সপ্তমবারের মতো ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ভোটের দিন যাতে কেউ আপনার অধিকার হনন করতে না পারে, কেউ যাতে ভোটকেন্দ্র দখল করতে না পারে, ভোটের বাক্স কেড়ে নিতে না পারে সেজন্য ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

সোমবার দুপুরে সাভারে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের অধিকার রক্ষার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা ভোটকেন্দ্র পাহারা দেব, আমরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ভোটকেন্দ্র দখল হতে দেব না। ভোটারদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে বলেন, ৫ আগস্টের বিপ্লব আমাদের একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগটা হচ্ছে নাগরিকদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ। ভোটের অধিকার কিন্তু প্রতিষ্ঠা হয়নি। এ বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি অপরচুনিটি পেয়েছি। এখন প্রতিষ্ঠার কাজটি করতে হবে আমাদের। এই প্রতিষ্ঠার কাজটা করতে প্রথম ধাপ হচ্ছে সুষ্ঠু ভোটার তালিকা। 

এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের ভোটের ট্রেন যখন যাত্রা করল, এ যাত্রার মধ্যে প্রথম কাজটা হলো ভোটারদের সঙ্গে নিতে হবে। আমরা অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে দেশবাসীকে পাশে চাই। আমরা দেশবাসীর সহযোগিতা নিয়ে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো। যেদিন মানুষ ভোট দিতে পারবে, বিনাদ্বিধায় ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে, সেদিন আমরা মনে করবো ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ইসি প্রধান বলেন, জাতীয় নির্বাচন হলো জাতীয় দায়িত্ব। যারা সরকারি চাকরি করে তারা সবাই জানেন। আমাদের সমাজের আপামর জনসাধারণের প্রতি আমার আপিল বেশি। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন এবং পুরো প্রক্রিয়াতে পদে পদে সহযোগিতা করুন। আপনারা নারী ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করুন, তারা যাতে ভোটের মূল্য বোঝে এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে তাদের সঙ্গে নিন। যাতে তারা ভোট দিতে পারে।

এসময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ, নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ ও তাহমিদা আহমদ এবং আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি একেএম আওলাদ হোসেনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ