পিরোজপুরে সাবেক সংসদ সদস্য আউয়াল ও তাঁর ভাইয়ের বাড়িতে আগুন
Published: 6th, February 2025 GMT
পিরোজপুরে সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল ও তাঁর ভাই সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। গতকাল বুধবার রাত একটার দিকে শহরের পাড়েরহাট সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার সারা দেশে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র–জনতা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে পিরোজপুর শহরের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রতিবাদ জানায় ছাত্র–জনতা। রাত একটার দিকে সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল ও তাঁর ভাই পিরোজপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাবিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ ও ৬ আগস্ট ওই বাড়ি দুটিতে একাধিকবার আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তখন থেকে ওই বাড়িতে কেউ থাকেন না; অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ৫ আগস্টের পর এ কে এম এ আউয়াল আত্মগোপনে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুনসকালেও ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা চলছে, গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সামনের অনেকটা৩ ঘণ্টা আগেগতকাল রাতে পিরোজপুর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হাবিবুর রহমানের মালিকানাধীন একটি ফিলিং স্টেশন ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া বলেশ্বর ব্রিজের টোলঘর ও জেলা যুবলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামানের (ফুলু) সদর উপজেলার শংকরপাশা ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
আরও পড়ুনবরিশালে সাবেক মেয়র সাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতা আমুর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর১৯ মিনিট আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়ার কাছে ট্রাম্পের পরমাণু সাবমেরিন মোতায়েনের ঝুঁকি আসলে কতটা
সাধারণ সময়ে এই ঘটনা খুবই অস্বাভাবিক, যুগ পরিবর্তনকারী ও ভয়জাগানিয়া বলে মনে হতো। কারণ, স্নায়ুযুদ্ধকালেও কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে রাশিয়ার উপকূলের দিকে পরমাণু সাবমেরিন পাঠানোর এমন নির্দেশ দেননি।
এই ধরনের পরমাণু উত্তেজনার খেলায় আগে কখনো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নেতা জড়াননি।
সত্যি বলতে, ১৯৬২ সালে কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র–সংকটে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূল থেকে মাত্র ৯০ মাইল দূরে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়ে বিশ্বকে পরমাণু যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় ১৩ দিন ধরে পুরো পৃথিবী ভয় আর অনিশ্চয়তায় কাঁপছিল।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কল্পনাবিলাসী শাসনব্যবস্থার কারণে এবার তেমন ভয় বা আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে না। এটি মোটেই কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র–সংকটের দ্বিতীয় সংস্করণ নয়, তা খুব স্পষ্ট।তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কল্পনাবিলাসী শাসনব্যবস্থার কারণে এবার তেমন ভয় বা আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে না। এটি মোটেই কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র–সংকটের দ্বিতীয় সংস্করণ নয়, তা খুব স্পষ্ট।
তবে তার অর্থ এই নয় যে ট্রাম্প যা করলেন, সেটি কোনো ঝুঁকিমুক্ত সিদ্ধান্ত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অবস্থান এমনভাবে বদলেছেন, যেটা তাঁর পূর্বসূরিদের কেউই সাহস করেননি। এমনকি অনেকটা হালকাভাবেই তিনি পারমাণবিক উত্তেজনার সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা রেখেছেন।
এখন যদি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পাল্টা জবাব দিতে চান, তাহলে বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে।
ট্রাম্প হয়তো মনে করছেন, পুতিন তেমন কিছু করবেন না। আসলে ট্রাম্প সম্ভবত এবার রাশিয়ার কৌশলই ব্যবহার করছেন।
পুতিন দীর্ঘদিন ধরেই পারমাণবিক অবস্থান বদলানোকে চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনার সময় তিনি প্রায়ই কালিনিনগ্রাদে পারমাণবিক ওয়ারহেড ছুড়তে সক্ষম ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেন। এই কালিনিনগ্রাদ এলাকাটি ন্যাটোর সদস্যদেশ পোল্যান্ডের সীমান্তে অবস্থিত।
২০২৩ সালে পুতিন বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেন। স্নায়ুযুদ্ধের পর এই প্রথম রাশিয়া নিজেদের দেশের বাইরে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করল। তিনি ইউক্রেনে বারবার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
আর গতকাল শুক্রবার পুতিন ঘোষণা দিলেন, রাশিয়া ওরেশনিক নামে একধরনের হাইপারসনিক মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি শুরু করেছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৫ সালের মধ্যেই বেলারুশে মোতায়েন করা হবে। তিনি দাবি করেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের জন্য নির্দিষ্ট স্থানও ইতিমধ্যে বাছাই করে রাখা হয়েছে।
গত কয়েক দিনে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্পের নানা হুমকি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে। মেদভেদেভ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করছেন। তিনি এর আগেও পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন।
পুতিন দীর্ঘদিন ধরেই পারমাণবিক অবস্থান বদলানোকে চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনার সময় তিনি প্রায়ই কালিনিনগ্রাদে পারমাণবিক ওয়ারহেড ছুড়তে সক্ষম ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেন।কিছুদিন আগেও পুতিনের ভক্ত হিসেবে পরিচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছেন এবং তার মোকাবিলায় পাল্টা চাল দিচ্ছেন।
অন্যভাবে বললে, রাশিয়া যেটাকে ‘কেবল হুমকি’ হিসেবে দিচ্ছে, ট্রাম্প সেটাকে ‘আসল হুমকি’ হিসেবে নিচ্ছেন। এটা অনেকটাই উল্টো পরিস্থিতি। কারণ, ট্রাম্পের সমর্থকেরা সাধারণত বলে থাকেন, তাঁর কথাকে সরাসরি না নিয়ে রূপকভাবে বুঝতে হবে।
মেদভেদেভকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প তাঁর নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লেখেন, ‘শব্দের গুরুত্ব অনেক। আর সেগুলো অনেক সময় এমন পরিণতি ডেকে আনতে পারে, যা কেউ চায় না।’
তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই হুমকিকে অনেকটাই নাটকীয় ‘পারফরম্যান্স’ বলা যায়। হ্যাঁ, এটি উচ্চ ঝুঁকির, দায়িত্বহীন। তবে শেষমেশ এটি একধরনের ‘লোক দেখানো কার্যকলাপ’।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের পেছনে অন্য উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। আগামী কয়েক দিনে ট্রাম্পকে ব্যাখ্যা করতে হবে, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। দিন দিন এটির গুরুত্ব আরও বাড়ছে। কারণ, গতকাল শুক্রবার কিয়েভে রাশিয়ার এক হামলায় ৩১ জন নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া রাশিয়ার তেল-গ্যাস কেনা দেশগুলো বিশেষ করে চীন, ভারত, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপর দ্বিতীয় স্তরের নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরিকল্পনাও ট্রাম্পের জন্য কূটনৈতিক চাপে পরিণত হয়েছে।
এ সবকিছুর মাঝখানে ট্রাম্প যদি পরবর্তী সময়ে তাঁর হুমকি থেকে সরে দাঁড়াতে চান, তাহলে তিনি দেখাতে পারবেন যে সাবমেরিন মোতায়েনের মাধ্যমে তিনি রাশিয়াকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। তিনি এমন একটি কৌশল নিয়েছেন, যার ঝুঁকি হয়তো বেশি, কিন্তু অর্থনৈতিক খরচ তুলনামূলকভাবে কম। বিশেষ করে যেসব মিত্রদেশকে তিনি অন্য ক্ষেত্রে পাশে পেতে চান, তাদের ওপর শুল্ক আরোপের চেয়ে এই মূল্য তুলনামূলক কম।