৈত চন্দ্র দাস বলেন, এই লটে বিক্রয়যোগ্য ইলিশ মাছের পরিমাণ ৮৫০ কেজি। ক্রেতারা আগে এলে আগে পাবেন। আমরা ধারণা করছি, এক সপ্তাহের মধ্যে সব মাছ বিক্রি হয়ে যাবে।

বিএফডিসির তথ্য অনুসারে, সাশ্রয়ী মূল্যে সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘ইলিশ মাছের সরবরাহ ও মূল্য শৃঙ্খলে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের জন্য হ্রাসকৃত মূল্যে ইলিশ মাছ বিক্রয়’ সেবা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। ইলিশ মাছ বিপণন কর্মসূচি বাস্তবায়নে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন এবং বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন। এই কার্যক্রমের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়—ইলিশ কিনে হোন ধন্য’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনাম চৌধুরী বলেন, মানুষকে কম দামে ইলিশ খাওয়াতে কোনো প্রফিট (লাভ) ছাড়া এই কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছি। পরীক্ষামূলক ভাবে স্বল্পমূল্যে ইলিশ মাছ বিক্রিতে সফলতা পেলে পরে আমরা আরও বড় উদ্যোগ নেব। এই ইলিশ মাছ ফিশিং জাহাজের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগর থেকে ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এফড স মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।

ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।

শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।

পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’

ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ