সিনেমায় আর কখনও অভিনয় করব না: পড়শী
Published: 24th, January 2025 GMT
সাবরিনা পড়শী। গান ও অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। নিজের ইউটিউব চ্যানেল থেকে নিয়মিত গান প্রকাশ করছেন। গত বছর ইমরানের সঙ্গে তাঁর দ্বৈত গান ‘কথা একটাই’ আলোচিত হয়। সম্প্রতি নাটক প্রযোজনার ঘোষণাও দিয়েছেন। এ ছাড়া সম্প্রতি বিয়ের খবর প্রকাশ করে চর্চায় তিনি। সাম্প্রতিক ব্যস্ততা, বিয়ে ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে.
নাটকের শুটিং নাকি করছেন?
হ্যাঁ, পরিচালক হিমির একটি নাটকের শুটিং করছি। এতে আমার বিপরীতে রয়েছেন তৌসিফ আহমেদ। এটা তৌসিফ ভাইয়ের সঙ্গে আমার দ্বিতীয় কাজ। খুনসুটিমূলক প্রেমের গল্প নিয়ে নাটকটি। গভীর প্রেম বলতে যা বোঝায়, এটা তেমন নয়। বলতে পারেন মিষ্টি একটা প্রেমের গল্প। তবে আমার জন্য এই নাটকটি অনেক স্পেশাল। কারণ এতে আমার বিড়ালটাকে পরিচিত করাতে পারছি। আমার বিড়ালটা প্যারালাইজড, তাই ওর প্রতি আমি একটু ওভারকেয়ারে থাকি। পরিচালক যখন বললেন গল্পে আমার একটি বিড়াল লাগবে, আমার কাছে তখন মনে হয়েছে, আমি আমার বিড়ালটাকে এত ভালোবাসি, তাহলে অন্য বিড়াল কেন আনব। আমার বিড়াল নিয়েই শুটিং করি। এই জন্যই নাটকটি আমার কাছে একটু বেশিই স্পেশাল।
আপনি নাটক প্রযোজনা করবেন বলেও বলেছিলেন। প্রযোজনায় এই আগ্রহ কেন?
আমি যেহেতু আমার চ্যানেল নিয়ে কাজ করছি। গানে আমি আমি অনেক আগে থেকেই নিজেই প্রডিউস করছি। সে গানগুলো আমার চ্যানেলেই যায়। আমার কাছে মনে হয়ে গানের পাশাপাশি যেহেতু নাটকেও অভিনয় করছি, সেহেতু এখানেও লগ্নি করা যেতে পারে। সেই ভাবনা থেকেই প্রযোজনা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
নাটকটি আপনার চ্যানেলের জন্যই নির্মাণ করবেন?
হ্যাঁ, যেহেতু আমার প্রযোজিত নাটকে আমিই অভিনয় করব, তাই আমার চ্যানেলেই প্রচার করব। আমার চ্যানেলে যে অডিয়েন্স রয়েছেন, তারা আমার কাজই দেখতে চান। তারাও চাইছেন আমি যেন নিয়মিত নাটক করি এবং আমার চ্যানেলে তারা নাটক দেখার আগ্রহ দেখান। তাদের চাহিদার জন্যই নাটক প্রডিউস করার ব্যাপারটা মাথায় এসেছে। তাই আমার প্রযোজিত কাজ আমার অফিসিয়াল চ্যানেলেই দেব।
আপনি তো মূলত গানের মানুষ। শিল্পী হিসেবেই আপনার জনপ্রিয়তা। অভিনত্রী হওয়ায় সে জনপ্রিয়তা কি আরও বেড়েছে বলে মনে করেন?
হ্যাঁ, আমি মূলত গানের মানুষ। অভিনয় করার কারণে আমার ফ্যানফলোয়ারদের তো ভালোবাসা রয়েছেই, তাদের বাইরে অন্যদেরও ভালোবাসা পাচ্ছি। কোথাও গেলে আগে যেমন অনেকেই বলতেন, আপু আপনার ওই গানটা অনেক পছন্দ। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে নতুন বাক্য, অনেকে বলেন, আপু আপনার ওই নাটকটি আমার অনেক পছন্দ। জনপ্রিয়তা বেড়েছে কিনা বলতে পারব না, তবে সবার কাছে নাটক নিয়ে পজেটিভ কমেন্ট পাচ্ছি। সে জন্যই ব্যাক টু ব্যাক নাটকে অভিনয়ের আগ্রহ বোধ করছি।
শাকিব খানের সঙ্গে সিনেমাতেও দেখা গেছে আপনাকে। সিনেমায় আবার কবে দেখা যাবে?
সিনেমায় আমি অভিনয় করেছি বিষয়টি কিন্তু তা নয়। আমি আসলে শাকিব ভাইয়ার সঙ্গে একটা ছবিতে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। সেটাকে পুরোপুরি সিনেমায় অভিনয় বলা যাবে না। আমার কাছে সেটাকে মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের মতোই লেগেছে। সিনেমায় আর কখনও অভিনয় করব না। কারণ সেখানে অভিনয় করতে অনেক দক্ষ হতে হয়, সঙ্গে লাগে প্যাশনও। আমার দুটির কোনোটিই তেমন নেই। আর একটা বিষয়– সিনেমা করতে অনেক সময় দরকার। সেটা পাঁচ-ছয় মাস বা এক বছর। এত সময় আমি দিতে পারব না। আমি যেহেতু গানের মানুষ, তাই গানেই বেশি থাকতে চাই।
কিন্তু নাটকে তো অভিনয় নিয়মিত করছেন। এটার ব্যাখ্যা কী?
নাটকে অভিনয় আমার জন্য ঠিক আছে। কারণ নাটকে সময় কম লাগে। সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ দিন। এই সময়টা আমি দিতে পারব। কিন্তু সিনেমার জন্য এত সময় দেওয়া আমার জন্য কঠিন। পারব না-ই বলা যায়।
ক’দিন আগে আপনার বিয়ের খবর সামনে এলো। পরে সেটা আপনিও জানালেন...
আসলে আমি প্রফেশনাল ও ব্যক্তিগত জীবনটা একেবারে আলাদা রাখি। কিন্তু শুধু কাজের সময়তেই সবার সঙ্গে কথা বলি। বিয়ে তো একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। যেহেতু আমাদের এখনও বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়নি, তাই ঘটা করে জানানো হয়নি। বিয়ের আয়োজন নিয়ে আমারও তো কিছু স্বপ্ন ও পরিকল্পনা রয়েছে। তাই যখন আয়োজন করব, তখন সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর ইচ্ছে ছিল। এখন আমাদের সম্পর্ক যেভাবে আছে, সেটাই সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। সবার কাছে দোয়া চাই আমরা যেন বাকি জীবন একসঙ্গে চলতে পারি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পড়শ ম র জন য করব ন আপন র ন টকট করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।
আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা।
আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।
আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।
অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।
আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।
এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।
এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।
বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।
লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল