দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ নান্দাইল উপজেলার চর ভেলামারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুই-তৃতীয়াংশ ঘর। এসব ঘর বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। জমি ও বাড়ি আছে এমন লোকজনও বরাদ্দ পেয়েছেন। যে কারণে আশ্রয়ণের অনেক ঘর শুরু থেকেই তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। আবার যারা বসবাস করছেন, তাদের অনেকের নামে বরাদ্দ নেই। রক্ষণাবেক্ষণ ও কর্মের ব্যবস্থা না থাকার কারণেও চলে গেছেন অনেকে।
চর ভেলামারী আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নান্দাইল উপজেলার চর বেতাগৈর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বপাড়ে অবস্থিত। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে নির্মিত এ প্রকল্পে রয়েছে ৭৩টি ঘর। প্রতিটি ঘর তৈরিতে ব্যয় ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এসব ঘরে গৃহহীন, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী ও অসহায় পরিবারের বসবাস করার কথা। ২০২২ সালের ২১ জুলাই প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়। ওইদিন প্রকল্পের আঙিনায় জেলা ও বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ঘরের দলিল ও চাবি হস্তান্তর করা হয়। তদারকির অভাবে প্রকল্পের বাসিন্দারা নানা ধরনের দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
সরেজমিন প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, ৭৩টি ঘরের মধ্যে মাত্র ২৫টিতে লোকজন বসবাস করছেন। বাকি ঘরগুলোর দরজায় তালা দেওয়া। যেসব ঘরে লোকজনের বসবাস আছে, সেসব ঘরের মধ্যে আবার অনেকটির বরাদ্দ বসবাসকারীদের নামে নয়। যাদের নামে বরাদ্দ, তারা শুরু থেকেই এখানে থাকেন না।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আশ্রয়ণের বাসিন্দারা জানান, এসব ঘরের প্রকৃত মালিক এখানে বসবাস করেন না। তাদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা ভালো, গ্রামে তাদের নিজস্ব বাড়িঘর ও জমিজমা রয়েছে। 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৭৩ নম্বর ঘরের বরাদ্দ কামাল হোসেনের নামে। গ্রামে তাঁর জমিজমা ও পাকা ঘর রয়েছে। হানিফার নামে বরাদ্দ ৪৩ নম্বর ঘর, গ্রামে তাঁর বাড়িসহ ২ একর জমি রয়েছে।
প্রকল্পে বসবাসকারী তাহের মোড়ল জানান, প্রকল্পের আশপাশে কাজ করে খাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করার প্রতিষ্ঠান। তা ছাড়া বাড়ি, জমিওয়ালারাও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে বরাদ্দ নিয়েছেন। তাদের অনেকেই এখানে বসবাস করছেন না।
আশ্রয়ণের বাসিন্দা আছির উদ্দিনের ভাষ্য, তাঁর নামে কোনো ঘর বরাদ্দ নেই। বিউটির নামে বরাদ্দ ঘরে থাকেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যারা থাহে না তারা ঘর পাইছে, আমি থাহি আমার নামে ঘর নাই।’ আবদুল কুদ্দুস নামে একজন জানান, তাঁর নামেও ঘর বরাদ্দ নেই। শাকিল নামে একজনের ঘরে থাকেন তিনি। শাহিনুর জানান, জসিম উদ্দিনের ৬ নম্বর ঘরে বসবাস করেন তিনি। যার নামে বরাদ্দ, সেই জসিম উদ্দিনকে কখনও দেখেননি তারা।
জানা গেছে, প্রকল্পের শুরুতে ১১টি নলকূপ বসানো হয়েছিল। প্রতিটি নলকূপ বসানোর পর থেকেই বিকল হয়ে পড়ে আছে। নিজেদের প্রচেষ্টায় দু-একটি নলকূপ চালু রাখা সম্ভব হলেও তা থেকে ঘোলা পানি উঠছে। রাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পে অপ্রতুল চারটি বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা থাকলেও এখন একটিও জ্বলে না। এ কারণে সন্ধ্যার পর সেখানে ভূতুড়ে অবস্থার সৃষ্টি হয়। 
প্রকল্পের সভাপতি নাসির উদ্দিনের দাবি, একটি ড্রেন নির্মাণ ও নলকূপগুলো সচল করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনেকবার আবেদন করছেন; কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন জানান, প্রকৃত ভূমি ও গৃহহীন লোকজন বরাদ্দ পায়নি বলেই ঘরগুলো তালাবদ্ধ থাকে। জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বলেন, আশ্রয়ণের খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র ব যবস থ উপজ ল অবস থ করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল

ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।

বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।

প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে

জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা

অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

সাড়ে চারটায় জামায়াত

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলন

জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।

একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।

আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ