পাথর আমদানি বন্ধ পণ্য রপ্তানিতে ধস
Published: 11th, February 2025 GMT
আমদানি মূল্য বেশি হওয়ার কারণে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন পাথরের দাম কমাতে ভারত ও ভুটানের রপ্তানিকারকদের চিঠি দিলেও মেলেনি সাড়া। বরং ওই ঘটনার জের ধরে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশ থেকে কোনো পণ্য নিচ্ছেন না। ফলে বন্দরের দুই প্রান্তে আটকে আছে পাঁচ শতাধিক গাড়ি। পাশাপাশি বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে নির্মাণকাজ কমে যাওয়ায় আমদানি করা পাথরের বাজার মূল্যও কমে যায়। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ ও ১৬ জানুয়ারি ব্যাংক ঋণের সুদ ও আমদানি ব্যয় বাড়াসহ বাজার মূল্যের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে ভারত ও ভুটানের রপ্তানিকারকদের পাথরের মূল্য পুনর্নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয় বুড়িমারী আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন। চিঠির অনুলিপি ওই দুই দেশের হাইকমিশনেও দেওয়া হয়।
এতে কোনো সাড়া না পাওয়ায় ১৯ জানুয়ারি বুড়িমারী অ্যাসোসিয়েশন সভা করে। সভায় সিদ্ধান্ত অনুসারে, ব্যবসায়িক ক্ষতি থেকে রক্ষায় ভুটান থেকে প্রতি টন স্টোন বোল্ডার তোর্শা ১৫ ডলার ও সামসি স্টোন ১৪ ডলার এবং ভারত থেকে স্টোন বোল্ডার তোর্শা প্রতি টন ১০ ডলারে পাঠানোর অনুরোধ জানায় বুড়িমারী আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন। তা না হলে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সাময়িকভাবে এসব পাথর আমদানি বন্ধ রাখার কথাও ওই দুই দেশের রপ্তানিকারকদের জানানো হয়।
এ ঘটনার জের ধরে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারকরা লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে কোনো পণ্য নিচ্ছেন না এবং পাঠাচ্ছেনও না। এতে বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়কে ভারতে রপ্তানির জন্য বিভিন্ন সামগ্রী বহনকারী অন্তত ৫০টি গাড়ি আটকে রয়েছে। অপরদিকে ভারতের চ্যাংরাবান্ধায় প্রায় ৫০০টি ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ দিকে বুড়িমারী স্থলবন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় প্রায় ২ হাজার ২০০ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
আমদানিকারকরা বলছেন, ভুটান থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রতি টন তোর্শা বোল্ডার ও সামসি স্টোন ১৫-১৬ ডলারে আমদানি করতে হয়। অথচ একই পাথর পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ১৪ ডলারে আমদানি করা হয়। এই বৈষম্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ভারত থেকে প্রতি টন স্টোন বোল্ডার তোর্শা আনতে ১৫ ডলার পর্যন্ত খরচ হয়। বুড়িমারী স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, ‘ভারতের রপ্তানিকারকরা অযথা ট্রাক ভাড়া বেশি ধরে আমাদের কাছে ৩ থেকে ৪ ডলার নেয়। আমাদের প্রস্তাবিত দামে পাথর সরবরাহ না করলে আমদানি বন্ধ থাকবে।’ বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সভাপতি আবু রাইয়ান আশয়ারী রছি বলেন, এর আগেও ভারতের রপ্তানিকারকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকতে আমদানি মূল্য কমানোর দাবিতে সব ধরনের পাথর আমদানি সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার রাহাত হোসেন বলেন, পাথর না আসলেও পণ্য রপ্তানিসহ অন্যান্য কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। তবে রাজস্ব আদায় কমেছে। গড়ে প্রতিদিন ২৫ লাখ টাকা হিসেবে ১০ দিনে (সোমবার পর্যন্ত) অন্তত আড়াই কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।
অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন। ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’
যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪