৫ আগস্টের শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে: আদিলুর
Published: 26th, January 2025 GMT
পাঁচ আগস্টের শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে বলে মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘‘৫ আগস্টের সমস্ত শক্তি একসঙ্গে থাকতে হবে, যাতে ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে। যেন অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশে আগ্রাসন চালাতে না পারে। বাংলাদেশ যে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছে, সেই প্রতিরোধ, তারুণ্যের প্রতিরোধ সারা পৃথিবীর কাছে শিক্ষণীয় ব্যাপার হয়েছে।’’
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) বিকালে মুন্সীগঞ্জে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।
আদিলুর রহমান খান জানান, অন্তর্বর্তী সরকার অপরাধীদের বিচারের বিষয়ে সচেতন। তবে বিচারের প্রশ্নে তড়িঘড়ি করলে বিচার সঠিক হয় না। আবার দীর্ঘসূত্রিতায় বিচারহীনতার সৃষ্টি হয়।
আরো পড়ুন:
চৌগাছায় বাওড়ের মাছ নিয়ে বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষ, পিস্তল উদ্ধার
কিশোরগঞ্জে জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষ, যুবদল নেতাসহ আহত ১৫
অনুষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদ জেলার ১৬ পরিবারের সদস্যরা অংশ নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। পরে তাদের হাতে স্থানীয় প্রশাসনের আর্থিক অনুদান তুলে দেন উপদেষ্টা।
আদিলুর রহমান খান জানান, শহীদ ও আহত পরিবারের অনেক আকাঙ্ক্ষা এখনো অবাস্তবায়িত আছে। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সেগুলো পূরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে দায়িত্ব নিয়েছে, জুলাইয়ের যোদ্ধাদের একইভাবে দায়িত্ব নেওয়া হবে। এরজন্য আলাদা অধিদপ্তর তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে জেলা শহরের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন উপলক্ষে জেলা পর্যায়ে জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন উপদেষ্টা।
ঢাকা/রতন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
গন্ধগোকুলের বাঁচার লড়াই
দেশের অনেক এলাকা থেকেই গন্ধগোকুল হারিয়ে গেছে; কিন্তু পাবনার বেড়া পৌর এলাকার কয়েকটি মহল্লায় এখনো এ প্রাণীর বিচরণ চোখে পড়ে। তবে আগের মতো অত বেশি দেখা যায় না। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোটের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী এগুলো ‘বিপদাপন্ন’ প্রাণী।
প্রাণীটির আসল নাম গন্ধগোকুল হলেও বেড়া উপজেলায় এটি ‘নেল’ নামে পরিচিত। অনেকে এগুলোকে বাগডাশও বলেন। এর শরীর থেকে পোলাও চালের গন্ধের মতো মিষ্টি গন্ধ ছড়ায়। সন্ধ্যার পর অন্ধকার নামলে পৌর এলাকার বিভিন্ন বাড়ির ঘরের চাল ও গাছের ওপর দিয়ে শুরু হয় এর চলাচল। এ সময় এর শরীরের গন্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি থেকে রস নিঃসৃত হতে থাকে বলে যে স্থান দিয়েই এরা যাক না কেন, বেশ কিছুক্ষণ ধরে সেখানে সেই গন্ধ নাকে আসে। তখন মহল্লার বাসিন্দারা বুঝতে পারেন, আশপাশে হয়তো গন্ধগোকুল আছে, নয়তো একটু আগেই আশপাশ দিয়ে গেছে।
দীর্ঘদিন ধরেই গন্ধগোকুল বা নেল নামের প্রাণীটির সঙ্গে বেড়া পৌরবাসীর সম্পর্ক। বেশির ভাগ বাসিন্দার কাছেই প্রাণীটি বেশ পছন্দের। তবে অল্প কিছু মানুষ এগুলোকে অপছন্দ করেন গৃহপালিত হাঁস-মুরগি, কবুতর ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণে। তবে গত ১০-১২ বছরের মধ্যে পৌরবাসী এই প্রাণীকে ফাঁদ পেতে ধরেছেন বা এগুলোর কোনো ক্ষতিসাধন করেছেন বলে শোনা যায় না।
বন্য প্রাণী ও পরিবেশবিশেষজ্ঞদের মতে, গন্ধগোকুল প্রকৃতির উপকারী একটি নিশাচর প্রাণী। গন্ধগোকুল ব্যাঙ, ইঁদুরসহ ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধিতে দারুণ ভূমিকা রাখে; কিন্তু ভুল ধারণার কারণে অনেকেই প্রাণীটির জীবন হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। একটি সময় ছিল, যখন এগুলোকে দেশের প্রায় সর্বত্রই— বনাঞ্চল বা বনসংলগ্ন ঝোপঝাড় বা গ্রামাঞ্চলে দেখা যেত। তবে এখন এগুলো বিলুপ্তির পথে।
গন্ধগোকুল তাল ও খেজুরের রস পান করে, ইঁদুর, ছোট পাখি ও পোকামাকড় প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে; কিন্তু কখনো কখনো গৃহপালিত হাঁস-মুরগি বা কবুতর ধরে নিয়ে যায় বলে মানুষ এগুলো ফাঁদ পেতে ধরে হত্যা করে। আবার অনেক সময় রাস্তা পারাপারের সময় গাড়িচাপায়ও মারা যায়। এতে এগুলোর অস্তিত্ব কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে। এগুলোকে বিপদাপন্ন বলা যেতে পারে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গন্ধগোকুলের রয়েছে বিশেষ এক ভূমিকা। খাদ্যশৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান প্রাণীটির। এগুলো মূলত ক্ষতিকর পোকামাকড় ও ফলমূল খেয়ে এর বীজ বিস্তারের মাধ্যমে পরিবেশের প্রচুর উপকার সাধন করে। যেমন বটের ফল বা অন্যান্য ফল যখন খায়, তখন এর মলের দ্বারা নির্গত সেই বীজগুলো সফল উদ্ভিদে পরিণত হয়। অর্থাৎ এর পেটের ভেতর দিয়ে ফলের বীজগুলো গজানোর উপযুক্ত পরিবেশ (জার্মিনেশন) পায় বলে তা পরবর্তী সময়ে বীজের অঙ্কুরোদ্গমে শতভাগ কার্যকর হয়ে থাকে।
বছরে সাধারণত দুবার প্রজনন করে। গর্ভধারণকাল দুই মাসের কিছু বেশি। পুরোনো গাছের খোঁড়ল, গাছের ডালের ফাঁক, পরিত্যক্ত ঘর, ধানের গোলা বা তাল-সুপারির আগায় ছানা তোলে। সাধারণত প্রতিবারই ছানা হয় তিনটি।
বেড়ার মনজুর কাদের মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘দেশের অনেক এলাকা থেকেই গন্ধগোকুল বিলুপ্ত হতে বসেছে। তবে বেড়া পৌর এলাকায় এগুলোর বিচরণ যেমন কিছুটা বেশি, তেমনি পৌরবাসীও এগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল।’
প্রাণীটির ছবি তুলে রাজশাহী বিভাগীয় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবিরের কাছে পাঠালে তিনি সেটিকে ‘বাগডাশ’বলে শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রাণীটির অস্তিত্ব এখনো দেশের বিভিন্ন জায়গায় আছে। এর মধ্যে বেড়া পৌর এলাকায় এগুলোর বিচরণ কিছুটা বেশি বলে শুনেছি।’
বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বাগডাশ বা গন্ধগোকুল মানুষের কাছাকাছি থাকে; কিন্তু মানুষ দেখলে খুবই ভয় পায়। খুবই লাজুক স্বভাবের প্রাণী এটি। আবাসভূমি ধ্বংস ও হাঁস-মুরগি বাঁচানোর জন্য ব্যাপক নিধনের কারণে এগুলো এখন বিপন্ন। তবে প্রাণীটি কিন্তু প্রকৃতির বন্ধু। তাই সবারই উচিত এগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।