জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতার ঘোষকই নন, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সর্বাধিনায়কও : মামুন মাহমুদ
Published: 20th, January 2025 GMT
বিএনপির নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেছেন, ১৯৭১ এর ২৬মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনা করে ১২ই এপ্রিল এজে ওসমানী স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মেজর জিয়াউর রহমানই ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম সর্বাধিনায়ক।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র প্রতিষ্ঠাতা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সিদ্ধিরগঞ্জের নয়াআটি মুক্তিনগরে একটি পার্টি সেণ্টারে অধ্যাপক মামুন মাহমুদের নিজ উদ্যোগে এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
এ সময় অধ্যাপক মামুন মাহমুদ আরও বলেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন গণমানুষের নেতা।
দেশকে কিভাবে ভালোবাসতে হয়, কিভাবে দেশ প্রেমিক হতে হয়, তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেখিয়ে গেছেন। দেশের ক্লান্তিলগ্নে বারবার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরিবার দাঁড়িয়েছে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধেও জিয়াউর রহমানই দাঁড়িয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর দেশ যতবার সংকটে পড়েছে জিয়া পরিবার দাঁড়িয়েছে, যত স্বৈরাশাসক তৈরি হয়েছে, তাদের পতনেও জিয়া পরিবার দাঁড়িয়েছে, জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রাম করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতেও জিয়া পরিবার দাঁড়িয়েছে।
তাই বিএনপির যারা জিয়ার আদর্শ বিশ্বাস করেন, তারা ঐক্যবদ্ধ থাকেন। স্বৈরাচারের দোসরদের আশ্রয় দিয়ে কেউ নিজের পায়ে কুড়াল মারবেন না। যারা স্বৈরাচারের দোসরদের আশ্রয় দিবে তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না। যারা স্বৈরাচারদের আশ্রয় দিবে তাদের রক্তের সাথে বেইমানি করা হবে।
তিনি বলেন, সেনা বাহিনীতে বিদ্রোহ করলে কি পরিণতি হয়, তা জেনেও জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ করে বাংলাদেশের জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। পাকিস্তান সরকার যেন যে যুদ্ধকে সেনা বিদ্রোহ বলে দমন করার সুযোগ না পায়, তাই যুদ্ধকে সামরিক ও রাজনৈতিক রূপ দিয়ে সারাবিশে^র স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য, নিজের চিন্তা চেতনা থেকে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
জিয়াউর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করার পরামর্শ দিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সৎভাবে জীবন যাপন করা সবচেয়ে উত্তম। অবৈধ পথে কেউ অর্থ কামিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করার চেষ্টা করবেন না।
তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনে আবু সাঈদ যেভাবে রাজপথে পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক টান করে দাঁড়িয়ে পড়ে ছিলেন, ঠিক ৭১ সালেও জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ প্রকৃত সত্য গোপন করে তাদের মনগড়া ইতিহাস লিখেছে। জিয়াউর রহমানকে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
জিয়ার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছে। কিন্তু মহান আল্লাহ কাউকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করেন না। বিএনপিকে ভেঙে দেয়ার জন্য স্বৈরাচার হাসিনা সরকার বিনা কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে ৬ বছর কারাবন্দি করে রেখেছে তাকে চিকিংসাও পর্যন্ত করতে দেয়নি।
আলোচনা সভা শেষে দোয়া মাহফিলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয় এবং বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ূ কামনা করে, দেশবাসী সকালের মঙ্গল কামনায় দোয়া করা হয়। দোয়া শেষে উপস্থিতিদের মাঝে তবারক বিতরণ করা হয়।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ পর ব র দ র জন য ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
বিজয় ও বিপর্যয়
শুনেছি, বিপ্লবের পরে নাকি প্রতিবিপ্লব ঘটে। কিন্তু বিজয়ের পরে যে বিপর্যয় আসে, সে তো নিজের চোখেই দেখলাম। কত রক্ত, কত আত্মত্যাগের বদলে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো! সে তো কেবল এক দিনে নয়। চব্বিশ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম আমাদের ধীরে ধীরে প্রস্তুত করেছিল বিজয়ের এই ক্ষণটির জন্যে। পঁচিশে মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর আক্রমণ সেই সংগ্রামের শেষ অধ্যায় রচনা করেছিল বিদ্যুৎগতিতে। আজ তো মুছেই দেওয়া হচ্ছে চব্বিশ বছরের সংগ্রামের সেই ইতিহাস। মনে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটা সামরিক সংঘাতের বিষয়। ভ্রাতৃপ্রতিম পাকিস্তানি সেনাদের স্বদেশে পাঠিয়ে দিয়ে এই ভূখণ্ডের কর্তৃত্ব দখল করাই ছিল বুঝি এর একমাত্র উদ্দেশ্য।
ওই চব্বিশ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাসকে অপ্রাসঙ্গিক করে না ফেললে ১৯৭২ সালের সংবিধানে গৃহীত রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিগুলো নষ্ট করা যেত না। বাঙালি জাতীয়তাবাদ আবার কী, ধর্মনিরপেক্ষতা তো ভারতীয় ধারণা, সমাজতন্ত্র তো রুশ প্রতীতি—ওসব আবার কেন? গণতন্ত্র চাই বটে, কিন্তু তাও কি যখন-তখন? গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যেই তো জারি হয় সামরিক শাসন—একবার ফিরিয়ে যদি দেখা যায় জনসাধারণ উপযুক্ত হয়নি গণতন্ত্রলাভের, তবে আবার দিতে হয় সামরিক শাসন। যাঁরা সামরিক শাসন জারি করেন, তাঁদের কোনো উদ্দেশ্য থাকে না ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার। যত শীঘ্রসম্ভব তাঁরা ফিরে যেতে চান নিজের কাজে—শুধু আম-জনতার মঙ্গলের জন্যে তৈরি করেন একটি রাজনৈতিক দল, জনগণের ইচ্ছা পূরণ করতেই কেবল রয়ে যান শাসনক্ষমতায়। তাঁরা যখন আবির্ভূত হন, জনসাধারণ হাততালি দিয়ে অভ্যর্থনা জানায় তাঁদের, রাজনীতিবিদদের একটা অংশ দৌড়ে গিয়ে অভিনন্দন জানায়—খুদকুঁড়ো কিছু পাওয়ার আশায়। তারপর একদিন অতিষ্ঠ মানুষ অনেক রক্ত ঝরিয়ে উচ্ছেদ করে শাসকদের। অথবা শাসকদের নিজেদের দ্বন্দ্বে রক্ত ঝরে আরও, ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। আবার মানুষের উত্থান, আবার গণতন্ত্রের ফিরে আসা।
আজ তো মুছেই দেওয়া হচ্ছে সেই সংগ্রামের সেই ইতিহাস। মনে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটা সামরিক সংঘাতের বিষয়। ভ্রাতৃপ্রতিম পাকিস্তানি সেনাদের স্বদেশে পাঠিয়ে দিয়ে এই ভূখণ্ডের কর্তৃত্ব দখল করাই ছিল বুঝি এর একমাত্র উদ্দেশ্য।আনিসুজ্জামান (১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭—১৪ মে ২০২০)