দু’দিন আগেও বিদ্রোহী নারী ফুটবলারদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। কোচ পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া মেয়েদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগের খসড়া চূড়ান্তও করে বাফুফের বিশেষ কমিটি। ব্রিটিশ এ কোচকে রেখে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ সাত ফুটবলারকে শাস্তি দেওয়ার চিন্তাও ঢুকে যায় বাফুফে কর্তাদের মাথায়। কিন্তু বুধবার ‘হয় ওরা থাকবে, না হয় আমি’ মন্তব্য করা বাটলারের ওপর অসন্তোষ ফুটবল ফেডারেশনের। বিশেষ করে তদন্ত চলার মধ্যেই তাঁর এমন বিস্ফোরক মন্তব্যকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল হিসেবে দেখছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

দু’পক্ষের অনঢ় অবস্থানে বেকায়দায় পড়া বাফুফে হাঁটছিল সমাধানের পথে। বুধবার ঢাকায় ফেরা সভাপতি তাবিথ আউয়াল গতকাল বিকেল পর্যন্ত মেয়েদের ফুটবলের সংকট নিরসনের চেষ্টা করেন। চলমান ইস্যুর সমাধানে বৃহস্পতিবার কোচ বাটলারের সঙ্গে তাবিথ কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। সেখানে ব্রিটিশ কোচকে সব ভুলে এই মেয়েদের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু বাটলার সরাসরি জানিয়ে দেন, সাত ফুটবলার থাকলে তিনি কোচিং করাবেন না। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি সভাপতি তাবিথ। ‘কোচের ইউরোপিয়ান আর বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে বোঝা উচিত বলে মনে করছে বিশেষ কমিটি। তবে সংবাদ মাধ্যমের কাছে তাঁর মন্তব্যটি সম্পূর্ণ অপেশাদার’– সমকালের কাছে বলেন ওই সূত্র।

জানা গেছে, এই মুহূর্তে মেয়েদের বাদ দেওয়ার মতো কঠিন পথে পা বাড়াতে চান না বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ না করলেও গতকাল নারী ফুটবল দলকে একুশে পদকের জন্য মনোনয়ন করায় দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের বুঝতে বাকি নেই তাঁকে কোন দিকে যেতে হবে। একদিকে মেয়েদের কাউকে শাস্তি দিলে পুরো ১৮ জনের অবসরে যাওয়ার হুমকি, অন্যদিকে কোচ বাটলারকে অব্যাহতি দিলে বড় অঙ্কের ক্ষতির সঙ্গে ফিফার শাস্তির মুখোমুখিও হতে পারে বাফুফে। মাত্রই ব্রিটিশ কোচের সঙ্গে চুক্তি করা ফুটবল ফেডারেশনকে দিতে হবে পুরো দুই বছরের বেতন। তাই বাটলার-নারী ফুটবলারদের দ্বন্দ্বের বিষয়টি সমাধানে রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করতে যাচ্ছেন তাবিথ। সে ক্ষেত্রে মেয়েদের পক্ষ নিয়ে বাটলারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ দর্শানোর নোটিশও ফেডারেশন থেকে দিতে পারে বলে গুঞ্জন আছে। সেটা না করে তাঁকে এলিট একাডেমির দায়িত্বে ফিরিয়ে দেওয়া হতে পারে।

বদমেজাজি এবং একগুঁয়েমি বাটলার অতীতে যেখানেই কাজ করেছেন, সেখানেই ঝামেলা পাকিয়েছেন। ফুটবলারদের বিরুদ্ধে ম্যাচ পাতানোর মিথ্যা অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া, খেলোয়াড়কে কটাক্ষ করে চাকরি হারানো, জাতীয় দল নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব করা, এমনকি বর্ণবাদের মতো সবচেয়ে বাজে কাজ করার অভিযোগ আছে ব্রিটিশ এ কোচের বিরুদ্ধে। বাফুফে হয়তো তাঁর অতীত প্রোফাইল খুব একটা যাচাই-বাছাই না করেই নিয়োগ দিয়েছে। অতীতের বাজে অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা না নেওয়া বাটলারের কারণেই দেশের নারী ফুটবলে এমন অস্থিরতা হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।

পিটার বাটলারের সঙ্গে নারী ফুটবলারদের বিরোধের মীমাংসায় কাজ করা বাফুফের বিশেষ কমিটি বৃহস্পতিবার রিপোর্ট জমা দিয়েছে। দু’দিন ১৮ ফুটবলার এবং এক দিন কোচ বাটলারের কথা শুনেছে কমিটি। সাতজন আলাদা রিপোর্ট একসঙ্গে করে পূর্ণাঙ্গ একটি রিপোর্ট সভাপতি তাবিথের কাছে জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নারী ফুটবলের অস্থিরতার সময়ে গতকাল ভবনে আসেননি তিনি। এটা নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে চলছে সমালোচনা। যদিও তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, পুরো রিপোর্টটি দেখার পরই সুন্দর সমাধানের জন্য বাফুফেতে আসবেন তাবিথ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র ফ টবল ত ব থ আওয় ল ফ টবল র ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা 

সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ