ময়মনসিংহে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে স্বামীকে হত্যার দায়ে স্ত্রী হাফিজা খাতুন ও আব্দুল্লাল আল মামুন নামে একজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার অতিরিক্ত দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক আলী মুনসুর এ রায় ঘোষণা দেন। এ সময় দুই আসামিকে উভয়কে ১ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বিয়ের পর স্ত্রীকে দেশে রেখে হেলাল উদ্দিন দুবাই পাড়ি জমান। এ সময়ে অনৈতিক সর্ম্পকে জড়িয়ে পড়েন স্ত্রী। এক পর্যায়ে হেলাল দেশে ফিরে প্রবাস থেকে পাঠানো টাকার হিসাব চাইলে তাদের সর্ম্পকের অবনতি হয়। ২০১১ সালের ২৮ জুন মুক্তাগাছার ভাবকী এলাকার এ প্রবাসীকে হত্যা করে স্ত্রী হাফিজা ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৪ বছর আগে হেলালের সঙ্গে বিয়ে হয় একই উপজেলার নন্দিবাড়ি গ্রামের হাফিজার। ছয় মাসের মাথায় তাদের সর্ম্পকের অবনতি হলে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরে সালিশের মাধ্যমে ফের তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দ্বিতীয়বার বিয়ের পর তারা হাফিজার বাবার বাড়ি নন্দিবাড়িতে বসবাস করতেন। তাদের সংসারে দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে। হেলাল দুবাই চলে যাওয়ার পর বিদেশ থেকে স্বামীর পাঠানো টাকা বেহিসাবি খরচ করতে শুরু করে হাফিজা। তার পরিবার বাধা দিলে একটি এনজিওতে চাকরি নেয়। একসঙ্গে চাকরির সুবাদে আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে অনৈতিক সর্ম্পকেও জড়িয়ে পড়ে। বিদেশ থেকে ফিরে তার স্বামী টাকার হিসাবে চাওয়ায় তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে তারা হেলালকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরিকল্পিতভাবে গলা কেটে খুনের পর ডাকাতি বলে প্রচার করে। 
নন্দিবাড়ি গ্রামে বসতবাড়ি থেকে হেলালের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এতে তাঁর বোন সাফিয়া আক্তারের সন্দেহ হয়, স্ত্রী এবং আব্দুল্লাহ আল মামুন মিলে তাঁর ভাইয়ের টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করার জন্য ঘুমন্ত অবস্থায় গলা কেটে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় মুক্তাগাছা থানায় মামলা করেন তিনি।

দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালতে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় মুক্তাগাছার ভাবকী এলাকার হাফিজা এবং ময়মনসিংহের চর ঘাঘরা এলাকার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের এপিপি মো.

শামীম উল আজম খান লিসন।

উভয়কে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। হাফিজা রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিল। তবে আব্দুল্লাহ আল মামুন পলাতক রয়েছে। আরেক আসামি আরমান মারা যাওয়ায় আগেই মামলা থেকে তাকে অব্যহতি দেওয়া হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ

এছাড়াও পড়ুন:

‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর আনন্দিপুর গ্রামের মামুন মিয়া (২২) ছোটবেলা থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। প্রায় প্রতি মাসেই তাঁর একাধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এক সময় রক্তের জোগাড় বেশ কষ্টসাধ্যই হয়ে ওঠে। মানুষ বিনা স্বার্থে রক্ত দিতে চাইতেন না। ২০১৬ সাল থেকে পরিবারটিকে রক্তের জন্য আর কাউকে অনুরোধ করতে হচ্ছে না। মামুনের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

সম্প্রতি মামুনের মা মাজেদা বেগম অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘পোলার রক্তের লাইগ্গা মাইনষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেউ রক্ত দিতে চাইতো না। মানুষ টাকা ভিক্ষা চায়, আর আমি মানুষের কাছে আমার পোলার জন্য রক্ত ভিক্ষা করছি। শইল্যে রক্ত না ভরলে আমার পোলা মইরা যাইতো।’

দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তি, জরুরি বা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া কিংবা কিডনি আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রায়ই প্রয়োজন হয় রক্তের। আত্মীয়স্বজন বা চেনাজানা কারও কাছে প্রয়োজনমাফিক রক্ত না পেয়ে অনেকেই ছুটে যান স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের কাছে। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রক্তদাতাকে খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো মহৎ এই কাজেই তাঁদের আনন্দ বলে জানান ময়মনসিংহের ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েকজন কর্মী।

শুধু রক্তদান নয়, সমাজ পরিবর্তনে নানা কাজও করে চলেছে তরুণদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। তবে এর দু-এক বছর আগেই সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী মমিনুর রহমান। তাঁর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ এলাকায়।

সম্প্রতি মমিনুর রহমান বলেন, ‘শুধু রক্তের অভাবে একটি মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে না, এই চিন্তা থেকে কাজ শুরু করি। ময়মনসিংহে রক্তদান নিয়ে কাজ করে—এমন কোনো সংগঠন ছিল না। তখন স্থানীয়ভাবে মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৩৯ জনকে নিয়ে প্রথম সভা করি। পরে সেখান থেকে রক্তদানের এই সংগঠন করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। যেহেতু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বসে ওই সভা হয়েছিল, তাই সংগঠনটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’। ‘আর্তের মুখে হাসি ফোটানোই হয় যদি মানবতা, তবে তার শ্রেষ্ঠ সেবক হলো প্রতিটি রক্তদাতা’, এই স্লোগান সামনে রেখে শুরু হয় এর যাত্রা।

সংগঠনটি থেকে জানানো হয়েছে, রক্তদাতা তরুণেরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংগঠনটির একটি কমিটি ও ফেসবুক পেজ আছে। এর মাধ্যমে কিংবা মুঠোফোনে খবর পেয়েই রক্ত দিতে ছুটে যান তরুণেরা। তরুণদের তৎপরতায় দিন দিন সংগঠনটির পরিসর বাড়ছে। বর্তমানে এই সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার সদস্য আছেন, যাঁরা নিজেরা রক্তদান করেন এবং রক্তদানে অন্য তরুণদের উৎসাহিত করেন। ২০ বারের বেশি রক্ত দিয়েছেন, এমন রক্তদাতা আছেন ৮০ জন, যার ৬০ জনই শিক্ষার্থী। শুধু ময়মনসিংহ শহরেই ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন সংগঠনটির তরুণেরা। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ২০১৮ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৬ বার রক্ত দিয়েছেন। অন্যদের উৎসাহী করতে তিনি বলেন, ‘মুমূর্ষু অবস্থায় মানুষ রক্তের কারণে মারা যাবে, এটি কখনো হতে পারে না। তাই অসুস্থ জটিল রোগীর খবর পেলেই রক্ত দিতে যাই। রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই।’

সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি আবিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুমন রাহাত। স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত আবিদুর রহমান বলেন, ‘যাঁদের রক্তের প্রয়োজন, তাঁরা আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেন। অথবা রক্তের প্রয়োজন ফেসবুকে কারও স্ট্যাটাস দেখলেই আমরা নিজে থেকে যোগাযোগ করে রক্তের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমরা রক্তদানের মাধ্যমে অন্যের জীবন বাঁচিয়ে আনন্দিত হই। আমরা মানুষ বাঁচানোর এই আনন্দ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় রক্তের জন্য মানুষ যেন না মরে, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
  • ‘ভয়ে’ সরকারি তালিকায় নাম না তোলা ইমরান চলে গেলেন নীরবে
  • ‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’
  • কয়েকদিনের তীব্র তাপপ্রবাহের পর ময়মনসিংহে স্বস্তির বৃষ্টি
  • ময়মনসিংহে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতা নিহত
  • নান্দাইলে বাস-ইজিবাইক স্ট্যান্ড দখল নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৬
  • তাপপ্রবাহ আরও দুয়েক দিন, এর পর বৃষ্টি
  • গামছা পরে ঘুমিয়ে থাকার কারণ জানালেন সমু চৌধুরী
  • দিনাজপুর সীমান্তে গভীর রাতে আলো নিভিয়ে ১৫ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ