Samakal:
2025-11-03@09:11:23 GMT

নদী-খাল দখল করে চাষাবাদ

Published: 9th, February 2025 GMT

নদী-খাল দখল করে চাষাবাদ

মদন উপজেলার নদী, খালবিল দখল হয়ে গেছে। পানি শুকিয়ে নদীগুলো নাব্য হারিয়ে পরিণত হয়েছে সরু নালায়। আর খালবিল শুকিয়ে পরিণত হয়েছে ফসলি জমিতে। 
নৌযান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এই সুযোগে নদ-নদীর বুকে চাষাবাদ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বিশেষ করে সড়কপথ গড়ে তোলার সময় নৌপথের চিন্তা না করায় এ দুরবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

জানা গেছে, ২২৫ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে মদন উপজেলা। মগড়া ধলাই, কৈজানী, বর্ণি, ছিনাই, বয়রাহালা, ঘণ্টাবতীসহ ১০ নদী বেষ্টিত এ উপজেলা। চর্তুদিকে প্রবাহিত নদীগুলোর সঙ্গে ২০টি খাল ও ৪৩টি হাওর বিল রয়েছে। এক সময় মিঠা পানির মাছের জন্য বিখ্যাত ছিল মদন উপজেলা। ধান, পাট, সরিষার আবাদ হতো প্রচুর। স্থানীয় জনগণের চাহিদা পূরণ হয়ে উদ্বৃত্ত ফসল বাইরে বিক্রি করা হতো।

আগে নদী, খালবিল থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত এলাকার জেলে পরিবারের লোকজন। বর্তমানে এ উপজেলার ৪ হাজার ৬০৩টি জেলে পরিবার বেকার। অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করছে তারা। 

নদী, খালবিলে হাইব্রিড ধান চাষ, অতিমাত্রায় সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করায় এসব এলাকা থেকে মিঠা পানির অনেক প্রাণী, উদ্ভিদ ও মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এখন আর দেখা মেলে না বক, পানকৌড়ি, বালিহাঁস ও অনেক ধরনের অতিথি পাখির। হারিয়ে গেছে লাল শাপলা, ভেপ, শালুক, সিংড়া, পদ্ম পাতা, কচ্ছপ, কাছিম, শুশুক, ভোদর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপও। হাটবাজারে দেখা যায় না চাপিলা, রিটা, খলিসা, রানী, বৈচা, ফলি, চেংমাছ, বাঘাইর, সিলং, লাছু, টাটা মাছ, নানিত, তারা বাইন, ঘাউড়া, বাতাই, কাইক্কার মতো মিঠা পানির মাছ। হাটবাজারে পাওয়া যায় শুধু চাষের মাছ।

আগে নদী, খালবিলে মাছ ধরতে কারও অনুমতি বা টাকা দেওয়া লাগত না। জেলেরা সহজেই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে পারত। এগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় মাছ ধরার সুযোগ নেই।

নদী, খালবিল শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের সেচ ব্যবস্থায় দেখা দিচ্ছে সংকট। সেচের অভাবে সঠিক সময়ে ফসল ফলাতে পারছেন না তারা। আগে কম খরচে নদী, খালবিল থেকে সেচের পানি তুলতে পারতেন কৃষক। এখন অনেক ব্যয়ে গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিতে হচ্ছে। নদী, খালবিল হারিয়ে গেলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। ইতোমধ্যে ধলাই, বন্নী, ঘণ্টাবতী, বয়রাহালা নদী, যাত্রা খাল, আলহেলালী খাল, হাতি, হিংলাবিল বিলুপ্তির পথে।

ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান সামিউল হায়দার সফি জানান, দ্রুত নদী, খালবিল খননের ব্যবস্থা করলে সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। বিলুপ্তপ্রায় নদী, খালবিল চিহ্নিত করে দ্রুত খনন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

কথা হয় পরিবেশকর্মী অহিদুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, নদী, খালবিল অবৈধ দখলদারিত্বে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। নদী, খালবিল খনন করলে সুফল আসবে। হাওরে ক্রস গাছ রোপণ এবং পরিচর্যা, নিচু জমিতে অতিমাত্রায় বিষ কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পানি শুকিয়ে ও বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধন বন্ধ করতে হবে। অভয়াশ্রম তৈরি ও সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে জলজ প্রাণী, উদ্ভিদ ও মৎস্য সম্পদ রক্ষা পাবে।

মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অহনা জিন্নাত বলেন, ‘অবৈধ দখলে নেওয়া নদী, খালবিল চিহ্নিত করে অচিরেই উদ্ধার করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুতত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। যদিও এর আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথায় জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

প্রেস উইং জানায়, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন থেকে প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।  

এতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর  মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরী ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।

এসব ক্ষেত্রে ফ্যসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে ( সম্ভব  হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বলেও উল্লেখ করা হয়। পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যেকোনো সুযোগ নাই সেটাও সবার বিবেচনায় রাখার জন্য বলা হয়।

সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা না পেলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা করছি। ওনারা যদি আলাপ-আলোচনা করেন, আমাদের জন্য কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়। ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।” 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ