সিদ্ধিরগঞ্জে অবৈধ অর্থ-বিত্ত রক্ষায় বিএনপিতে ঢুকার মিশনে সেই মোটা কবির
Published: 4th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আলোচিত যুবলীগ নেতা হত্যাসহ একডজন মামলার আসামি কবির হোসেন ওরফে মোটা কবির ওরফে লোহা চোর কবির তার অবৈধ অর্থ-বিত্ত ও ব্যবসা বাঁচাতে এবার বিএনপিতে ঢুকার মিশনে নেমেছে।
এই জন্য সে তার আদমজী ইপিজেডের ব্যবসা কথিত বিএনপি নেতা লোহা চোর আকরামকে দিয়েছে। কিছু নিজের কাছে রেখেছে।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, ৫ আগস্টের পর মোটা কবির আত্মগোপনে চলে যায়। এবং আকরামকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে সে তার ইপিজেডের ব্যবসা ঠিক রেখেছে। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে।
তারা বলেন, আওয়ামীলীগের আমলে সিদ্ধিরগঞ্জের শীর্ষ আওয়ামীলীগ নেতাদের ব্যবহার করে আদমজী ইপিজেডে বেশ কিছু ব্যবসা হাতিয়ে নিয়েছিল মোটা কবির। বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক বনে যায় সে।
যুবলীগ নেতা কবির আওয়ামীলীগের মধ্যে তার অবস্থান ঠিক রাখতে আওয়ামীলীগের দলীয় কর্মসুচিগুলোতে প্রচুর টাকা খরচ করে মিছিল নিয়ে যোগদান করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ছবি অনেক আছে।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোনের সময় ছাত্রদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জে আওয়ামীলীগের প্রত্যোকটা কর্মসূচিতে মোটা কবিরকে মিছিলের সামনের সারিতে দেখা গেছে।
আওয়ামীলীগের ১৬ বছরে ইপিজেডে ব্যবসা ছাড়াও নানা অবৈধ উপায়ে প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছে কবির। সেই টাকায় সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ডে ৫তলা বাড়ি, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় শ^শুড়বাড়িতে জমি, মার্কেট এবং গ্রামের াবড়ি বরিশালে জমি কিনেছে সে।
লোহা চোর কবির আদমজী ইপিজেডে ব্যবসার আড়ালে অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়েছে বছরের পর বছর। স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে লোহা চোর কবির। মাদক ব্যবসা ও অপরাধ দমনে আইনশৃংখলাবাহিনীর তৎপরতা শুরু হলে মোটা কবির কৌশলে তার বাহিনীর সদস্যদের ইপিজেডের ভেতর নিয়ে যায় এবং তার আস্তানায় নিরাপদে রাখে।
ঝামেলা এড়াতে সে এই সকল অপরাধীদের তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘এ কে এন্টারপ্রাইজ’ এর লোক হিসেবে পরিচয় দেয়। ফলে বেপজার নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের প্রবেশে বাধা দিত না। কিন্তু মোটা কবির অপরাধীদের ইপিজেডের ভেতর অবাধে বিচরণ করার সুযোগ করে দিয়ে ইপিজেডের ভেতর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
সিরাজ হত্যা মামলা ছাড়াও মোটা কবিরের বিরুদ্ধে হাফ ডজন মামলা রয়েছে বিভিন্ন অপরাধে। এছাড়া ৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র হতাহতের ঘটনায় মোটা কবিরের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যা চেষ্টার কয়েকটি মামলা হয়েছে।
মামলা ঠেকাতে প্রথমদিকে সে আকরামকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছে বলে জানিয়েছে তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আকরাম তাকে মামলা থেকে রক্ষা করতে পারেনি। তবে এক চোরের ব্যবসা আরেক চোর পাহারা দিচ্ছে। লোহা চোর আকরামের মাধ্যমে মোটা কবির একণ বিএনপির শিবিরে ঢুকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসীর তথ্যমতে, আদমজী ইপিজেডের ভেতর এক সময়ের লোহা চোর আকরামের হাত ধরে উত্থাণ ঘটে মোটা কবিরের। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর আকরাম এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। আর কবির আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে ব্যবসা হাতিয়ে নেয়।
এবং নিয়মিত আকরামের সাথে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। কোন দিন রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় বিএনপি আসলে মোটা কবিরের যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য সে আকরামের মাধ্যমে বিএনপির সাথে যোগাযোগ রাখে।
লোহা চোর কবির দুদকের চোখ ফাঁকি দিতে বিপুল পরিমান অর্থ-বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলেছে শ্বশুর বাড়ি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায়। তার স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নামে-বেনামে রয়েছে জমি ও বিপুল পরিমান অর্থ।
যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে কবিরের সহযোগিরা। তারা বলেন, নানা ধরনের প্রতারণা, ছলছাতুরী, মিথ্যাচারের মাধ্যমে ইপিজেডের ব্যবসায়িদের ম্যানেজ করে ব্যবসা বাগিয়ে নিয়েছে লোহা চোর কবির।
ইপিজেডের বেশ কয়েকজন ইপিজেডের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ি জানান, মাদক ব্যবসায়ি ও স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসীকে নিয়ে ইপিজেডে ভেতর বিভিন্ন ফ্যাক্টরীতে মহড়া দিতো মোটা কবির। বিভিন্ন ফ্যাক্টরীতে গিয়ে আওয়ামীলীগের বড় বড় নেতার নাম বিক্রি করে সুবিধা আদায় করে মোটা কবির ওরফে লোহা চোর কবির।
তাছাড়া লোহা চোর কবির এমন ভাবে মিথ্যে কথা বলে যে কেউ বিশ্বাস করে। সকাল বিকাল সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের নাম বিক্রি করতো কবির। গভীর রাত পর্যন্ত ইপিজেডের ভেতর তার আস্তানায় আড্ডাবাজি করতো। যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় নিরাপত্তাকর্মীরা কবিরকে তেমন কিছু বলতো না।
কবিরের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানায়, ২০০২ সালে আদমজী জুট মিল বন্ধ হওয়ার পর বন্ধ টেন্ডারের নামে আদমজীর কোট কোটি টাকার স্ক্রাব (লোহা) লোপাটকারী চক্রের সক্রীয় সদস্য ছিল মোটা কবির। এতে করে লোহা চোর কবির হিসেবে পরিচিত পায় সে। ওই সময় আদমজী জুট মিলের পরিত্যক্ত অনেক মূল্যবান মালামাল রাতের আধারে পাচার করে লোহা চোর কবির চক্র।
ফলে রাতারাতি প্রচুর টাকার মালিক বনে যায় সে। এরপর ইপিজেডের ভেতর শুরু হয় তার নতুন অপকর্ম। নতুন নতুন ফ্যাক্টরী মালিকদের নানাভাবে জিম্মি করে ফায়দা লুটে কবির। এই কাজে সে ব্যবহার করে বিভিন্ন আওয়ামীলীগ নেতা ও স্থানীয় মাস্তানদের।
এখন আবার বিএনপির নেতাদের ব্যবহার করে ফায়দা লুটা এবং বিএনপিতে ঢুকার মিশন শুরু করেছে মেটা কবির। একাধিক হত্যাসহ এক ডজন মামলার আসামী মোটা কবিরকে আইনের আওতায় আনার দাবী স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ র স দ ধ রগঞ জ ব যবস য় আকর ম র য় ব এনপ র ব যবস ব এনপ র র আকর ম ত কর ম কর ম র অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার শপথ ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা যোদ্ধাদের
বিজয়ের মাস ঢাকায় এক হলেন একাত্তরে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর যোদ্ধারা; তাঁরা শপথ নিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার।
আজ শনিবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গেরিলা যোদ্ধাদের এই মিলনমেলায় এই বাহিনীর জীবিত সদস্যদের পাশাপাশি শহীদ পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। দিনভর এই আয়োজন করে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী সমন্বয় কমিটি।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে আলাদা গেরিলা বাহিনী গঠন করে অংশ নিয়েছিলেন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যরা। কয়েক হাজার গেরিলা যোদ্ধার এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরহাদ। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বেতিয়ারার যুদ্ধে এই বাহিনীর সদস্যদের আত্মদান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আলোচিত ঘটনা।
স্বাধীনতার পর এই গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা মোহাম্মদ ফরহাদের নেতৃত্বে অস্ত্র সমর্পণ করেছিলেন। দেড় যুগ আগে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা করেছিল, তাতে এই বাহিনীর সদস্যদের রাখা হয়নি। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
শহীদ মিনারে মিলনমেলার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি এই গেরিলা বাহিনীর সদস্য ছিলেন, স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত প্রথম ডাকসু নির্বাচনে ভিপি হয়েছিলেন তিনি।
ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ শনিবার একাত্তরে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর মিলনমেলায় সিপিবির সাবেক সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম