মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলে প্রতি বছরের মতো এবারও মিষ্টিকুমড়ার ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে কৃষকের আশাভঙ্গ হয়েছে বলে জানা গেছে।
কৃষকের ভাষ্য, গত বছরও প্রতি কেজি কুমড়া বিক্রি করেছেন ৩০ থেকে ৩২ টাকায়। এ বছর ১০ থেকে ১২ টাকায় নেমে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীত শেষে বসন্তের আগমনের এই সময়ে আড়িয়ল বিলে শাক-সবজির চাষাবাদ এবং কোথাও কোথাও ধান রোপণ করেছেন কৃষক। ধানের জমির আইলে উৎপাদন করা হয়েছে মিষ্টিকুমড়া ও লাউ। ঢাকা জেলার দোহার, নবাবগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদীখান ও শ্রীনগর উপজেলায় আড়িয়ল বিলের অবস্থান। বিলের বেশির ভাগ অংশ পড়েছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও সিরাজদীখানে। আড়িয়ল বিলে ৭ হাজার ৯৭০ হেক্টর আবাদযোগ্য ভূমি রয়েছে। বছরের সব ঋতুতেই এখানে ফসল হয়।
শ্রীনগর ও সিরাজদীখানে আড়িয়ল বিল থেকে মিষ্টিকুমড়া সংগ্রহের ধুম পড়েছে। একই সঙ্গে ট্রলার ও নৌকায় বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। জমি থেকে কুমড়া তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্থানীয় গাদিঘাট বাজারে। পরে ট্রাকে করে বাজারজাত করা হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে। এবারও একেকটি কুমড়ার ওজন হয়েছে ২০ কেজি থেকে ৯০ কেজি পর্যন্ত। উর্বরতার কারণে আড়িয়ল বিলে মিষ্টিকুমড়া বড় হয়ে থাকে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, আড়িয়ল বিলে সাধারণত দুই রকমের মিষ্টি কুমড়া চাষ করা হয়। একটি দেশি, অন্যটি হাইব্রিড। দেশি কুমড়া আকারে বেশ বড় হয়। রঙও হয় সুন্দর। এ জাতের কুমড়া ইঁদুর ও পোকার কারণে বেশি নষ্ট হয়। এ কারণে অনেক কৃষক হাইব্রিড জাতের কুমড়া চাষের দিকে ঝুঁকেছেন।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের গাদিঘাট এলাকার কৃষক আবুল কাশেম এবারও মিষ্টিকুমড়া ফলিয়েছেন। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রতি কেজি কুমড়া এবার ১০-১২ টাকার বেশি বিক্রি করা যাচ্ছে না। গত বছরই এই কুমড়া বিক্রি করেছেন ৩০-৩২ টাকায়। বাজারে অন্য সবজিরও দাম কম।
আড়িয়ল বিলের গাদিঘাট গ্রামের কৃষক সাহাবুদ্দিন হাওলাদার বলেন, এ এলাকায় তাঁর মতো চার হাজার কৃষক আছেন। তারা অন্য ফসলের পাশাপাশি কুমড়াও ফলান। তাদের সবার অবস্থা প্রায় একই। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার কুমড়ার ফলন অনেক বেশি। কিন্তু প্রত্যাশিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
কৃষক নুরুল হক বলেন, বীজ লাগানোর পর থেকে নিয়মিত পানি-সার দেওয়ার পাশাপাশি অনেক পরিচর্যার কাজ করতে হয়। পরে পাকা কুমড়া বিলের ডাঙার পাড় থেকে শ্রমিক দিয়ে সংগ্রহ করে ঘাট পর্যন্ত আনতে হয়। এরপর পিকআপ বা ছোট ট্রাকে করে পাঠানো ঢাকার কারওয়ান বাজার ও মিরপুরে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই কাজে প্রতি ট্রাক কুমড়ায় খরচ হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকার মতো। কিন্তু এবার কুমড়ার দাম এতটাই কমেছে যে, উৎপাদন খরচই উঠছে না।
নুরুল হক আরও বলেন, এবার কুমড়া চাষের মৌসুমে সারের দাম বেশি থাকায় উৎপাদন খরচও বেশি পড়েছে। প্রতি বস্তা সার ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, এবার মুন্সীগঞ্জে ২২৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়ার চাষ হয়েছে। তাঁর দাবি, প্রতি কেজি কুমড়া কৃষকরা বিক্রি করছেন ১৫-২০ টাকায়।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সামির হোসাইন সিয়াম বলেন, কৃষকরা যেন ভালো দাম পান, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেশের যেসব জেলায় কুমড়ার চাহিদা বেশি, সেসব জেলায় সরাসরি কুমড়া বাজারজাত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হামাসকে অস্ত্রত্যাগে ও গাজার শাসন ছাড়তে সৌদি, কাতার, মিসরের আহ্বান
ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ বন্ধে এ ভূখণ্ডে হামাসের শাসনের অবসান ঘটানো এবং সংগঠনটিকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে কাতার, সৌদি আরব ও মিসরসহ একাধিক আরব দেশ।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের দ্বি–রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রস্তাব পুনরুজ্জীবিত করতে গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের উদ্যোগে নিউইয়র্কে সংস্থাটির সদর দপ্তরে একটি সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সেখানেই গৃহীত সাত পৃষ্ঠার একটি ঘোষণাপত্রে এ আহ্বান জানানো হয়। ঘোষণাপত্রটিকে সমর্থন করেছে ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ।
ঘোষণায় বলা হয়, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে অবশ্যই তার শাসন (এ উপত্যকায়) শেষ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। এটি একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।’
ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ এ ঘোষণায় স্বাক্ষর করে। এতে যুদ্ধ শেষে গাজায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিদেশি সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়। সম্মেলনে ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেয়নি।আগের দিন, জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদল ইসরায়েল ও হামাস উভয়কে গাজা ত্যাগ করার আহ্বান জানায়; যাতে সাগর উপকূলবর্তী এ অঞ্চলটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে।
আরও পড়ুনগাজায় ত্রাণপ্রত্যাশী ৯৩ জনকে হত্যা ইসরায়েলি বাহিনীর, যুদ্ধের বর্বরতার নিন্দায় পোপ২১ জুলাই ২০২৫ঘোষণায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলারও নিন্দা জানানো হয়। তবে এ বিষয়ে এখনো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানায়নি। সম্মেলনের সহআয়োজক ফ্রান্স ঘোষণাপত্রটিকে ‘ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেছে।
আরও পড়ুনগাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ১৮ ঘণ্টা আগেফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো বলেন, ‘প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো হামাসের নিন্দা জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি শাসন থেকে তাদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ও ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে।’
প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো হামাসের নিন্দা জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি শাসন থেকে তাদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ও ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে।জ্যাঁ-নোয়েল বারো, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ এ ঘোষণায় স্বাক্ষর করে। এতে যুদ্ধ শেষে গাজায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিদেশি সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়। সম্মেলনে ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেয়নি।
আরও পড়ুনগাজায় ‘এখনই যুদ্ধ থামাতে’ যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ ২৮ দেশের আহ্বান২২ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনইসরায়েলের স্নাইপাররা এমনভাবে গুলি ছুড়ছিলেন, যেন পশু শিকার করছেন: গাজার বাসিন্দা২১ জুলাই ২০২৫