যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির ফান্ড স্থগিতের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে খুলনা অঞ্চলেও। ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প; কোনোটি পড়েছে চরম ঝুঁকিতে। এ অবস্থায় অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। শঙ্কায় রয়েছেন বিভিন্ন প্রকল্পের অন্যান্য কর্মী। এর রেশ ধরে মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) সেবা কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন কাজ।

নগর ভবন ও ৩১টি ওয়ার্ড অফিসের মাধ্যমে নাগরিক সেবা সহজ করতে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ইতোমধ্যে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের জন্য কম্পিউটারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ২০ কর্মচারীকে। দ্বিতীয় ধাপের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলা প্রকল্প বন্ধের নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। গত ২৩ জানুয়ারি প্রকল্পটিতে কর্মরত ১৩ কর্মকর্তা এবং ৩১ স্বেচ্ছাসেবককে ছাঁটাই করা হয়। 

ইউএসএআইডির অর্থায়নে এশিয়ান রেজিলেন্ট সিটিজ (এআরসি) নামের প্রকল্পের অংশীদার সংস্থা হিসেবে কাজ করছিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। গত বছর শুরু হওয়া প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। ওয়ার্ড অফিস ও নগর ভবন ডিজিটাল করা ছাড়াও সৌন্দর্য বর্ধন, ওয়ান হেলথ প্ল্যাটফর্ম গঠন, অটোচালকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, যুবকদের ট্রাফিক আইন ও ফায়ার স্বেচ্ছাসেবক তৈরির কথা ছিল।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু কেসিসিতে চলা এআরসি প্রকল্পই নয়; খুলনা অঞ্চলে ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলা সুন্দরবনকেন্দ্রিক প্রতিবেশ প্রকল্প, দরিদ্রদের আইনি সহায়তা ও নারী-শিশু পাচার প্রতিরোধে নেওয়া আশা প্রকল্প, অগ্রযাত্রা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা প্রকল্প, নারীদের তথ্য অধিকার সম্পর্কিত এডব্লিউআরটিআই প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশব্যাপী চলা খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা সংক্রান্ত প্রকল্প বন্ধ হওয়ায়। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাকসিন প্রদান, স্বল্পমূল্যে নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান ছিল। 

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, গত ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর ২১ জানুয়ারি ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা আসে। ২৩ জানুয়ারি চিঠি দিয়ে তাদের বিষয়টি জানানো হয় এবং ২৫ জানুয়ারি প্রকল্প বন্ধ ও ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়। মাঝপথে প্রকল্প ও চাকরি হারিয়ে সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা পড়েছেন মহাবিপদে। তবে ইউএসএআইডির অংশীদার এনজিওগুলো প্রকল্প বিষয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য ও তথ্য দিতে রাজি হয়নি। এসব প্রকল্পে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, তাও জানা যায়নি।

কেসিসির প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবিরুল জব্বার বলেন, ঘরে বসে পৌর কর, নাগরিক সনদসহ সব ধরনের সেবা প্রদানের জন্য কেসিসিকে ডিজিটাল করার পরিকল্পনা চলছে দীর্ঘদিন। ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল কেসিসির সঙ্গে ইউএসএআইডির চুক্তি হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয় ব্র্যাক। ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণসহ বেশ অগ্রগতি হয়েছিল। গত ২৫ জানুয়ারি তারা চিঠি দিয়ে প্রকল্প স্থগিতের কথা জানায়। এখন বাকি কার্যক্রম কী হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পরে। 

বিষয়টি নিয়ে ব্র্যাকের কেউ মন্তব্য করতে চাননি। তবে একটি সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ব্র্যাকের ঢাকা অফিসে ৩ জন এবং খুলনাতে ১০ জন কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া ৩১টি ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট ভাতা প্রদানের ভিত্তিতে ৩১ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছিল। সবাইকে ছাঁটাই করা হয়েছে। প্রকল্পের মালপত্র তারা কেসিসিকে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

২০২২ সালের ১১ মে সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশ নামে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্প শুরু করে ইউএসএআইডি। সুন্দরবনে প্রকৃতিবান্ধব পর্যটনের বিকাশ ও পর্যটনে বনজীবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চলছিল। প্রকল্প বন্ধের বিষয়ে খুলনা কার্যালয়ে কর্মরত কেউ কোনো মন্তব্য করেননি।

বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার বলেন, প্রকল্প বন্ধের বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। এতে বন সুরক্ষা নিতে ইতিবাচক কাজ ব্যাহত হবে।

অগ্রগতি সংস্থা সাতক্ষীরার নির্বাহী পরিচালক আবদুস সবুর বিশ্বাস জানান, তাদের তিনটিসহ খুলনা বিভাগে ইউএসএআইডির অর্থায়নে ৭/৮টি প্রকল্প চলছিল। এগুলো বন্ধ হওয়ায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও সেবা কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হবে।

রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, সংস্থাটির সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থা পরিচর্যা খাতে। বিনামূল্যে টিকা, অন্তঃসত্ত্বা, মা ও নবজাতকের জন্য জীবন রক্ষাকারী স্বাস্থ্য সহযোগিতা, সার, বীজসহ বিভিন্ন উপকরণে নিম্ন আয়ের মানুষ সরাসরি উপকৃত হতো। কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় এসব খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প প রকল প ব প রকল প র বন ধ র

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ