দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে একটি পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি পেয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন যাবত তিনজন আর পাঁচজনের কমিটিতে আটকে ছিল নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল।

এবার মহানগর যুবদলের একটি পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি হওয়ায় মহানগর যুবদলের আওতাধীন বিভিন্ন ইউনিট কমিটির নেতাকর্মীরা আশায় বুক বাঁধছেন ' এবার বুঝি তাদের একটা রাজনৈতিক পরিচয় মিলবে'। 

গত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীরা আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন কোনো পদ পদবি ছাড়াই। রাজপথের সেই ত্যাগী নেতাকর্মীরা তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে মহানগর যুবদলের আওতাধীন বিভিন্ন থানা, উপজেলা এবং ওয়ার্ড কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন।

তৃণমূলের মনের কথা বুঝতে পেরে খুব শীঘ্রই নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আওতাধীন বিভিন্ন থানা, উপজেলা এবং ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল। 

মুঠোফোনে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল বলেন, দেশব্যাপী সংগঠনকে গতিশীল করার কাজ চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের প্রতিটি ইউনিট কমিটিকে সুন্দর করে সাজানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আওতাধীন প্রতিটি থানা, উপজেলা এবং ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হবে ইনশাআল্লাহ।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে সজল বলেন, ইউনিট কমিটিতে বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের পরপর তিনটি কমিটির নেতারা তাদের আওতাধীন কোনো ইউনিট কমিটি গঠন করতে পারেননি। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দের এই ব্যর্থতার কারনে রাজনৈতিক পরিচয় পাননি যুবদলের শত শত নেতাকর্মী।

খোরশেদ-মন্তু কমিটি তিন বছর দায়িত্বে থেকেও ব্যর্থ হয়েছেন ইউনিট কমিটি দিতে। এরপর মন্তু-সজল কমিটিও ২ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন তারা পূর্বসূরিদের মতো ইউনিট কমিটি গঠনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। সর্বশেষ বর্তমান সজল-সাহেদ কমিটিরও দুই বছর হতে চললো, কমিটির দেখা পাননি মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীরা।

গত তিন কমিটির নেতৃত্বে থাকা নেতাদের উদাসিনতা ও কমিটি বানিজ্যের কারনে তৃণমূল পর্যন্ত নেতৃত্বের বিস্তার ঘটাতে পারেননি মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীরা। তাছাড়া কোনো রাজনৈতিক পরিচয় না থাকার পরেও জীবন বাজি রেখে আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন তারা। তাই অবিলম্বে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আওতাধীন ইউনিট কমিটিগুলো ঘোষনার দাবি জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

সূত্রে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আওতায় রয়েছে সদর, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এবং বন্দর উপজেলা ইউনিট। রয়েছে পাঁচটি ইউনিয়ন এবং সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড কমিটি। এতগুলো কমিটির মধ্যে মাত্র দুটি ইউনিয়ন কমিটি ঘোষনা করেছে বর্তমান মহানগর কমিটির নেতারা। বাকি ইউনিটগুলোতে দীর্ঘদিন কোনো কমিটি নেই।

মহানগর যুবদলের কমিটিতে বারবার রদবদল হলেও এসব ইউনিট কমিটির পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মনের আশা আর পূরণ হয়না। অনেক নেতাকর্মী হতাশ হয়ে যুবদলের রাজনীতি ছেড়ে বিএনপির মূল দলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে গেছেন।

বাকি যারা দীর্ঘদিন যাবত একটি রাজনৈতিক পরিচয়ের আশায় রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তাদের সকলের একটাই দাবি আর তাহলো যত দ্রুত সম্ভব ইউনিট কমিটিগুলো গঠন করে সংগঠনকে আরো গতিশীল করা এবং দীর্ঘদিনের কমিটি খড়া ঘুচিয়ে তৃণমূলের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে দেয়া।

সূত্র মতে, ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে সভাপতি, মমতাজ উদ্দিন মন্তুকে সাধারণ সম্পাদক, মনোয়ার হোসেন শোখনকে সহসভাপতি, সাগর প্রধানকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রশিদুর রহমান রশোকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

সেই আংশিক কমিটি ঘোষণার প্রায় পাঁচ মাস পর ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের ২০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেই কমিটি বিলুপ্ত করে যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদ।

২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর ঘোষনা করা হয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সুপার ফাইভ আহবায়ক কমিটি। মমতাজউদ্দিন মন্তুকে আহবায়ক আর মনিরুল ইসলাম সজলকে সদস্য সচিব করে ঘোষনার প্রায় দুই বছর এই পাঁচজনেই আটকে ছিলো মহানগর যুবদল।

এই সময়ের মধ্যে মহানগর যুবদল নিজেদের কমিটি পূর্নাঙ্গ করতে পারেনি, পারেনি কোনো ইউনিট কমিটিও ঘোষনা করতে। তাই নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের ব্যানারে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে আসা নেতাকর্মীদের কারো কোনো পদ পদবী বা রাজনৈতিক পরিচয় ছিলো না।

২০২৩ সালের ২৯ আগষ্ট মনিরুল ইসলাম সজলকে আহবায়ক, সাগর প্রধানকে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও সাহেদ আহমেদকে সদস্য সচিব করে ঘোষনা করা হয় মহানগর যুবদলের তিন সদস্যের আহবায়ক কমিটি।

এই কমিটিও গত দেড় বছরে ইউনিট কমিটিগুলি গঠন করতে পারেনি। এর ফলে নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়াই জীবন বাজি রেখে লড়াই করে গেছেন।

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: য বদল ন র য়ণগঞ জ কম ট র ন ত র কম ট ক কম ট সদস য উপজ ল র জপথ গঠন ক

এছাড়াও পড়ুন:

কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ

ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না। 
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস চালু হচ্ছে ১০ মাস পর
  • অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত
  • আজমির ওসমান বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার মাসুম প্রকাশ্যে. আতঙ্ক
  • মে দিবসের সমাবেশকে সফল করতে মহানগর বিএনপির মতবিনিময় সভা 
  • নারায়ণগঞ্জে বালক (অনূর্ধ্ব-১৫) ফুটবল প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণের উদ্বোধন
  • নারায়ণগঞ্জে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে তরুণের মৃত্যু
  • নারায়ণগঞ্জের কদম রসুল সেতুর সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখ পুনর্নির্ধারণের দাবিতে স্মারকলিপি
  • জেলা প্রশাসককে ২৪’র শহীদদের স্মারক দিল জামায়াত
  • কমিউনিষ্ট পার্টির হাফিজের বিরুদ্ধে ইসমাইলের সংবাদ সম্মেলন
  • কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ