রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী কল্পনা সাড়ে তিন মাস পর আগামী রোববার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছে। ১৩ বছর বয়সী এই কিশোরী এখন পুরোপুরি সুস্থ আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

গত ১৯ অক্টোবর কল্পনাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। ওসিসির সমন্বয়ক চিকিৎসক সাবিনা ইয়াসমিন বৃহস্পতিবার বলেন, চিকিৎসাসেবা নেওয়ার পর কল্পনা এখন পুরোপুরি সুস্থ। রোববার তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ওই দিনই তাকে আদালতের মাধ্যমে মা-বাবার কাছে দেওয়া হবে।

কল্পনার বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায়। সে শহিদ মিয়া ও আফিয়া বেগমের মেয়ে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় সাড়ে চার বছর গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত কল্পনা। সেখানেই তাকে অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছিল। ভাটারা থানার পুলিশের সহায়তায় ১৯ অক্টোবর রাতে বসুন্ধরার ওই বাসা থেকে কল্পনাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর কল্পনা প্রথম আলোকে জানিয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরে তাকে মারধর করার পাশাপাশি দিনে এক বেলা খাবার দেওয়া হতো। চুল সোজা করার যন্ত্র দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো, লম্বা বেত দিয়ে মারধর করা হতো এবং বন্দী করে রাখা হয়েছিল। মা ফোন করলেও সামনে বাড়ির মালিক দিনাত জাহান থাকতেন বলে মাকেও নির্যাতনের কথা বলতে পারত না কল্পনা।

মেয়েকে মারধরের অভিযোগে আফিয়া বেগম বাদী হয়ে বাড়ির মালিক দিনাত জাহানের বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় মামলা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০২০) অনুযায়ী ওই মামলাটি করা হয়।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ আজ বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কল্পনাকে বিদায় জানান। তিনি বলেন, ‘শিশু নির্যাতন নিয়ে সবাইকে শক্তিশালীভাবে কাজ করতে হবে।’

আরও পড়ুননির্যাতনে গৃহকর্মী শিশুটির চারটি দাঁত ভেঙেছে, শরীরে মারধর ও ছ্যাঁকার ক্ষত২০ অক্টোবর ২০২৪

কল্পনার পরিবারের হাতে ২৫ হাজার টাকা চেক তুলে দেন শারমীন এস মুরশিদ। তিনি বলেন, ‘কল্পনার চিকিৎসা ও আইনি সহায়তার পাশাপাশি তার পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। কল্পনাকে নির্যাতনের কারণে তার শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। চিকিৎসকেরা তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন। তাদের আইনি সহযোগিতাসহ যেকোনো সহযোগিতার জন্য আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ছিল না। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। কল্পনা পড়াশোনা করতে চাইলে তাকে সার্বিক সহায়তা করা হবে।’

আরও পড়ুননির্যাতনে চার দাঁত হারানো গৃহকর্মী কল্পনা এবার হাসিমুখে বাড়ি ফিরবে২৯ জানুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ হকর ম ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

নিরাপত্তাটা কোথায়, প্রশ্ন আনিসুল ইসলামের

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই রাজধানীতে সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের (এনডিএফ) সভাপতি ও জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পরপরই ঢাকা–৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হলো। তাহলে নিরাপত্তাটা কোথায়? এই পরিস্থিতিতে প্রার্থীরা কীভাবে নির্বাচন করবেন, কী করে নির্বাচনে অংশ নেবেন?’

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন রেখে গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন দেশে ‘ইতিহাসের সেরা’ নির্বাচন হবে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

তফসিল ঘোষণার পরদিনই রাজধানীর সড়কে প্রকাশ্যে ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি এখন সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পতিত আওয়ামী লীগ ও ভারত বিরোধিতায় সরব ওসমান হাদির ওপর হামলার নিন্দা জানাচ্ছেন অভ্যুত্থানে সক্রিয় তরুণেরা। তাঁরা বলছেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ জুলাই আন্দোলনের নেতাদের হত্যার লক্ষ্য নিয়ে নেমেছে।

ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ–বিক্ষোভ চলার মধ্যে রাজধানীর গুলশানে একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ১৮টি দলের সমন্বয়ে গঠিত নতুন জোট এনডিএফের প্রধান আনিসুল ইসলাম।

সামগ্রিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘এটাই যদি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হয়, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। মব, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস চলছে। জুলাই আন্দোলনের পরও আগের মতো নির্বাচন হলে মর্মটা নষ্ট হয়ে যাবে।’

নির্বাচনটি সুষ্ঠু করার জন্য সবার সমান সুযোগ ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জোর দিয়ে আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘এই দুটি বিষয়ে সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তফসিল ঘোষণা করা হলেও এখনো দেশে নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়নি। সুরক্ষিত নয় প্রার্থীদের জীবন।’

তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর সুপারিশ জানান এনডিএফের প্রধান। সবাইকে নিয়ে ‘ইনক্লুসিভ’ (অংশগ্রহণমূলক) নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি।

প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করার তাগিদ দিয়ে আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসন আজ ভাগাভাগির প্রশাসন। জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষতা চাই, সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এখনো কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের সময় আছে। যদি না হয়, তাহলে ইতিহাসে তাদের মূল্যায়ন ভালো হবে না। এই অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।’

যুক্তরাজ্যে দেড় যুগ নির্বাসিত জীবনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান সাহেব দেশে ফিরবেন। আমরা বিশ্বাস করি, দেশে ফিরে তিনি দেশের স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করার জন্য অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।’

সংবাদ সম্মেলনে এনডিএফের মুখপাত্র ও জাতীয় পার্টির এই অংশের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় সারা দেশে একটা সংশয় বিরাজ করছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সারা দেশে ১ হাজার ৯৩১ জন খুন হয়েছেন। দেশের সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সব শ্রেণি–পেশার মানুষ আজ সন্ত্রাসের বলি হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির একাংশের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম ও এনডিএফের প্রধান সমন্বয়কারী গোলাম সরোয়ার মিলন উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ