শিশুর স্ক্রিন টাইম নিয়ে আপনার যা জানা জরুরি
Published: 8th, December 2025 GMT
মানুষের বিকাশ মূলত একটি সামাজিক বিষয়। শৈশব থেকেই আমরা আমাদের চারপাশের পরিবেশের অংশ হয়ে উঠতে থাকি। নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিখতে থাকি। বিশেষ করে অপরিচিত পরিস্থিতি ও সংস্কৃতিতে আমরা বেশি শিখি।
প্রাপ্তবয়স্করা যখন শিশুদের সঙ্গে মেশেন, তাঁরা নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি শিশুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন। বড়রা চারপাশের বৈচিত্র্য, জটিলতা ও সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণ করে সবকিছু বুঝতে চেষ্টা করেন।
শিশুরা বড়দের কাছ থেকে শিখতে পারে। অন্যদিকে বড়রাও শেখেন, পৃথিবীকে কীভাবে শিশুদের চোখে দেখতে হয়। আমাদের মনোযোগ যদি স্ক্রিনের দিকেই থাকে, তাহলে কীভাবে আমরা চারপাশের পরিবেশকে দেখতে ও বুঝতে পারব?
শিশুদের কাছে যোগাযোগ কোনো বিমূর্ত কিংবা তাত্ত্বিক বিষয় নয়। বড়দের সঙ্গে কাটানো ছোট ছোট সময়েই তারা যোগাযোগ শেখে। হোক সেটা স্কুলে যাওয়ার পথে একটি শামুককে চলতে দেখা কিংবা বাড়িতে আপনজনদের সঙ্গে বই পড়া। এভাবেই তারা ‘মানুষ’ হয়ে ওঠে।
বড়দের সঙ্গে ছোটদের কাটানো মুহূর্তগুলোকে বিশেষ করে তোলে আমাদের আচরণ। যেমন চোখের দৃষ্টি, কণ্ঠস্বর, ভাষা, হাত–পায়ের নড়াচড়া ইত্যাদি। প্রতিটি বিষয়ই জীবনের শুরুর বছরগুলোয় শিশুর শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আপনার শিশু আর আপনি কতক্ষণ ধরে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকেন, কখন দৃষ্টি সরিয়ে নেন, কীভাবে একজনের পর আরেকজন কথা বলেন—এসব দেখেই শিশু যোগাযোগের প্যাটার্ন বুঝতে শেখে। এই প্যাটার্ন দেখেই শিশু অন্যদের সঙ্গে মিশতে শেখে। দলবদ্ধভাবে কাজ করতে শেখে। শিশুদের সঙ্গে বড়দের পারস্পরিক এই মিথস্ক্রিয়ার কোনো বিকল্প নেই।
আরও পড়ুনশিশু সেপারেশন অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারে ভুগলে করণীয়০২ নভেম্বর ২০২৫‘পোস্ট ডিজিটাল মানুষ’ হয়ে ওঠাস্মার্ট ডিভাইস ও স্ট্রিমিং অ্যাপগুলো এখন দৈনন্দিন পারিবারিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। আজকাল দুই থেকে পাঁচ বছরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিশু প্রতিদিন এক ঘণ্টার বেশি সময় স্ক্রিনে চোখ রাখে। খুব ছোটবেলায় শিশুদের স্ক্রিনে অভ্যস্ত হওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে।
গত ২০ বছরের গবেষণায় দেখা গেছে, ডিজিটাল প্রযুক্তি শিশুদের দৈনন্দিন কাজ—যেমন খেলা, মনোযোগ রাখা, কিছু মনে রাখা, এমনকি ঘুমানো—সবকিছুই বদলে দিচ্ছে।
প্রতিদিন বেশি সময় ধরে স্ক্রিনে চোখ রাখলে শিশুরা কিছু কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ে। যেমন পড়া বা যেকোনো কাজ শেষ করা, পরিবারের মধ্যে সমস্যা হলে শান্ত থাকা ইত্যাদি। বিশেষ করে ঘুমানোর আগে স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে তাদের ঘুমের মান কমে যায়।
এমনকি ব্যাকগ্রাউন্ডে টিভি চলতে থাকলেও শিশুদের খেলার মান কমে যায়। তাদের মনোযোগ নষ্ট হয় এবং তারা খুব অল্প সময় ধরে খেলে।
খাওয়ার সময় শিশুকে শুধু খেতেই দিন, ডিভাইস এ সময় দূরে থাক.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রূপগঞ্জে ফেসবুক পোস্টে মন্তব্যের জেরে দুপক্ষের সংঘর্ষ, গুলি
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফেসবুক পোস্টের নিচে মন্তব্যের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় যুবলীগের সাবেক এক নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে।
গতকাল রোববার দিবাগত রাত আটটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উপজেলার তারাব পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলপুর এলাকায় দুই দফায় এসব ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় যুক্ত দুটি পক্ষের একটিতে ছিলেন তারাব পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড (উত্তর) ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মিরাজুল মাহিম, তাঁর মামা একই ওয়ার্ডের যুবদলের সভাপতি রবিউল ইসলাম ও তারাব পৌরসভার বরাব ছাপরা মসজিদ এলাকার শহিদুল ইসলাম। শহিদুল বিগত সরকারের সময় যুবলীগ পরিচয়ে তারাব এলাকায় একটি বাহিনীর নেতৃত্ব দিতেন।
অন্য পক্ষে ছিলেন রসুলপুর এলাকার প্রয়াত সুজাত আলীর ছেলে সাকিবুল হাসান, তারাব স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতার ভাই মো. বাবু, যিনি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। সাকিবুলও বিগত সরকারের সময় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।
ঘটনায় জড়িত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাকিবুল হাসানের সঙ্গে সাবেক ছাত্রদল নেতা মিরাজুল মাহিম ও তাঁর মামা রবিউল ইসলামের পুরোনো দ্বন্দ্ব আছে। সাকিবুল সম্প্রতি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা (উত্তর) কমিটির সদস্য হন। এ নিয়ে সাকিবুল তাঁর ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টে মিরাজুল ‘গালিসূচক’ একটি মন্তব্য করেন। এ নিয়ে সাকিবুল ও মিরাজুলের মধ্যে পরবর্তী সময়ে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরপর গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে মিরাজুলের পক্ষ নিয়ে তাঁর মামা রবিউল, মামাতো ভাই সায়েম, সাবেক যুবলীগ নেতা শহিদুলের লোকজন অস্ত্রসহ সাকিবুলের বাড়িতে হামলা চালান। হামলার সময় সাকিবুলের পক্ষ নিয়ে সেখানে আগে থেকে অপেক্ষমাণ থাকা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. বাবুর লোকজনের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় তিনটি গুলির শব্দ শোনা যায়। ঘটনার পর দেখা যায়, মিরাজুলের পক্ষ নিয়ে আসা শহিদুলের বাঁ হাতের একটি আঙুলে গুলি লেগেছে।
ঘটনার বিষয়ে আজ দুপুরে মুঠোফোনে সাকিবুল বলেন, ‘গত বর্ষা মৌসুমে এলাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মিরাজুল ও তাঁর মামা রবিউলের সঙ্গে আমার বিরোধ হয়। সম্প্রতি গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিতে গিয়ে রবিউলের এক ভাতিজা পুলিশের হাতে আটক হলে তাঁরা ধারণা করে যে আমি পুলিশে খবর দিয়েছি। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েই মূলত মিরাজুল আমার ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করে। আমি মন্তব্যের কারণ জানতে চাইলে মিরাজুল তার মামা রবিউল ও ডাকাত শহিদুলকে নিয়ে এসে আমার বাড়িঘরে ভাঙচুর চালায় এবং গুলি করে। আমি শুনেছি, শহীদুল তখন মাদকাসক্ত ছিল, নিজের গুলিতে নিজেই আহত হয়েছেন।’ তাঁর পক্ষে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বাবুর লোকজনের সংঘর্ষে জড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন সাকিবুল।
ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে মিরাজুল মাহিম, রবিউল ইসলাম ও সায়েমের মুঠোফোন নম্বরে বারবার ফোন করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। তাঁদের মুঠোফোন নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও উত্তর দেননি।
ঘটনার বিষয়ে ওই এলাকার এক যুবদল নেতা প্রথম আলোকে বলেন, সাকিবুল বিগত সরকারের আমলে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিল। এ নিয়েই মূলত বিরোধ। গতকাল ফেসবুক মন্তব্যের জেরে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হলে শহিদুল গুলিবিদ্ধ হয়।
এ বিষয়ে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সবজেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দেয়নি। আহত ব্যক্তি অজ্ঞাত কোনো স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে আমরা ধারণা করছি। ঘটনার পর আমরা ওই এলাকায় গেলে জনৈক ব্যক্তি তিনটি গুলির খোসা এনে পুলিশকে দিয়েছেন। এসব গুলির খোসা কবেবার তা আমরা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’