বাশারের পতনের এক বছরে কত মানুষ ঘরে ফিরলেন সিরিয়ায়
Published: 8th, December 2025 GMT
সিরিয়ায় ৫৪ বছর ক্ষমতায় ছিল আল-আসাদের পরিবার। বিদ্রোহীদের হামলার মুখে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদের পতনের মধ্য দিয়ে পরিবারটির দীর্ঘ শাসনের অবসান হয়। আজ এই ঐতিহাসিক ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলো।
১৪ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার প্রায় ৬৮ লাখ মানুষ দেশ ছাড়েন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এ শরণার্থীদের অর্ধেকের বেশি, তথা প্রায় ৩৭ লাখ ৪ হাজার আশ্রয় নেন প্রতিবেশী দেশ তুরস্কে। লেবাননে আশ্রয় নেন প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার। জর্ডানে আশ্রয় নেন প্রায় ৬ লাখ ৭২ হাজার।
২০১২ থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন প্রায় ৭ লাখ ৫ হাজার সিরিয়ার শরণার্থী। তবে নিবন্ধনের বাইরেও ইউরোপের এসব দেশে সিরিয়ার অনেক শরণার্থী রয়েছেন। বাশারের পতনের পর এসব দেশ সিরিয়ার শরণার্থী নেওয়া একধরনের বন্ধ করে দিয়েছে।
সিরিয়ায় যেহেতু এখন একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। তাই লাখ লাখ শরণার্থী এবং প্রবাসে চলে যাওয়া সিরিয়ার নাগরিক দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। চাইছেন নিজ দেশে নতুন করে জীবন শুরু করতে।
ফিরে আসা শরণার্থীআন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্যমতে, বাশারের পতনের পর এক বছরে প্রায় ৭ লাখ ৮২ হাজার সিরিয়ার নাগরিক বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। তাঁদের মধ্যে আলেপ্পোতে ১ লাখ ৭০ হাজার, হোমসে ১ লাখ ৩৪ হাজার এবং দামেস্কের গ্রামাঞ্চলে ১ লাখ ২৪ হাজার মানুষ বিদেশ থেকে স্বদেশে ফিরেছেন।
দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে আসা এসব ব্যক্তিদের অনেকে ব্যবসা শুরু করেছেন। তবে দেশটিতে উপযুক্ত বেতনে চাকরি খুঁজে পাওয়া এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি।
অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষগত এক বছরে সিরিয়ার অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১৮ লাখ মানুষ নিজেদের গ্রাম বা শহরে ফিরেছেন। তাঁদের মধ্যে আলেপ্পোতে ৪ লাখ ৭১ হাজার, ইদলিবে প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার এবং হামায় ৩ লাখ ১৪ হাজার মানুষ নিজ বাড়িঘরে ফিরে এসেছেন।
তালাল নাদার আল-আব্দো নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি ও তাঁর পরিবার গৃহযুদ্ধ চলাকালে একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বাশারের পতনের পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়িতে ফিরে এসেছেন। তিনি বাড়িটির পুনর্নির্মাণ শুরু করেছেন।
গত এক বছরে শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মিলিয়ে সাকল্যে ২৬ লাখ সিরিয়ার নাগরিক নিজ বাড়িঘরে ফিরেছেন। কিন্তু এখনো দেশের ভেতরে ৬০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত রয়ে গেছেন।
ক্ষমতাচ্যুত বাশার আল-আসাদের দেয়ালচিত্রে বুলেটের আঘাতের চিহ্ন। দামেস্কের উত্তর-পূর্ব দিকের আদ্রা শহরে, ২০২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ র র পতন র শরণ র থ এক বছর র এক ব
এছাড়াও পড়ুন:
রূপগঞ্জে ফেসবুক পোস্টে মন্তব্যের জেরে দুপক্ষের সংঘর্ষ, গুলি
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফেসবুক পোস্টের নিচে মন্তব্যের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় যুবলীগের সাবেক এক নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে।
গতকাল রোববার দিবাগত রাত আটটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উপজেলার তারাব পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলপুর এলাকায় দুই দফায় এসব ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় যুক্ত দুটি পক্ষের একটিতে ছিলেন তারাব পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড (উত্তর) ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মিরাজুল মাহিম, তাঁর মামা একই ওয়ার্ডের যুবদলের সভাপতি রবিউল ইসলাম ও তারাব পৌরসভার বরাব ছাপরা মসজিদ এলাকার শহিদুল ইসলাম। শহিদুল বিগত সরকারের সময় যুবলীগ পরিচয়ে তারাব এলাকায় একটি বাহিনীর নেতৃত্ব দিতেন।
অন্য পক্ষে ছিলেন রসুলপুর এলাকার প্রয়াত সুজাত আলীর ছেলে সাকিবুল হাসান, তারাব স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতার ভাই মো. বাবু, যিনি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। সাকিবুলও বিগত সরকারের সময় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।
ঘটনায় জড়িত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাকিবুল হাসানের সঙ্গে সাবেক ছাত্রদল নেতা মিরাজুল মাহিম ও তাঁর মামা রবিউল ইসলামের পুরোনো দ্বন্দ্ব আছে। সাকিবুল সম্প্রতি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা (উত্তর) কমিটির সদস্য হন। এ নিয়ে সাকিবুল তাঁর ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টে মিরাজুল ‘গালিসূচক’ একটি মন্তব্য করেন। এ নিয়ে সাকিবুল ও মিরাজুলের মধ্যে পরবর্তী সময়ে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরপর গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে মিরাজুলের পক্ষ নিয়ে তাঁর মামা রবিউল, মামাতো ভাই সায়েম, সাবেক যুবলীগ নেতা শহিদুলের লোকজন অস্ত্রসহ সাকিবুলের বাড়িতে হামলা চালান। হামলার সময় সাকিবুলের পক্ষ নিয়ে সেখানে আগে থেকে অপেক্ষমাণ থাকা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. বাবুর লোকজনের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় তিনটি গুলির শব্দ শোনা যায়। ঘটনার পর দেখা যায়, মিরাজুলের পক্ষ নিয়ে আসা শহিদুলের বাঁ হাতের একটি আঙুলে গুলি লেগেছে।
ঘটনার বিষয়ে আজ দুপুরে মুঠোফোনে সাকিবুল বলেন, ‘গত বর্ষা মৌসুমে এলাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মিরাজুল ও তাঁর মামা রবিউলের সঙ্গে আমার বিরোধ হয়। সম্প্রতি গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিতে গিয়ে রবিউলের এক ভাতিজা পুলিশের হাতে আটক হলে তাঁরা ধারণা করে যে আমি পুলিশে খবর দিয়েছি। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েই মূলত মিরাজুল আমার ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করে। আমি মন্তব্যের কারণ জানতে চাইলে মিরাজুল তার মামা রবিউল ও ডাকাত শহিদুলকে নিয়ে এসে আমার বাড়িঘরে ভাঙচুর চালায় এবং গুলি করে। আমি শুনেছি, শহীদুল তখন মাদকাসক্ত ছিল, নিজের গুলিতে নিজেই আহত হয়েছেন।’ তাঁর পক্ষে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বাবুর লোকজনের সংঘর্ষে জড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন সাকিবুল।
ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে মিরাজুল মাহিম, রবিউল ইসলাম ও সায়েমের মুঠোফোন নম্বরে বারবার ফোন করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। তাঁদের মুঠোফোন নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও উত্তর দেননি।
ঘটনার বিষয়ে ওই এলাকার এক যুবদল নেতা প্রথম আলোকে বলেন, সাকিবুল বিগত সরকারের আমলে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিল। এ নিয়েই মূলত বিরোধ। গতকাল ফেসবুক মন্তব্যের জেরে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হলে শহিদুল গুলিবিদ্ধ হয়।
এ বিষয়ে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সবজেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দেয়নি। আহত ব্যক্তি অজ্ঞাত কোনো স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে আমরা ধারণা করছি। ঘটনার পর আমরা ওই এলাকায় গেলে জনৈক ব্যক্তি তিনটি গুলির খোসা এনে পুলিশকে দিয়েছেন। এসব গুলির খোসা কবেবার তা আমরা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’