দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আমার দেশের যে লড়াই, সম্পাদক হিসেবে আমার যে লড়াই সেটা অব্যাহত থাকবে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত মাহমুদুর রহমানে বিরুদ্ধে করা আপিলের মামলায় শুনানি শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান।

ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ তারেক এজাজের আদালত আপিলের রায়ের তারিখ আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেছেন।

মাহমুদুর রহমান বলেন, “আমরা যদি প্রথম দিন থেকে প্রতিবাদ করতাম তাহলে ১৫ বছর ধরে এতো জুলুম, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হতো না। এভাবে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিল্লির কাছে বিসর্জন দেওয়া হতো না। জণগণের কাছে আমার আহ্বান, আর কোনো ফ্যাসিবাদী সরকারকে দেশে জায়গায় দেবেন না। সব ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই যেন অব্যাহত থাকে।”

তিনি বলেন, “মামলা যখন করা হয় তখন আমি জেলে বন্দি ছিলাম। এ মামলার সঙ্গে কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা নেই। এই মামলা করার সময় আমি পত্রিকা অফিসে বন্দি ছিলাম। পত্রিকা অফিস পুলিশ, র‍্যাব ঘিরে রেখেছিল। এটাতে প্রমাণিত হলো একটা রাষ্ট্র কতটা নির্মম হতে পারে মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করতে।” 

তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনার বিদায় হয়েছে। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আমার দেশের যে লড়াই, সম্পাদক হিসেবে আমার যে লড়াই সেটা অব্যাহত থাকবে। এই মামলাটি হয়েছিল শেখ হাসিনার ছেলেকে নিয়ে, এমন শতাধিক মামলা আমার বিরুদ্ধে আছে। শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপকে নিয়ে ৩৬টি মামলা রয়েছে। এরকম একটি মামলাতেই আমার ওপর হামলা করা হয়েছিল৷ যতদিন জীবিত আছি এই লড়াই চালিয়ে যাব।” 

মাহমুদুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের জনগণকে এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। যেন কোনো ফ্যাসিবাদ সরকারকে উঠতে দেওয়া না হয়। জনগণের প্রথম দিন থেকে প্রতিবাদ করা উচিত। আমরা যদি প্রথম দিন থেকে প্রতিবাদ করতাম তাহলে ১৫ বছর ধরে এতো জুলুম, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হতো না। ”

তিনি আরও বলেন, “আশা করি, এই রায়ে আমি ন্যায়বিচার পাবো। কারণ ফ্যাসিবাদের পতন ও বিচারবিভাগ স্বাধীন হয়েছে। ইতিপূর্বে ফ্যাসিবাদের উত্থানের পক্ষে বিচার বিভাগের ভূমিকা রয়েছে। এটা বারে বারে প্রমাণিত হয়েছে। পরবর্তীতে বিচার বিভাগের সহযোগিতায় ফ্যাসিবাদের উত্থান ঠেকানো গেছে। আমি আশাবাদী, আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাবো। ”

আসামি পক্ষের আইনজীবী তানভীর আহমেদ আল আমিন বলেন, “এ মামলায় কোনো সাক্ষ্য প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া রায় হয়েছে তা প্রসিকিউশন দেখাতে পারেননি। সাক্ষ্য প্রমাণ বাদেই বিচারক মাহমুদুর রহমানের ৭ বছরের কারাদণ্ডের রায় দেন। কোনো চাপে পড়ে বিচারক এ রায় দিয়েছেন তা উত্তর দিতে হবে। সাক্ষ্যের দিন বিচারক সাক্ষী জয়কে গাড়ি করে পৌঁছে দিয়েছেন। এতে বুঝতে বাকি থাকে না এটা পক্ষপাতিত্ব মূলক মামলা।”

এর আগে ২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৎকালীন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করে আপিল শর্তে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তার জামিনেরে আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ওই বছরের ৩ অক্টোবর পাঁচ দিন কারাভোগের পর তিনি জামিনে মুক্ত হন।

ঢাকা/মামুন/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা গর্বিত আমাদের এন্ড্রু কিশোর আছেন: কনকচাঁপা

বাংলা গানের প্রয়াত সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। ২০২০ সালের ৬ জুলাই পরপারে পাড়ি জমান এই কিংবদন্তি শিল্পী। জীবদ্দশায় ১৫ হাজারের বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। তার গাওয়া কালজয়ী গানের সংখ্যাও কম নয়। 

প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের সহশিল্পী ছিলেন শ্রোতাপ্রিয় সংগীতশিল্পী কনক চাঁপা। জুটি বেঁধে তারা বহু গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) এন্ড্রু কিশোরের জন্মদিন। এ উপলক্ষে প্রিয় শিল্পী, প্রিয় সহকর্মীকে স্মরণ করেছেন কনকচাঁপা।

আরো পড়ুন:

অস্কার মনোনীত অভিনেত্রী ডায়ান মারা গেছেন

ঋত্বিক ঘটক কীভাবে বিধু বিনোদ চোপড়ার নাম রাখেন?

কনকচাঁপা তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। লেখার শুরুতে এ শিল্পী বলেন, “শুভ জন্মদিন হে তরল সোনা মাখানো কণ্ঠের রাজা এন্ড্রু কিশোর দাদা! আমরা গর্বিত আমাদের এন্ড্রু কিশোর আছেন! আছেন বলছি এজন্য যে, শারীরিকভাবে না থাকলেও তিনি আগের চেয়েও আরো বেশি আপন ও প্রয়োজনীয় হয়ে আছেন।”

খানিকটা ব্যাখ্যা করে কনকচাঁপা বলেন, “একজন এন্ড্রু কিশোর! একটি কণ্ঠ, একটি গলিত সোনার নদী। সিনেমা হলে যখন তার গান বাজে তখন পুরো হল সেই আওয়াজ মেখে মেখে যায়। সে কণ্ঠ ভাসতে, ভাসাতে, কাঁদাতে, রোমান্সে ডুবাতে কোনো ডলবি সারাউন্ডেড সাউন্ড সিস্টেম লাগে না। তিনি যখন গান ‘ডাক দিয়াছে দয়াল আমারে’, তখন সমস্ত শ্রোতার এই দুনিয়ার উপর অভিমান জাতিগতভাবে উপচে পড়ে। আবার এই তিনিই যখন গান ‘তুমি আমার জীবন’ তখন সমস্ত পুরুষ ভাবেন, এভাবেই তো প্রিয়াকে বলতে চেয়েছি আমি!” 

সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কনকচাঁপা বলেন, “কিশোরদার সাথে গেয়েছি চৌত্রিশ বছর। তিনি আজ নেই অথচ এখনো তার কণ্ঠের প্রতি বিস্ময় আমার কাটেই না। মঞ্চে যখন গাই, আমি শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে যাই। বারবার ভাবি, এত সম্মান আমার কপালে ছিল। ও আল্লাহ! কতই তুমি দিলা আমায় বিনা কারণে!”

ফেসবুকে পোস্ট করা ছবিটির পেছনের গল্প জানিয়ে কনকচাঁপা বলেন, “এই ছবিটি ‘তোমাকে চাই’ সিনেমার গানের রেকর্ডিংয়ের। আমরা গাইছিলাম ‘আমার নাকেরই ফুল বলেরে তুমি যে আমার’ সিম্ফনি স্টুডিওতে।”

এন্ড্রু কিশোরের পাশাপাশি আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে স্মরণ করে কনকচাঁপা বলেন, “আমাদের ‘এন্ড্রু কিশোর-কনকচাঁপা’ নামের জুটি যে মহাশিল্পী নিজের ভালোবাসার তুলিতে এঁকেছেন, সেই জাতশিল্পী, স্বভাবকবি বাংলার সুরের জাদুকর আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ভাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনিও আমাদের মাঝে নেই। তাদের জন্য আমার শ্রদ্ধা অবিরাম।” 

১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। সেখানেই কেটেছে তার দুরন্ত শৈশব ও কৈশোর। বেঁচে থাকলে একাত্তর বছরে পা দিতেন এই শিল্পী।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ