মানুষ সংগ্রাম চালিয়ে যায়। স্থান-অঞ্চল ছাপিয়ে তা কদাচিৎ সব মানুষের গণ–অভ্যুত্থান হয়ে ওঠে। তখন মানুষ নিজের জীবন পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখে। আশায় বুক বাঁধে। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান আশাবাদের ঢেউ জাতির মধ্যে জাগিয়ে দিয়েছে। কৃষকেরাও সেই আশায় বুক বেঁধেছেন। কিন্তু তাঁদের কথা বলবে কে? প্রান্ত থেকে তাঁদের দুর্দশার কথা কীভাবে পৌঁছাবে কেন্দ্রে? এই কথাগুলো দাবি করে তোলার জন্য গত ২৬ জানুয়ারি চিলমারীতে ছিল কৃষক মহাসমাবেশ। সেখানে অনেক কথা বলার ছিল সর্বার্থে প্রান্তে বাস করা এই মানুষগুলোর। সেসবের কিছু অগ্রগণ্য চাওয়া তুলে ধরা যাক।

হাট ও ঘাট থেকে জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ

গত বছরের ঘটনা। ফিরছিলাম গরুর হাট হয়ে। সেখানে কয়েকজন গরু ক্রেতার কাছ থেকে খাজনার রসিদের ফটো ও ক্রেতার ভিডিও রেকর্ড নিই। দেখে ফেলেন ইজারাদারের লোক। জোর করে ভিডিও ও ফটো মুঠোফোন থেকে মুছে দেন। সেখান থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে ফিরতি একটি গরুবাহী ভটভটির লোকদের সঙ্গে কথা বলি। গরুর পাইকার উলিপুর ধামশ্রেণির ব্যাপারী আবুল কাশেম (৬৫) ও উলিপুর সদরের আমিনুল(৫০)। তাঁরা খাজনার রসিদ দেখান। রসিদে গরুর মূল্য লেখা ৫০ হাজার, কিন্তু খাজনার ঘর ফাঁকা। তাঁরা জানান, বিক্রেতার কাছ থেকে খাজনা নিয়েছেন ৩০০ টাকা এবং তাঁদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা।

পরে রসিদের ছবি ফেসবুকে দিলে পোস্টে কড়াই বরিশাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সাদাকাত হোসেন (৪৫) জানান, ‘উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর হাট জোড়গাছের এখন সুনামের পরিবর্তে দুর্নামে ভরপুর।’ হাসান আল নাহিদ লিখেছেন, ‘এরা সংখ্যায় বেশি, যা জুলুম করে তা-ই মানতে বাধ্য হয়।’

চিলমারী বন্দর থেকে রৌমারী। একটি ৪০ হাত নৌকা। একবারে যাত্রী পারাপার সম্ভব ১৫০ জনের। সোয়া ঘণ্টার পথ। একই শক্তির শ্যালো ইঞ্জিন একটি ভটভটি একই সময়ে চিলমারী বন্দর থেকে কুড়িগ্রাম শহরে যায় ১০ জন যাত্রী নিয়ে। ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা। তাহলে ১০ গুণ যাত্রী নিয়ে নৌকা চললে ভাড়া হওয়ার কথা ৫ টাকা। সেখানে ১০০ টাকা ভাড়া কেন? বাড়তি ৯৫ টাকা নৌযাত্রীরা কেন দেবেন?

পাকিস্তান আন্দোলনের ভিত্তি ছিল জমিদারি উচ্ছেদ। কৃষকেরা যে হাটে কৃষিপণ্য কেনাবেচা করেন, সেটা নিয়েও ব্যাপক আন্দোলন ছিল। জমিদারের হাটের খাজনার অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষকেরা নিজেরা হাট বসিয়েছেন। নৌপথে খাজনার অত্যাচারে সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার ঘটনা আছে। হাট ও ঘাট থেকে ইজারার নামে জমিদারি প্রথাটি রয়ে গেছে। ফলে সড়কপথের চেয়ে নৌপথে তেল-মবিল খরচ কম লাগলেও সড়কপথের চেয়ে নৌপথে ভাড়া দু–তিন গুণ গুনতে হয়।

কৃষকের সঙ্গে আলোচনা করে কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ

ব্রহ্মপুত্রের শাখাহাতী চরের মিলন মিয়া (৪০) তিনি নিয়ে এসেছেন ১০ মণ কাঁচা বাদাম। প্রতি মণ তিন হাজার টাকা দরে বিক্রির আশা থাকলেও তা দুই হাজারের ওপরে দাম বলছেন না ব্যবসায়ীরা। হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, আবাদে যা খরচ হয়েছে, তা–ই উঠবে না। লাভ তো দূরের কথা। বাড়ির সবাই মাঠে খেটে ছয় বিঘা জমিতে বাদাম চাষে এবার খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকার মতো। বাদাম হয়েছে ৩০ মণ। প্রতি মণ গড়ে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করলে আবাদের খরচই ওঠে না। মাঝখানে বন্যায় কিছু খেয়ে গেছে। কামলা খরচ বাদ দিয়ে হিসাব করলেও লস। সব জায়গাতেই কৃষকদের বিপদ।

বাজারে নতুন আলু এখন ১৫ টাকা। অথচ বীজ আলু কৃষকেরা কিনেছেন ২ হাজার টাকা মণ। অর্থাৎ ৫০ টাকা কেজি। সঙ্গে বিষ, বীজ, কামলা খরচ তো আছেই। কৃষকের ঘরে আলু। কোল্ডস্টোরগুলো যেখানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা গত বছর ভাড়া নিয়েছে ৩০০ টাকা। এ বছর ৪০০ টাকা নিচ্ছে। কৃষকের লাভ কে খায়?

শিল্পপণ্যের দাম নির্ধারণ করেন শিল্পপতিরা। এটা সারা দুনিয়াতেই হয়। সেই শিল্পোন্নত দেশগুলোতে কৃষিপণ্যের দামটি নির্ধারণ করেন সেখানকার কৃষকেরা। কিন্তু বাংলাদেশের কৃষকেরা তা পারেন না। কৃষক যে ট্রাক্টর, বীজ কেনেন, তা কোম্পানির নির্ধারিত মূল্যে। আর কৃষক নিজের উৎপাদিত পাট, তুলা, বাদাম, ধানের দামটা নির্ধারণ করতে পারেন না। চাষিদের মতামতের ভিত্তিতে সরকারিভাবে কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করার দাবি কি খুব অপ্রাসঙ্গিক?

রেশম ও এন্ডি পোকার লার্ভা খোলাবাজারে বিক্রির ব্যবস্থা

রেশম উৎপাদনব্যবস্থা একাধারে কৃষি ও কুটির শিল্প—দুটোই। আগে কৃষকেরা অন্যান্য আবাদের সঙ্গে তুঁতগাছের চাষ করতেন। পাতা খাইয়ে রেশম পোকা পালন করতেন নিজের ঘরে। এই পোকা পালনই হলো কুটির শিল্প।

কিন্তু এখন চাইলেই যে কেউ রেশম চাষ করতে পারবে না। যখন রেশম বোর্ড প্রকল্পের নামে বাজেট পাবে, তখন তারা নিবন্ধিত কৃষকদের চারা, লার্ভা ও উৎপাদনের পুরো খরচ দেবে। চারা লাগানোর জন্য দুবারে মোট ২৫ হাজার ও ঘর তোলার জন্য ১ লাখ টাকা দেবে। একজন নিবন্ধিত কৃষকও চাইলে এক বিঘার বেশি আবাদ করতে পারবেন না। একজন কৃষককে মাত্র ১ বিঘা জমির জন্য যতটুকু রেশম পোকার লার্ভা লাগবে, ততটুকুই দেওয়া হবে।

লার্ভা কেন খোলাবাজারে সবার জন্য বিক্রি হয় না। কর্তারা জানিয়েছেন, লার্ভাগুলো ফ্রিজে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা হয়। আগে যখন ফ্রিজ ছিল না, তখন আমাদের কৃষকেরা রেশম উৎপাদন কেমন করে করতেন? অর্থাৎ সরকারগুলো নিজেই রেশম উৎপাদনকে মুক্ত করে না দিয়ে আটকে রেখেছে।

শুধু ইলিশ নয়, সব মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুমে মাছ ধরা

চিলমারীর জেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (৫৫) বলেন, ‘ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুম, মাছ ধরা বন্ধ। লাভ কার? যারা ইলিশ সারা বছর ধরে তাদের। কিন্তু হামরা রুই-কাতলা, বাগাড়.

..হ যে মাছগুলো মারি, সেগুলা তো ডিম পাড়ে ফাল্গুন-চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসে। সেগুলা আবার ডিম ফোটায় নদীর তলার কোলায় গিয়ে। এই মাছগুলা রক্ষার কথা তো আপনারা কন না।’

মানে ফাল্গুন-চৈত্রে নদ-নদী শুকাতে থাকে। তখন চরের মাঝখানে নিচু জলাভূমি তৈরি হয়। এর তিন দিকে চর, আরেক দিক নদীর স্রোতের সঙ্গে যুক্ত। একে বলে কোলা। একেকটা কোলা একেকটা হালদা নদীর মতো মিঠাপানির মাছের আধার। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে যখন নদীর পানি কমতে শুরু করে, তখন পৈরালী (বৈরালী), কালবাউশসহ কয়েক জাতের মাছ কোলাগুলোতে ঢুকে ডিম পাড়ে। একেকটি কোলায় প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ থাকে। এক একর আয়তনের পুকুরে এক বা দুই প্রজাতির মাছ থাকে। একপর্যায়ে প্রভাবশালীরা কোলার ইজারা নিয়ে মুখ বন্ধ করেন। তারপর কেউ বিষ দিয়ে মাছ মারেন। কেউ কাঁথা জাল দিয়ে কোলা সেচে ফেলেন। এতে মাছ ও সব কীটপতঙ্গ ঝাড়ে-বংশে নিপাত হয়।

মাছের এই একক চাষ প্রকৃতিতে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। জেলেরা এটা জানেন। তাঁদের জীবনদর্শনও এই যে তাঁরা প্রকৃতিকে খণ্ড খণ্ড করে দেখেন না। তাঁরা জানেন, মাছ যখন আহরণ থেকে চাষে পরিণত হয়, তখন জীবনও বদলে যায়।

চরের ভাঙন রোধে বিন্নার বেষ্টনী

চরগুলোতে কোটি টাকা খরচ করে ভবন নির্মাণ করা হয়। এনজিওরা বাড়ি–ভিটা উঁচু করে। চরের এজমালি জমি দখল করেন চেয়ারম্যানের লোকেরা। কিন্তু চরগুলোকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার কথা কেউ বলে না।

বাংলাদেশে সচরাচর যেসব বিন্না ঘাস চোখে পড়ে, সেগুলোর শিকড় ছড়িয়ে যায়, সোজা গভীরে যায় না। ফলে এগুলো নদীভাঙন ঠেকাতে অক্ষম। অথচ শিলিগুড়িতে তিস্তার ভাঙন ও পাহাড়ধস ঠেকিয়ে রাখে। কারণ, শিলিগুড়ির বিন্না ঘাস সোজা ২০ ফুট পর্যন্ত গভীরে চলে যায়। ইরি ধান লাগানোর মতো করে চারা রোপণ করা গেলে এক বছরেই ঘন বেষ্টনী তৈরি হয়। পাহাড়ের পার্শ্বঢাল রক্ষায় এই বিন্না ঘাসের জুড়ি নেই। গবেষকেরা জানিয়েছেন, বিন্নার তিনটা শিকড় ১ সুতি লোহার সমান শক্ত। লোহা ক্ষয় হয়, এটা দিনকে দিন মজবুত হয়।

নগরীর টাইগারপাস ও লালখান বাজারের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত বাটালি হিলের মিঠাপাহাড়ের পাদদেশে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এই ঘাস লাগানোও সফল বলে প্রমাণিত হয়।

এই পাহাড়ি বিন্না ঘাস পাহাড়ের ধস ঠেকাতে পারলে নদীভাঙন তো সহজ। এর বিস্তার করতে পারলে গরু-মহিষের এজমালি গোচারণভূমির কাজও হবে। এতে ভূমিহীনেরা গরু-মহিষ পালন করতে পারবেন। চরাঞ্চলের চতুর্দিকে ৪০–৫০ হাত প্রশস্ত বেষ্টনী প্রাকৃতিক বনের অভাবও পূরণ করবে। চরের নারীদের কুটির শিল্পের মাধ্যমে বাড়তি আয়ের রাস্তা তৈরি হবে। নদ–নদীর বাস্তুসংস্থানও ঠিক থাকবে। পাখপাখালির ঠাঁই হবে। বাহাত্তরের সংবিধান ৩ ধরনের মালিকানার স্বীকৃতি দিয়েছে। রাষ্ট্রীয়, সমবায় ও ব্যক্তি মালিকানা। কিন্তু এগুলোর বাইরে সামাজিক মালিকানা বলে একধরনের মালিকানা আছে। অবাঙালি জাতিগুলোতে এটা চালু আছে। তাদের এই সামাজিক মালিকানার সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকা উচিত।

আরও রয়ে গেল

এ তো গেল কিছু বড় ব্যাপার। এ ছাড়া গরিব মানুষের প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধের দিকে কে তাকাবে? চরাঞ্চলে ভুয়া ভূমিহীনদের হাত থেকে খাসজমি দখলমুক্ত করে প্রকৃত ভূমিহীনদের মধ্যে তা বিতরণ; আন্তনগর ট্রেনে কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য তিনটি সুলভ বগি সংযুক্ত করা দরকার। পচনশীল কৃষিপণ্য বহনকারী যানবাহনকে রাস্তায় ও ফেরীতে আগে যেতে দেওয়া; আখ ও বিট চিনির আবাদ বাড়িয়ে সব চিনিকল সংস্কার করে চালু করা চাই। কৃষকের গুড় উৎপাদনের স্বাধীনতাদানে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের আখমাড়াই আইন এখনো রয়ে গেছে। মহাজনি প্রথা থেকে লবণচাষিদের রক্ষা করতে মিলমালিকদের পক্ষে সরাসরি ক্রয়কেন্দ্র খোলা তো আশু করণীয়।

আইন-আদালত তো এই গরিবদের পক্ষে না। গোবিন্দগঞ্জে দেখেছি, পুলিশ সাঁওতাল কৃষকদের কুঁড়েঘরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। সেই মামলায় উল্টো কৃষকেরা কোর্টের বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দিনাজপুরের ফুলবাড়িরও একই ঘটনা। গত বছর করোনার সময় চিলমারীর একজন কৃষককে ১০ হাজার টাকা ঋণের কারণে ২৫ বছর পর মধুপুর এলাকা থেকে পুলিশ ধরে এনে জেলে ঢুকিয়েছে। হাজার হাজার কৃষক অনাদায়ি কৃষিঋণের দায়ে এলাকাছাড়া। সেই ঋণ আদায়ে মামলা ও গ্রেপ্তারের আইন বাতিল করে সব ধরনের ক্ষুদ্র কৃষিঋণ মওকুফ করা উচিত।

সহস্র জনতার প্রাণের বিনিময়ে সংগঠিত গণ–অভ্যুত্থানের পর এই দাবিগুলো কি খুব বেশি চাওয়া?

নাহিদ হাসান আহ্বায়ক, কৃষক মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন গণকমিটি

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: খ জন র র জন য উৎপ দ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

‘অবৈধ’ বলে হকার উচ্ছেদের যৌক্তিকতা কতটুকু

‘অবৈধ’ বলে হকার উচ্ছেদের যৌক্তিকতা কতটুকু, তা নিয়ে লিখেছেন মোশাহিদা সুলতানা

২০০০-এর দশকে পেরুভিয়ান অর্থনীতিবিদ হার্নান্দো দে সোতো ক্যারিশম্যাটিক বক্তা হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। তিনি মনে করতেন, পুঁজিবাদী অর্থনীতির পূর্ণাঙ্গ বিকাশ অর্থাৎ ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলেই উন্নয়নশীল বিশ্বে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত ৮০ শতাংশের বেশি। তাই ব্যক্তিমালিকানা নিশ্চিত হলেই উন্নয়ন হবে।

বাংলাদেশেও অনেক মানুষ ব্যক্তিমালিকানাকে বৈধতার মাপকাঠি মনে করেন। যখন দে সোতোকে শ্রোতারা প্রশ্ন করতেন, ভূমিসংকটে নিমজ্জিত শহরে, খাসজমিতে এই যে ভাসমান মানুষ এদিক–সেদিক ছড়িয়ে আছে, রাস্তায় দোকান খুলে বসেছে, তাদের কিসের ভিত্তিতে মালিকানা দেওয়া হবে? তিনি তাদের গল্প শুনিয়ে কিছু দিকনির্দেশনা দিতেন।

তাঁর গল্পটা ছিল এ রকম: একদিন তিনি ইন্দোনেশিয়ার বালিতে একটা গ্রামের ধানখেতের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হাঁটার সময় বোঝা যাচ্ছিল না কোন খেতের মালিক কে। তিনি দেখলেন কিছু দূর পরপর ভিন্ন ভিন্ন কুকুর এসে ঘেউ ঘেউ করে, আর চলে যায়। প্রতিটি মালিকের কুকুর জানান দিয়ে যায় তার নিজের সীমানা।

এ গল্পের মাধ্যমে উনি বোঝাতে চাইলেন, দুই রকমের মালিকানা রয়েছে, একটা হলো আইন বা চুক্তি দ্বারা স্বীকৃত অধিকার। আরেকটা হলো বাস্তবভিত্তিক মালিকানা, যা আইন দ্বারা স্বীকৃত না হলেও দখল, নিয়ন্ত্রণ বা অধিকার দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়।

হার্নান্দো দে সোতোর ‘বার্কিং ডগ থিওরি’ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া জাগায়। দে সোতোকে শহরের দরিদ্রদের ভূমি মালিকানা বিষয়ে পরামর্শক হিসেবে বিভিন্ন দেশ নিয়োগ করে। কিন্তু বাস্তবে কাজ করতে গিয়ে দেখা গেল, কাজটা বালির গ্রামে কুকুরের ঘেউ ঘেউয়ের মাধ্যমে মালিকানা শনাক্ত করার মতো সহজ নয়। দরিদ্র মানুষের জন্য দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল অপ্রাতিষ্ঠানিক সম্পত্তির অধিকার উদ্ধার করা খুবই ব্যয়বহুল ও কঠিন কাজ, যা দে সোতো তাঁর তত্ত্বে গুরুত্ব দেননি বা উপেক্ষা করেছেন।

এ নিয়ে ২০০০-এর দশকজুড়ে উন্নয়ন অর্থনীতিবিদেরা বিভিন্ন সমালোচনা ও তথ্য-উপাত্তভিত্তিক গবেষণা হাজির করেন। যেমন শুয়ান গোল্ডফিঞ্চ দেখান যে আনুষ্ঠানিকীকরণ (ফরমালাইজেশন) দরিদ্র ও অপ্রাতিষ্ঠানিক বাসিন্দাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ, এটি ধনী ব্যক্তি বা করপোরেশনগুলোর দ্বারা তাদের উচ্ছেদ বা দখলের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। ইংরেজিতে এটাকে বলা হয় ‘ডাউনওয়ার্ড রেইডিং’ বা বাংলায় ‘নিম্নমুখী উচ্ছেদ’। আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা (ফরমাল সিস্টেম) ওই সব গ্রাম্য বা ঐতিহ্যবাহী ভূমির অধিকারকেও অপসারণ করতে পারে, যার ফলে দরিদ্র মানুষের নিরাপত্তা ও ভূমিহীনতার ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।

২.

দে সোতোর তত্ত্বের মূল ধারণাগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো আনুষ্ঠানিক মালিকানা থাকলে গরিব মানুষেরা সম্পদ জামানত রেখে ঋণের সুবিধা নিতে পারেন। তবে লাতিন আমেরিকা, সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং দে সোতোর নিজের জন্মভূমি পেরুতে একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষদের মালিকানা থাকলেই আনুষ্ঠানিক ঋণের প্রাপ্যতা বাড়ার প্রমাণ খুবই কম। ব্যাংকগুলো এখনো আয় প্রত্যয়ন করার জন্য দলিল চায় এবং দরিদ্র অঞ্চলের নিম্নমূল্যের সম্পত্তি বন্ধক রাখতে চায় না।

এই তত্ত্বকে অনেক সময় একক সমাধান বা ‘সিঙ্গেল বুলেট’ হিসেবে দেখা হয়, যেখানে অন্যান্য জরুরি সংস্কারের কথা বিবেচনা করা হয় না। যেমন বিচারব্যবস্থা উন্নত করা, শক্তিশালী আর্থিক বাজার তৈরি, পুঁজির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা, নগর-পরিকল্পনায় ভাসমান মানুষদের অধিকার স্বীকৃতি দেওয়া, ক্ষমতার ভারসাম্য ও বৈষম্য দূর করা—এসব বিষয় উপেক্ষা করা হয়।

দে সোতোর তত্ত্বের এই প্রায়োগিক দিকের বাস্তবতা অনুধাবন করে শহরের খাসজমিতে ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠার বদলে সামষ্টিক মালিকানার অধিকারচর্চাই হয়ে আসছে। যৌথ ব্যবহার কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, তার দায়িত্ব সরকারের। জনগণ সামষ্টিকভাবে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, পার্ক, জলাশয়ের মালিক। সরকার সেগুলো নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে। সেখানে সামাজিক চুক্তির বাইরে গিয়ে সামষ্টিক সম্পদ একচেটিয়াভাবে ব্যবহার করলে সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করে।

নিয়ন্ত্রণ করা বলতে বোঝায় সব ব্যবহারকারীর স্বার্থ চিন্তা করে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া। এখানে যদি একজন মানুষের স্বার্থও চরমভাবে বিঘ্নিত হয় যা কোনো কিছু দিয়েই প্রতিস্থাপনযোগ্য না, বা যার বিকল্প নেই, তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনার দাবি রাখে। এই নিয়ন্ত্রণ করার ধরন একেক দেশে একেক রকম। কোথাও পারমিট দেওয়া হয়, কোথাও জায়গা বরাদ্দ করে দেওয়া হয়, কোথাও হকারদের স্থানান্তর করার জন্য সরকারি সহায়তাও দেওয়া হয়।

জোরজবরদস্তি বা সহিংসতার মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা মানেই বাস্তবভিত্তিক অদৃশ্য সামাজিক চুক্তি ভঙ্গ করা। সব দেশেই এ ধরনের জোরজবরদস্তি ও সহিংসতাকে অমানবিক হিসেবেই গণ্য করা হয়।

৩.

আদিমকালে মানুষ কোনো জমির মালিক ছিল না। পাহাড়, পর্বত, সমতল, নদী, বন, জলাশয়—সবকিছুই পৃথিবীর মানুষ ও জীবের যৌথ সম্পত্তি। মানুষ তার প্রয়োজনে এসব জমি বসবাসের উপযোগী করেছে। জমি কাজে লাগিয়ে খাদ্য উৎপাদন করেছে, গরু চরিয়েছে, নদী থেকে মাছ আহরণ করেছে। অর্থাৎ এই যৌথ সম্পদকে জীবনের তাগিদে মানুষ ব্যবহার করেছে যৌথভাবে।

পুঁজিবাদের প্রথম ধাপ শুরু হয়েছিল এই জমিকে ব্যক্তিমালিকানাভুক্ত করে এর ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে। কার্ল মার্ক্স একে বলেছিলেন পুঁজিবাদের আদি পাপ বা মূল পাপ, যার মধ্য দিয়ে যৌথ মালিকানার চর্চা বিলুপ্ত হতে থাকে, বিশেষ করে জমির ওপর। তৈরি হয় অভিজাত ভূমি মালিকশ্রেণি। কতিপয়ের ভূমির মালিকানা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যেই শ্রেণি ভূমিহীন, হয় তারা অর্থ বা ফসলের বিনিময়ে শ্রম বিক্রি করে হয় খেতমজুর শ্রেণি। ধীরে ধীরে যখন শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে, তখনো শিল্পকারখানায় শ্রম বিক্রি করে উদ্ভব হয় শ্রমিকশ্রেণির।

অর্থনীতি ও পুঁজির যতই বিকাশ হোক, এই যৌথ সম্পদ থাকতেই হবে। কারণ, একটা রাস্তা শুধু একজনের ব্যবহারের জন্য হতে পারে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, ফ্লাইওভার, পার্ক, মাঠ এগুলো যৌথ সম্পদ। দেশের সব প্রাকৃতিক সম্পদও—বন, পর্বত, খালবিল, নদী—যেমন জনগণের সম্পদ। বাংলাদেশে সহিংসতা ও জোরজবরদস্তি করে অন্যের ভূমি দখল চলছে। সেই প্রিমিটিভ অ্যাকুমুলেশন বা আদিম সঞ্চয়ন এখনো চলছে।

জীবিকার জন্য ব্যবহৃত ভূমি বা জায়গা থেকে যখন তাকে উচ্ছেদ করা হয়, তখন মানুষের মজুর হওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। মজুরের দরকার চাকরি। চাকরি না পেলে তার দায়িত্বও সরকার নেয় না। কাজেই বাধ্য হয়েই মানুষ হকার হয়। আর এটাই তার জন্য বাস্তব সমাধান। এটাকেই বলা হচ্ছে বাস্তবভিত্তিক মালিকানা। এই মালিকানাকে অবৈধ বলা যাবে না, বলা যায় ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চা’।

৪.

একজন হকার যখন রাস্তার একটা কোনায় একটা ঠেলাগাড়ি নিয়ে বসেন, বা একটা ভ্রাম্যমাণ কাঠামো নিয়ে বসেন, তিনি রাস্তার একাংশ দখল করেন। তাঁকে পণ্য বিক্রি করতে হলে সামনে–পেছনে জায়গা খালি রাখতে হয়, যেন খদ্দের এসে অন্তত দাঁড়াতে পারেন। হাঁটার পথ বাধাগ্রস্ত না করেই তাঁকে তা করতে হয়।

কিন্তু একজন ইটভাটার মালিক যখন নদীপাড়ের জায়গা ব্যবহার করে কালো ধোঁয়া ছড়ান, তখন দূষিত বাতাস নিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করেন একজন পথচারীও। একজন চামড়া ব্যবসায়ী যখন বিষাক্ত কেমিক্যাল নদীতে নির্গত করেন, তখনো যৌথ সম্পদ বিনষ্ট হয়। সরকার যখন শহরের পার্কের জমি দখল করে কোনো কোম্পানিকে দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে বানায়, তখনো এক গোষ্ঠীর ব্যবহার বন্ধ করে অন্য গোষ্ঠীর জন্য সুযোগ তৈরি করে।

এখানে চারটা উদাহরণই কিন্তু যৌথ সম্পদের ব্যবহারের। কিন্তু পরের তিনটা উদাহরণে অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। অথচ আমরা দেখছি, বাংলাদেশে নদী, পাহাড়, বন ও পার্ক দখল চলছে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই। সেগুলো নিয়ে প্রতিবাদে খুব বেশি মানুষ শামিল হয় না। অন্যদিকে দেশের স্বল্প ক্রয়ক্ষমতার ব্যক্তিরা রাস্তার দোকান থেকে সস্তায় কেনাকাটা করতে পারে বলেই বাজারের প্রয়োজনেই এই হকার শ্রেণির উদ্ভব হয়েছে, তা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে রাষ্ট্র। চড়াও হয় শুধু হকারের ওপরই।

বুলডোজার দিয়ে ভাঙার পরদিনই আবার কেন ওই একই জায়গায় অন্য হকারদের দেখা যায়—এই প্রশ্ন না করে একশ্রেণির মানুষ ‘অবৈধ’ সংজ্ঞার মধ্যে ফেলে উচ্ছেদের উৎসবে যুক্ত হয়। অবৈধ বলে কিছুদিন না যেতেই বেশি চাঁদা দিতে বাধ্য করে তাকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনা হয়। তাহলে তাদের অবৈধ বলা কেন?

কার স্বার্থে তাদের অবৈধ বলা হয়—এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে। ‘অবৈধ’ আসলে হকার নাকি ‘অবৈধ’ আসলে সেই ব্যবস্থা, যার মধ্য দিয়ে হকারকে চাঁদা দিতে বাধ্য করা হয়? আর এই কাজগুলো যারা করে তাদের সামনে আনা হয় না কেন?

৫.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যাপীঠ। এর একটা ইতিহাস আছে। হকাররা এখানে এমনি এমনি আসেন না। তাঁরা যা বিক্রি করেন, তাঁর চাহিদা রয়েছে বলেই আসেন। এখানেও অদৃশ্য সামাজিক চুক্তির মাধ্যমেই একটা বাস্তবভিত্তিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জনগণের।

এখানে কারও একচেটিয়া মালিকানা নেই যে হকারদের সরাতে যে কেউ লাঠি নিয়ে বের হয়ে যেতে পারে। একমাত্র সরকার পারে সমঝোতার মাধ্যমে বাস্তবসম্মতভাবে জায়গা নির্ধারণ করে দিতে, অনুমতি প্রদান করতে। যেকোনো অনানুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় অনুমোদন ভঙ্গ করে কেউ যদি সহিংসতার আশ্রয় নেয়, সেটাই বরং অন্যায়।

জাতিসংঘের ‘ইউএন হাবিটাট’ বহু বছর ধরে এশিয়ার দেশগুলোতে হকারদের সংকট ও অধিকার নিয়ে কাজ করছে। সংস্থাটির অবস্থান হলো, হকারদের অধিকারকে আইনি স্বীকৃতি দিয়ে তাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে শহর–পরিকল্পনা করতে হবে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে শহরগুলোর উন্নয়নে হকারদের অধিকার রক্ষা অপরিহার্য। কারণ, এটি সামাজিক ন্যায়বিচার ও স্থায়ী শহর গড়ে তোলার মূল ভিত্তি।

বাংলাদেশ কি জাতিসংঘের পরামর্শ অনুযায়ী  নগর-পরিকল্পনা করেছে? হকারদের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেছে? তাদের বসবাসের জন্য কোনো জায়গা নগরীতে বরাদ্দ করেছে? আমাদের নগরগুলোয় হকারদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তাহলে বিকল্পের অভাবে, জীবন ও জীবিকার তাগিদে, কারও অপূরণীয় ক্ষতি না করে, তারা যদি বাস্তবভিত্তিক সমাধানে যায়, তাদের কি ‘অবৈধ’ বলা যায়? দরিদ্র বলেই কি তাদের অপরাধী বানাতে হবে? তাদের জীবিকার উৎসকে ‘অবৈধ’ বলতে হবে?   

আমরা প্রায়ই শুনি বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর বানানো হবে। অথচ সিঙ্গাপুর সরকার শহর–পরিকল্পনায় সক্রিয়ভাবে রাস্তার বিক্রেতাদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়, যেন প্রকল্পগুলোতে হকার স্টলের সুরক্ষা ও স্থানান্তরের সুযোগ থাকে। শুধু তা–ই নয়, সিঙ্গাপুর সরকার হকার ও রাস্তার খাবারের বিক্রেতাদের সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রতিবছর পুরস্কৃত করে, আর্থিক সাহায্য দিয়ে তাদের উৎসাহিত করা হয়। এই সম্মান তাদের জীবিকার অধিকার রক্ষা করতে সহায়তা করে। অথচ আমরা নাকি হকার পিটিয়ে বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর বানাতে চাই!

ভবিষ্যতে হয়তো দেখা যাবে স্বৈরাচারের আমলের মেয়র প্রার্থীর মতো কোনো এক মেয়র পদপ্রার্থী হকারের চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে ভোট চাইবেন। গণমাধ্যম আগের মতোই  ফলাও করে তা প্রচার করবে, তখন এসব মানুষই ভুলে যাবেন আজকের হকারদের দোকান ভাঙার হাহাকার। তাঁরা ভুলে যাবেন গণমাধ্যমে এই হকারদের ‘অবৈধ’ বলে অভিহিত করা হয়েছিল।

বৈধ-অবৈধর সংজ্ঞা যে দেশে ভোটের আগে এক রকম আর ভোটের পরে আরেক রকম, সে দেশে হকারদের অবৈধ বলার পেছনে গ্রহণযোগ্য কোনো যুক্তি নেই। ভুক্তভোগীকে অপরাধীকরণ করে চাঁদাবাজদের ঘাঁটি শক্তিশালী করাই হকারদের ‘অবৈধ’ বলার মূল কারণ বলে প্রতীয়মান হয়।

ড. মোশাহিদা সুলতানা সহযোগী অধ্যাপক, অ্যাকাউন্টিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার
  • ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার ব্যাপক হামলা
  • দিল্লির বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন নবীর বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী
  • কল করে ‘কাকন বাহিনী’র প্রধান বললেন, তিনি প্রকৌশলী, ইজারা নিয়ে বালুর ব্যবসা করছেন
  • থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে আবারো উত্তেজনা
  • স্থপতি থেকে অভিনেতা হোমায়ুন এরশাদি
  • সমঝোতার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা
  • জেফরি এপস্টেইনের ব্যক্তিগত ইমেইলে একাধিকবার ট্রাম্পের নাম
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ
  • ‘অবৈধ’ বলে হকার উচ্ছেদের যৌক্তিকতা কতটুকু