দেশে তামাকের ব্যবহার হ্রাস ও তামকজনিত ক্ষয়ক্ষতি নিরসনে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেটে তামাক-কর ও দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। একইসঙ্গে সিগারেটের বর্তমান চারটি স্তরকে কমিয়ে তিনটি স্তরে নামিয়ে আনা প্রস্তাব করেন তারা।

সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে, তামাকপণ্যের কার্যকর করারোপ’ শীর্ষক ইয়ুথ কনফারেন্স এমন দাবি করেন তারা। কনফারেন্সে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, একাডেমিক, গবেষক, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা বলেন, সিগারেটের বর্তমান চারটি স্তরকে কমিয়ে তিনটি স্তরে নামিয়ে আনা অর্থাৎ নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে একটি স্তর করা এবং এ স্তরের সিগারেটের ১০ শলাকার প্যাকেটের সর্বনিম্ন মূল্য ৮০ টাকা নির্ধারণ করা; এছাড়াও সব স্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ৬৭ শতাংশ করার দাবি করা হয়। এছাড়া উচ্চ স্তরের সিগারেটের ১০ শলাকার প্যাকেটের সর্বনিম্ন মূল্য ১৩০ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের ১০ শলাকার প্যাকেটের সর্বনিম্ন মূল্য ১৮০ টাকা কারার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

কনফারেন্সে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শেখ মোমেনা মনি বলেন, তামাকপণ্যের সহজলভ্যতা হ্রাস করতে মূল্যস্ফীতি এবং আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ ও তা নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি করতে হবে; সিগারেটের মূল্য স্তরগুলোর মধ্যে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য ব্যবধান কমিয়ে আনার মাধ্যমে সিগারেট ব্যবহারকারীর মূল্য স্তর পরিবর্তন করে কম মূল্য স্তরের সিগারেট ব্যবহারের সুযোগ সীমিত করতে হবে; পর্যায়ক্রমে একক মূল্যস্তর পদ্ধতির প্রচলন করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড.

শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, কিশোর-তরুণদের ওপর তামাকের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। তামাকপণ্যের উচ্চ মূল্য কিশোর-তরুণদের তামাক ব্যবহার থেকে বিরত রাখবে। গবেষণায় দেখা যায় ১০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশে এর ব্যবহার কমবে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য ড. মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি। তবে বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা ও সহজলভ্য এবং তামাককর কাঠামো ত্রুটিপূর্ণ। এটি যুগোপযোগী করতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ