অন্তঃসত্ত্বা কুকুরের ওপর দিয়ে ধীরে চলে গেল গাড়ি, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু
Published: 8th, December 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের ডিসি হিলের মূল ফটক দিয়ে বের হয় একটি সাদা রঙের পিকআপ ভ্যান। ঠিক সেই সময় ফটকের সামনে বসে ছিল একটি কুকুর। গাড়িটি থামেনি। ধীরগতিতে এসে সেটি সরাসরি কুকুরটির গায়ের ওপর দিয়েই চলে যায়। কুকুরটি ছটফট করতে থাকে, আর পেছনে দৌড়ে আসে আরও দুটি কুকুর।
পুরো ঘটনাটি ধরা পড়ে সিসিটিভি ক্যামেরায়, যা পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৪৪ মিনিটে। কুকুরটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল। আহত হয়ে এটি ঘটনাস্থলেই মারা গেছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। পরদিন শুক্রবার থেকেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরিবেশকর্মী ও প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করেন, এমন নাগরিকেরা সংশ্লিষ্ট গাড়িটির চালকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। থানায় এ নিয়ে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ডিসি হিলে সরকারি শীর্ষ দুই কর্মকর্তা চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের বাসভবন। পথচারী ও এলাকার বাসিন্দারা ওই এলাকায় হাঁটতে যান। তবে ওই রাতে ডিসি হিলের প্রধান ফটক বন্ধ ছিল। গাড়িটি বের হওয়ার আগে নিরাপত্তাকর্মী ফটক খুলে দিন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো.
এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পরিবেশকর্মী রিতু পারভী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গেছে, চালকের দায়িত্বহীনতায় কুকুরটির মৃত্যু হয়েছে। আমরা চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
১ মিনিট ৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিও দেখে সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি চিকিৎসক মো. মনজুরুল করিম গতকাল রোববার কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি, কুকুরটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল। গাড়ির চাপায় কুকুরটি মারা গেছে। তাই অভিযোগ করেছি।’ তিনি জানান, ঘটনার পর মৃত কুকুরটিকে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহকারী গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি যাচাই-বাছাই করছি।’
সম্প্রতি পাবনার ঈশ্বরদীতে আটটি কুকুরছানাকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনা হয়। সেখানে উপজেলা কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুল রহমানের সরকারি বাসভবনে জন্মানো ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে হত্যা করা হয়। অভিযোগের পর হাসানুলের স্ত্রী নিশি রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার করা মামলায় তাঁকে আদালত জেলহাজতে পাঠান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত চ লক র ঘটন ট
এছাড়াও পড়ুন:
মাদক একটা ওয়ানওয়ে জার্নি, এটা দিয়ে ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না: উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘মাদক একটা ওয়ানওয়ে জার্নি, এটা দিয়ে ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না। এ পথে ঢুকলে ফেরার রাস্তা নেই। কাজেই আগেই সাবধান হতে হবে। অভিভাবকদের অনুরোধ করব, আপনাদের সন্তানদের সময় দিন। ব্যস্ততা থাকবে, কাজ থাকবে, কিন্তু সন্তানদের সময় দিন। সময় না দিলে সন্তানদের বিপথে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।’
আজ রোববার দুপুরে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষকদের প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যে শিক্ষকেরা আমাদের পড়িয়েছিলেন, তাঁদের বেতন ছিল অত্যন্ত কম। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ডেডিকেশনের অভাব ছিল না। তাঁরা প্রচণ্ডভাবে ডেডিকেটেড ছিলেন ছাত্রদের প্রতি। খুবই যত্ন নিতেন আমাদের। তাঁদের তুলনায় আমাদের বর্তমান শিক্ষকদের বেতন অনেক ভালো। প্রাইমারি স্কুলে আমাদের যাঁরা পড়িয়েছেন ষাটের দশকের গোড়ার দিকে, একজন শিক্ষকের বেতন ছিল ৩২ টাকা। আমার বাবা বেতন পেতেন ৫০০ টাকার বেশি। তাঁরাও কিন্তু প্রচণ্ড ডেডিকেশন নিয়ে আমাদের শিখিয়েছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, আপনাদের (শিক্ষকদের) যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আমি জানি, শিক্ষকদের কত সমস্যা। এরপরও আপনাদের আন্তরিকতা ধরে রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘নেপাল থেকে মালয়েশিয়াতে একজন কর্মী যায় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। আমাদের এখান থেকে যায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়। একই কাজের জন্য একই বেতনে। আমি পৃথিবীর অনেক দেশে গেছি। বাঙালি আছে সব জায়গাতে। অনেক ক্ষেত্রে চাকরি করছে, ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি, সবচেয়ে কম বেতনে চাকরি করে বাঙালিরা। কারণ, প্রশিক্ষণের অভাব, শিক্ষার অভাব। আমাদের যে ম্যানপাওয়ার এজেন্ট আছেন, তাঁরাও প্রতারিত করেন। এটা আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার ব্যর্থতা। এই মানুষগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা আমরা নিতে পারি নাই।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘লেখাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। তোমাদের সামনে প্রচুর সুযোগ আছে। যে জাতি আগে লেখাপড়া শিখেছে, তারা আগে উঠতে পেরেছে। তোমরা লেখাপড়ার প্রতি মনযোগী হও। কারণ, আমাদের এর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের কোনো শর্টকাট নেই, কাজেই আমাদের কঠিন পথে এগোতে হবে। আমাদের সময়ের তুলনায় তোমাদের সুযোগ অনেক বেশি। তোমাদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, যোগ্যতা অর্জনের পথ একমাত্র লেখাপাড়া।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুস সরকার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা জামান, মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান প্রমুখ।