ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজতে চলতি সপ্তাহে ইউরোপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা। গতকাল রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস এ তথ্য জানিয়েছেন।

টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাইক ওয়ালৎস বলেন, রাশিয়ার অর্থনীতি ভালো অবস্থায় নেই। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমিরি পুতিনকে আলোচনার টেবিলে আনতে মস্কোর ওপর শুল্ক, কর ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে প্রস্তুত ট্রাম্প। চলতি সপ্তাহের সাক্ষাতে ইউক্রেনে কিছু মার্কিন সহায়তা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা শুরু করবে ট্রাম্প প্রশাসন। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে সমর্থনের জন্য ইউরোপীয় মিত্রদের আরও বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।

সাক্ষাৎকারে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের ওই ক্ষতিগুলো পুষিয়ে নিতে হবে। এ জন্য ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদ, তাদের তেল–গ্যাস কেনা এবং তারাও আমাদেরটা কেনার শর্তে ইউক্রেনীয়দের সঙ্গে আমরা একটি অংশীদারত্ব করতে যাচ্ছি।’

মাইক ওয়ালৎস বলেন, ‘ওই আলোচনা চলতি সপ্তাহে শুরু হচ্ছে। আর আমি মনে করি, এখানে একটি অন্তর্নিহিত নীতি হলো—ইউরোপীয়দের এটা ধরে নিতে হবে যে যুদ্ধ আরও সময় ধরে চলবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এটি শেষ করতে চলেছেন।’

মাইক ওয়ালৎসের এই সাক্ষাৎকারের আগে সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়েছিল, ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ট্রাম্প। পরে দুজনের আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তা বলতে চাই না। আমরা যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করছি। আমি প্রেসিডেন্ট থাকলে এই যুদ্ধ কখনোই বাধত না। তবে আমাদের অগ্রগতি হয়েছে। সেগুলো আপনাদের আমি বলতে পারব না।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসার আগে থেকেই দ্রুত ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে ছিলেন ট্রাম্প। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। যদিও পরে ওই ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা ছয় মাসে পরিণত হয়। ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মস্কোর সঙ্গে আলোচনা করছে ওয়াশিংটন। তবে এতে কিয়েভের অংশগ্রহণ নেই। সে সময় ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে কোনো শান্তিচুক্তির বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন ভলোদিমির জেলেনস্কি।

আজ সোমবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত একটি সম্মেলনে যোগ দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। সেখানে সরকারি কর্মকর্তারা থাকবেন। এই সম্মেলন থেকে ভ্যান্স যাবেন জার্মানির মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে। সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মিউনিখে থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং ইউক্রেন ও রাশিয়াবিষয়ক ট্রাম্পের বিশেষ প্রতিনিধি কেইথ কেলগ। পরে আগামী বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ন্যাটোর একটি বৈঠকে যোগ দেবেন হেগসেথ।

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে জেলেনস্কির উপদেষ্টা আন্দ্রি ইয়ারমাকের। তিনি বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে ইউক্রেনের অবস্থান কী, তা তুলে ধরতে এই সম্মেলনকে ব্যবহার করবে কিয়েভের প্রতিনিধিদল। বারবার রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে কী কী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনার আশা করছে কিয়েভ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন য দ ধ য দ ধ বন ধ ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ