নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আলোচিত যুবলীগ নেতা হত্যাসহ একডজন মামলার আসামি কবির হোসেন ওরফে মোটা কবির ওরফে লোহা চোর কবির তার অবৈধ অর্থ-বিত্ত ও ব্যবসা বাঁচাতে এবার বিএনপিতে ঢুকার মিশনে নেমেছে।

এই জন্য সে তার আদমজী ইপিজেডের ব্যবসা কথিত বিএনপি নেতা লোহা চোর আকরামকে দিয়েছে। কিছু নিজের কাছে রেখেছে। 

স্থানীয়দের তথ্যমতে, ৫ আগস্টের পর মোটা কবির আত্মগোপনে চলে যায়। এবং আকরামকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে সে তার ইপিজেডের ব্যবসা ঠিক রেখেছে। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে। 

তারা বলেন, আওয়ামীলীগের আমলে সিদ্ধিরগঞ্জের শীর্ষ আওয়ামীলীগ নেতাদের ব্যবহার করে আদমজী ইপিজেডে বেশ কিছু ব্যবসা হাতিয়ে নিয়েছিল মোটা কবির। বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক বনে যায় সে।

যুবলীগ নেতা কবির আওয়ামীলীগের মধ্যে তার অবস্থান ঠিক রাখতে আওয়ামীলীগের দলীয় কর্মসুচিগুলোতে প্রচুর টাকা খরচ করে মিছিল নিয়ে যোগদান করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ছবি অনেক আছে। 

স্থানীয়দের তথ্যমতে, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোনের সময় ছাত্রদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জে আওয়ামীলীগের প্রত্যোকটা কর্মসূচিতে মোটা কবিরকে মিছিলের সামনের সারিতে দেখা গেছে।

আওয়ামীলীগের ১৬ বছরে ইপিজেডে ব্যবসা ছাড়াও নানা অবৈধ উপায়ে প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছে কবির। সেই টাকায় সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ডে ৫তলা বাড়ি, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় শ^শুড়বাড়িতে জমি, মার্কেট  এবং গ্রামের াবড়ি বরিশালে জমি কিনেছে সে। 

লোহা চোর কবির আদমজী ইপিজেডে ব্যবসার আড়ালে অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়েছে বছরের পর বছর।  স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে লোহা চোর কবির। মাদক ব্যবসা ও অপরাধ দমনে আইনশৃংখলাবাহিনীর তৎপরতা শুরু হলে মোটা কবির কৌশলে তার বাহিনীর সদস্যদের ইপিজেডের ভেতর নিয়ে যায় এবং তার আস্তানায় নিরাপদে রাখে। 

ঝামেলা এড়াতে সে এই সকল অপরাধীদের তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘এ কে এন্টারপ্রাইজ’ এর লোক হিসেবে পরিচয় দেয়। ফলে বেপজার নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের প্রবেশে বাধা দিত না। কিন্তু মোটা কবির অপরাধীদের ইপিজেডের ভেতর অবাধে বিচরণ করার সুযোগ করে দিয়ে ইপিজেডের ভেতর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। 

সিরাজ হত্যা মামলা ছাড়াও মোটা কবিরের বিরুদ্ধে হাফ ডজন মামলা রয়েছে বিভিন্ন অপরাধে। এছাড়া ৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র হতাহতের ঘটনায় মোটা কবিরের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যা চেষ্টার কয়েকটি মামলা হয়েছে।

মামলা ঠেকাতে প্রথমদিকে সে আকরামকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছে বলে জানিয়েছে তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আকরাম তাকে মামলা থেকে রক্ষা করতে পারেনি। তবে এক চোরের ব্যবসা আরেক চোর পাহারা দিচ্ছে। লোহা চোর আকরামের মাধ্যমে  মোটা কবির একণ বিএনপির শিবিরে ঢুকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এলাকাবাসীর তথ্যমতে, আদমজী ইপিজেডের ভেতর এক সময়ের লোহা চোর আকরামের হাত ধরে উত্থাণ ঘটে মোটা কবিরের। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর আকরাম এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। আর কবির আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে ব্যবসা হাতিয়ে নেয়।

এবং নিয়মিত আকরামের সাথে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। কোন দিন রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় বিএনপি আসলে মোটা কবিরের যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য সে আকরামের মাধ্যমে বিএনপির সাথে যোগাযোগ রাখে। 

লোহা চোর কবির দুদকের চোখ ফাঁকি দিতে বিপুল পরিমান অর্থ-বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলেছে শ্বশুর বাড়ি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায়। তার স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নামে-বেনামে রয়েছে জমি ও বিপুল পরিমান অর্থ।

যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে কবিরের সহযোগিরা। তারা বলেন, নানা ধরনের প্রতারণা, ছলছাতুরী, মিথ্যাচারের মাধ্যমে ইপিজেডের ব্যবসায়িদের ম্যানেজ করে ব্যবসা বাগিয়ে নিয়েছে লোহা চোর কবির। 

ইপিজেডের বেশ কয়েকজন ইপিজেডের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ি জানান, মাদক ব্যবসায়ি ও স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসীকে নিয়ে ইপিজেডে ভেতর বিভিন্ন ফ্যাক্টরীতে মহড়া দিতো মোটা কবির।  বিভিন্ন ফ্যাক্টরীতে গিয়ে আওয়ামীলীগের বড় বড় নেতার নাম বিক্রি করে সুবিধা আদায় করে মোটা কবির ওরফে লোহা চোর কবির।

তাছাড়া লোহা চোর কবির এমন ভাবে মিথ্যে কথা বলে যে কেউ বিশ্বাস করে। সকাল বিকাল সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের নাম বিক্রি করতো কবির। গভীর রাত পর্যন্ত ইপিজেডের ভেতর তার আস্তানায় আড্ডাবাজি করতো। যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় নিরাপত্তাকর্মীরা কবিরকে তেমন কিছু বলতো না।

কবিরের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানায়, ২০০২ সালে আদমজী জুট মিল বন্ধ হওয়ার পর বন্ধ টেন্ডারের নামে আদমজীর কোট কোটি টাকার স্ক্রাব (লোহা) লোপাটকারী চক্রের সক্রীয় সদস্য ছিল মোটা কবির। এতে করে লোহা চোর কবির হিসেবে পরিচিত পায় সে। ওই সময় আদমজী জুট মিলের পরিত্যক্ত অনেক মূল্যবান মালামাল রাতের আধারে পাচার করে লোহা চোর কবির চক্র। 

ফলে রাতারাতি প্রচুর টাকার মালিক বনে যায় সে। এরপর ইপিজেডের ভেতর শুরু হয় তার নতুন অপকর্ম। নতুন নতুন ফ্যাক্টরী মালিকদের নানাভাবে জিম্মি করে ফায়দা লুটে কবির। এই কাজে সে ব্যবহার করে বিভিন্ন আওয়ামীলীগ নেতা ও স্থানীয় মাস্তানদের।  

এখন আবার বিএনপির নেতাদের ব্যবহার করে ফায়দা লুটা এবং বিএনপিতে ঢুকার মিশন শুরু করেছে মেটা কবির। একাধিক হত্যাসহ এক ডজন মামলার আসামী মোটা কবিরকে আইনের আওতায় আনার দাবী স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ র স দ ধ রগঞ জ ব যবস য় আকর ম র য় ব এনপ র ব যবস ব এনপ র র আকর ম ত কর ম কর ম র অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি আবার আলোচনায়

দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি আবার সামনে এসেছে। ছয় মাস ধরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি নিয়ে নানা তর্কবিতর্ক চলছে। এখন নতুন করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। অবশ্য তাঁদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের কথাও বলছেন।

নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল না হলে জনগণের সামনে গভীর সংকট দেখছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তাঁর মতে, কাজটি করতে না পারলে বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে।

গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বৈরতান্ত্রিক ভিত্তি: জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সভায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলে দেশের মানুষ যদি সচেষ্ট না হয়, তাহলে জনগণের সামনে গভীর সংকট অপেক্ষা করছে। এটি না করা হলে বাংলাদেশকে একটি গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে।’

আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির এই আহ্বায়ক বলেন, ‘খুনের দায়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দ্রুতগতিতে তাদের নিবন্ধন বাতিল করুন।...আওয়ামী লীগের ব্যানারের বিষয়ে আগামী নির্বাচনের আগে যদি সমাধান না করা যায়, তাহলে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে ফেরার আর কোনো পথ থাকবে না।’

কোনো দয়া না দেখিয়ে আওয়ামী লীগকে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে বর্জন করতে ওই সভা থেকে আহ্বান জানান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়কের দেওয়া এমন বক্তব্যের দুই ঘণ্টা পর গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মোহাম্মদ হাসানের জানাজা শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ দেখতে চান তাঁরা।

দ্রুতগতিতে তাদের (আওয়ামী লীগ) নিবন্ধন বাতিল করুন।নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, আহ্বায়ক, জাতীয় নাগরিক কমিটিসরকারের পদক্ষেপ দাবি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ সংগঠন) ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি ভাষণ দেন। এই ভাষণকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরসহ বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরের মধ্যে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ৩২ নম্বরের বাড়ি। তখন থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আবার সরব হতে থাকেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এর মধ্যে ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।

এমন প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৭ ফেব্রুয়ারি বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়া ও খুনিদের বিচারের আগপর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব নাআবদুল হান্নান মাসউদ, মুখ্য সংগঠক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

অন্যদিকে গাজীপুরের ওই হামলায় আহত এক তরুণ ১২ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি আওয়ামী লীগকে আইনগতভাবে নিষিদ্ধের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে।

১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিহত ওই তরুণের (আবুল কাশেম) জানাজার আগে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল। তাঁরা তিনজনই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানান। সেই রাতে জানাজার পর কফিন মিছিলেও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে নানা স্লোগান দেওয়া হয়।

জানাজার আগে হাসনাত আবদুল্লাহ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ‘#ব্যানআওয়ামীলীগ’ লেখা একটি পোস্ট দেন। এই পোস্টের আগে ওই দিন তিনি আরেকটি পোস্ট দেন। এর শেষ লাইনটি ছিল ‘ইন্টেরিম, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করো, করতে হবে।’

জানাজার আগে হাসনাত আবদুল্লাহ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ‘#ব্যানআওয়ামীলীগ’ লেখা একটি পোস্ট দেন। এই পোস্টের আগে ওই দিন তিনি আরেকটি পোস্ট দেন। এর শেষ লাইনটি ছিল ‘ইন্টেরিম, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করো, করতে হবে।’ আ.লীগকে কর্মসূচি করতে দেওয়া হবে না

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি তোলা হয়েছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিল চেয়ে গত ১৯ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন ‘সারডা সোসাইটি’ নামের একটি সংগঠন। ২৭ আগস্ট সেই রিটের শুনানি হয়। শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে চাইবে—কেউ এটি প্রত্যাশা করলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এই সরকার মনে করে, মানুষের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক দল অন্যতম প্ল্যাটফর্ম।

পরে হাইকোর্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিল চেয়ে করা রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়কের দেওয়া এমন বক্তব্যের দুই ঘণ্টা পর গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মোহাম্মদ হাসানের জানাজা শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ দেখতে চান তাঁরা।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবির বিষয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ২৮ আগস্ট সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) বাংলাদেশের ইতিহাসে বর্বরতম এক ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। এই কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যক্তিগত দায় থাকতে পারে। নেতাদের সামষ্টিক দায় থাকতে পারে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে না।

তবে জুলাই গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে দেওয়া হবে না বলে গত ২৯ জানুয়ারি এক ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি সেদিন বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে হলে অবশ্যই গণহত্যার বিচারের মুখোমুখি হতে হবে এবং তাদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। তাদের রাজনীতি করতে হলে ‘ক্লিন ইমেজ’ নিয়ে আসতে হবে।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবির বিষয়ে বিএনপি শুরু থেকেই বলে আসছে, এই সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ।

‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯’ অনুযায়ী সরকার বিভিন্ন সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে পারে। এই আইন অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করে। গত বছরের ১ আগস্ট এই আইনে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। পরে অন্তর্বর্তী সরকার ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল করেছে।

সর্বশেষ ওই আইনেই গত বছরের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়া ও খুনিদের বিচারের আগপর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ