বসুন্ধরায় নির্যাতনের শিকার সেই কল্পনা রোববার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছে
Published: 6th, February 2025 GMT
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী কল্পনা সাড়ে তিন মাস পর আগামী রোববার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছে। ১৩ বছর বয়সী এই কিশোরী এখন পুরোপুরি সুস্থ আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
গত ১৯ অক্টোবর কল্পনাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। ওসিসির সমন্বয়ক চিকিৎসক সাবিনা ইয়াসমিন বৃহস্পতিবার বলেন, চিকিৎসাসেবা নেওয়ার পর কল্পনা এখন পুরোপুরি সুস্থ। রোববার তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ওই দিনই তাকে আদালতের মাধ্যমে মা-বাবার কাছে দেওয়া হবে।
কল্পনার বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায়। সে শহিদ মিয়া ও আফিয়া বেগমের মেয়ে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় সাড়ে চার বছর গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করত কল্পনা। সেখানেই তাকে অমানবিক নির্যাতন করা হচ্ছিল। ভাটারা থানার পুলিশের সহায়তায় ১৯ অক্টোবর রাতে বসুন্ধরার ওই বাসা থেকে কল্পনাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর কল্পনা প্রথম আলোকে জানিয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরে তাকে মারধর করার পাশাপাশি দিনে এক বেলা খাবার দেওয়া হতো। চুল সোজা করার যন্ত্র দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো, লম্বা বেত দিয়ে মারধর করা হতো এবং বন্দী করে রাখা হয়েছিল। মা ফোন করলেও সামনে বাড়ির মালিক দিনাত জাহান থাকতেন বলে মাকেও নির্যাতনের কথা বলতে পারত না কল্পনা।
মেয়েকে মারধরের অভিযোগে আফিয়া বেগম বাদী হয়ে বাড়ির মালিক দিনাত জাহানের বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় মামলা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০২০) অনুযায়ী ওই মামলাটি করা হয়।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ আজ বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কল্পনাকে বিদায় জানান। তিনি বলেন, ‘শিশু নির্যাতন নিয়ে সবাইকে শক্তিশালীভাবে কাজ করতে হবে।’
আরও পড়ুননির্যাতনে গৃহকর্মী শিশুটির চারটি দাঁত ভেঙেছে, শরীরে মারধর ও ছ্যাঁকার ক্ষত২০ অক্টোবর ২০২৪কল্পনার পরিবারের হাতে ২৫ হাজার টাকা চেক তুলে দেন শারমীন এস মুরশিদ। তিনি বলেন, ‘কল্পনার চিকিৎসা ও আইনি সহায়তার পাশাপাশি তার পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। কল্পনাকে নির্যাতনের কারণে তার শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। চিকিৎসকেরা তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন। তাদের আইনি সহযোগিতাসহ যেকোনো সহযোগিতার জন্য আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ছিল না। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। কল্পনা পড়াশোনা করতে চাইলে তাকে সার্বিক সহায়তা করা হবে।’
আরও পড়ুননির্যাতনে চার দাঁত হারানো গৃহকর্মী কল্পনা এবার হাসিমুখে বাড়ি ফিরবে২৯ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিভিন্ন বাদামের যত পুষ্টিগুণ
বাদাম স্ন্যাকস হিসেবে জনপ্রিয়। আমাদের দেশে চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম, আখরোট পাওয়া যায় বেশি। এ ছাড়া অন্যান্য বাদাম হলো ম্যাকাডমিয়াম, পাইন, ব্রাজিল নাট, হেজেলনাট ইত্যাদি। প্রতিটি বাদামের নিজস্ব স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণ রয়েছে।
কাজুবাদাম: কাজুবাদামে বেশ আয়রন থাকে যা নারীদের জন্য ভালো। এ ছাড়া কাজুবাদামে জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়াম থাকে যা হাড়ের স্বাস্থ্য, হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও পলি–আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে ট্রিপটোফ্যান, এটি সেরোটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
কাঠবাদাম: কাঠবাদামে রয়েছে ভিটামিন ই, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট যা ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। রয়েছে প্রচুর মনোস্যাচুরেটেড যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কাঠবাদামে থাকা পিনোলিক অ্যাসিড ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ ও ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
চিনাবাদাম: চিনাবাদামে প্রোটিন, ফাইবার, স্বাস্থ্যকর চর্বি, অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসহ অসংখ্য ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে। চিনাবাদামে ২০টি অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। এ ছাড়া এটি কো-এনজাইমের ভালো উৎস। চিনাবাদামে রেসভেরাট্রল নামক অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। নিয়মিত চিনাবাদাম খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ক্ষুধা কমানো ও ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
আখরোট: আখরোট ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। আখরোটে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আখরোট ভিটামিন ই, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাঙ্গানিজ ও বায়োটিনের ভালো উৎস।
পেস্তাবাদাম: পেস্তাবাদামে ফাইবার ও প্রোটিন বেশি থাকে যা হজমে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পেস্তাবাদাম ভিটামিন বি৬, কপার, ম্যাঙ্গানিজের ভালো উৎস। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, কোলেস্টেরল কমানো ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। পেস্তাবাদামে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
ব্রাজিল বাদাম: ব্রাজিল বাদাম সেলেনিয়ামের ভালো উৎস যা থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন এক–দুটি ব্রাজিল বাদাম খেলে সেলেনিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। এ ছাড়া ব্রাজিল বাদামে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, কপার, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম আছে।
বাদাম কতটুকু খাবেন
যাঁদের ওজন বেশি, পেটের পীড়া, গ্যাস্ট্রিক বা আইবিএস থাকলে বেশি বাদাম না খাওয়াই ভালো। পিত্তথলিতে সমস্যা থাকলে বেশি বাদাম খাওয়া যাবে না। অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্ট আছে যাঁদের, তাঁরা বেশি বাদাম খাবেন না। নির্দিষ্ট ওষুধ বিশেষ করে থাইরয়েড রোগীরা বাদাম খাবেন ওষুধ খাওয়ার ২ থেকে ৩ ঘণ্টা আগে বা পরে। বাদামের সঙ্গে লবণ যোগ করে খাওয়া উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য খারাপ। দিনে ৫০ গ্রামের বেশি বাদাম খাওয়া ঠিক নয়।
লিনা আকতার, পুষ্টিবিদ, রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, দিনাজপুর