নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের অনুমান, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন অবৈধভাবে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার চাঁদা তোলা হয়। তাঁর ভাষায়, বন্দরের প্রায় প্রতিটি জায়গাতেই চাঁদাবাজি চলে।

আজ সোমবার ঢাকায় সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ‘এক বছরের অর্জন ও সাফল্য’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। নৌ পরিবহনের পাশাপাশি শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রমসচিব মো.

সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া।

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে। এ চুক্তির প্রক্রিয়া নিয়ে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট একটি বিভক্ত রায় দেন। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ফাতেমা নজীব চুক্তি সম্পর্কিত প্রক্রিয়াকে অবৈধ ঘোষণা করেন, আরেক বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ার রিট খারিজ করে দেন।

রায়–পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নৌ ও শ্রম উপদেষ্টা জানান, তিনি রায় নিয়ে মন্তব্য করবেন না। তবে যাঁরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন, তাঁরা নতুন বেঞ্চে যাবেন কিংবা প্রধান বিচারপতির শরণাপন্ন হবেন বলে তাঁর ধারণা।

বন্দরে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘আপনারা এসব খবর ছাপান, কিন্তু একবারও জিজ্ঞাসা করেন না যে প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কত অবৈধ টাকা ওঠে। আমি একটি আনুমানিক হিসাব দিতে পারি। দিলে হয়তো তা নিয়ে বিতর্ক হবে।’ তাঁর দাবি, বন্দরের ভেতরের প্রতিটি জায়গায় চাঁদা নেওয়া হয়। ট্রাক ভেতরে ঢুকলে দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়; বাইরে গেলেও চাঁদা দিতে হয়।’

প্রতিদিন কত টাকা ওঠে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আনুমানিক দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। বন্দরে কারও সঙ্গে কথা বললে আরও বেশি হিসাব পাওয়া যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ চাঁদাবাজি বন্ধে কতটা সাফল্য এসেছে জানতে চাইলে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘অনেক কমেছে। বাংলাদেশে পুরোটা বন্ধ করা কি সম্ভব?’

অতীতের প্রসঙ্গ টেনে নৌ উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রামের যিনি মেয়র ছিলেন তিনি ‘মেয়র কম, বন্দররক্ষক বেশি’। তাঁর মন্তব্য, চট্টগ্রাম বন্দর যেন সোনার ডিম পাড়া ‘মুরগির’ মতো—তাড়াহুড়ো করে জবাই করে সব ডিম নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। আগে যেখানে কাজ শেষ হতে দিনের পর দিন লাগত, এখন সেখানে এক থেকে দেড় দিনেই কাজ শেষ হচ্ছে। প্রসঙ্গত, অতিরিক্ত লোভের পরিণতি নিয়ে বাংলায় একটি প্রচলিত রূপকথার গল্প রয়েছে, ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’।

এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা বলবেন, ভালো কাজ হয়েছে। ‘এটা আগের পরিকল্পনা, হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্ত নয়। ফাঁকে অনেক কাজ হয়েছে। এত দিন হয়নি কেন, তা আপনারাই ভালো বলতে পারবেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

অন্তঃসত্ত্বা কুকুরের ওপর দিয়ে ধীরে চলে গেল গাড়ি, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু

চট্টগ্রাম নগরের ডিসি হিলের মূল ফটক দিয়ে বের হয় একটি সাদা রঙের পিকআপ ভ্যান। ঠিক সেই সময় ফটকের সামনে বসে ছিল একটি কুকুর। গাড়িটি থামেনি। ধীরগতিতে এসে সেটি সরাসরি কুকুরটির গায়ের ওপর দিয়েই চলে যায়। কুকুরটি ছটফট করতে থাকে, আর পেছনে দৌড়ে আসে আরও দুটি কুকুর।

পুরো ঘটনাটি ধরা পড়ে সিসিটিভি ক্যামেরায়, যা পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৪৪ মিনিটে। কুকুরটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল। আহত হয়ে এটি ঘটনাস্থলেই মারা গেছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। পরদিন শুক্রবার থেকেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরিবেশকর্মী ও প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করেন, এমন নাগরিকেরা সংশ্লিষ্ট গাড়িটির চালকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। থানায় এ নিয়ে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ডিসি হিলে সরকারি শীর্ষ দুই কর্মকর্তা চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের বাসভবন। পথচারী ও এলাকার বাসিন্দারা ওই এলাকায় হাঁটতে যান। তবে ওই রাতে ডিসি হিলের প্রধান ফটক বন্ধ ছিল। গাড়িটি বের হওয়ার আগে নিরাপত্তাকর্মী ফটক খুলে দিন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাড়িটি সরকারি। একজন কর্মকর্তাকে নামিয়ে দিয়ে আসার পথে এ ঘটনা ঘটে। বিভাগীয় কমিশনার আজ রাত সাড়ে দশটায় প্রথম আলোকে বলেন, একজন কর্মকর্তাকে পৌঁছে দিয়ে গাড়িটি চলে যাচ্ছিল। এর মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক ওই চালককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। কুকুরটির মৃত্যুতে চালকের দায়–দায়িত্ব কতটুকু; তা বের করবে কমিটি। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পরিবেশকর্মী রিতু পারভী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গেছে, চালকের দায়িত্বহীনতায় কুকুরটির মৃত্যু হয়েছে। আমরা চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

১ মিনিট ৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিও দেখে সম্মিলিত পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি চিকিৎসক মো. মনজুরুল করিম গতকাল রোববার কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি, কুকুরটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল। গাড়ির চাপায় কুকুরটি মারা গেছে। তাই অভিযোগ করেছি।’ তিনি জানান, ঘটনার পর মৃত কুকুরটিকে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহকারী গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়।

জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি যাচাই-বাছাই করছি।’

সম্প্রতি পাবনার ঈশ্বরদীতে আটটি কুকুরছানাকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনা হয়। সেখানে উপজেলা কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুল রহমানের সরকারি বাসভবনে জন্মানো ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে হত্যা করা হয়। অভিযোগের পর হাসানুলের স্ত্রী নিশি রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার করা মামলায় তাঁকে আদালত জেলহাজতে পাঠান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ