আগামী দুই দিন শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির পর রোববার মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রত্যাশীরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন এ ঘোষণা দেন তারা। তবে কোথায় এ সমাবেশ করা হবে তা জানানো হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন জান্নাতুন নাঈম সুইটি, সামিয়া আক্তার ও নওরীন আক্তার। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান স্থল ত্যাগ না করবেন না বলে জানান তারা। নিয়োগ প্রত্যাশীরা বলেন, অধিকার আদায় না হলে আত্মহত্যা করবো, তবু আমাদের অধিকার আদায় করবো। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামী দুই দিন শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলমান থাকবে। নারী শিক্ষিকাদের গায়ে পুলিশের হাত তোলার প্রতিবাদ এবং যোগাদানের দাবিতে রবিবার মহাসমাবেশ করা হবে। 

আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে নিয়োগ প্রত্যাশীরা বলেন, আমরা নিয়োগপত্র পেয়েছি। ডোপ টেস্ট হয়েছে। যারা চাকরি পায়নি তারা রিট করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে। অথচ আমাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।   

তারা বলেন, পুলিশ যেসব শিক্ষককে আটক করেছে, তাদের এক ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে। দাবি আদায় না হলে আমরা রাজপথে আত্মহত্যা করবো। রবিবারের মধ্যে অবৈধ প্রহসনের রায় বাতিল করে আমাদের যোগদান নিশ্চিত করতে হবে।

দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগে সড়কে অবস্থান নেন তারা। এতে সায়েন্স ল্যাব হয়ে মৎস্যভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে উঠিয়ে দিতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এছাড়া জলকামান ব্যবহার করা হয়। পুলিশি অ্যাকশনে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কয়েকজনকে আটক করার খবর পাওয়া যায়। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবস থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে ধর্মান্তরের গুজবে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নৈশভোজে পুলিশ ও মবের হানা, মারধরের অভিযোগ

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের জামশেদপুরের একটি হাউজিং সোসাইটিতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের একটি নৈশভোজের অনুষ্ঠানের সময় ধর্মান্তরের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পুলিশসহ শতাধিক লোক সেই বাড়িতে হানা দেন। কিন্তু পুলিশ পরে জানিয়েছে, ওই বাড়িতে ধর্মান্তরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গত ২৬ জুলাই জামশেদপুরের গোলমুড়ি থানা এলাকার একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সেখানে ২১ দিনের উপবাস ও প্রার্থনা শেষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রায় ৫০ জন মানুষ রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। কিন্তু স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, দুটি ফ্ল্যাটে কিছু মানুষ জড়ো হয়ে সন্দেহজনক কিছু করছিলেন।

স্থানীয় গোবিন্দপুর গির্জার যাজক জিতু লিমা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘আমাদের গির্জার প্রায় ৫০ জন সদস্য ২১ দিনের উপবাসের সময় ওই দুটি ফ্ল্যাটে থাকছিলেন। তাঁরা প্রায় সবাই আত্মীয় ও পরস্পরের সঙ্গে চেনাজানা।’

জিতু লিমা বলেন, ফ্ল্যাট দুটি কেবল থাকার জন্য ব্যবহার হচ্ছিল। সেখানে কোনো প্রার্থনা বা ধর্মীয় কার্যক্রম হচ্ছিল না। শুধু উপবাসের শেষ দিন রাতের খাবার খেতে  সবাই সেখানে সমবেত হয়েছিলেন। এতে ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাই ছিলেন।

গির্জার যাজক আরও বলেন, এই অবস্থায় সেখানে পুলিশের সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল জনতার একটি দল (মব) হঠাৎ একটি ফ্ল্যাটে ঢুকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁরা ছয়জনকে থানায় নিয়ে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গির্জার একজন সদস্য অভিযোগ করেন, পুলিশ ও উচ্ছৃঙ্খল জনতা মিলে তাঁদের হয়রানি করেছে এবং থানায় নিয়ে যাওয়ার পর কিছু লোককে মারধরও করা হয়েছে।

জিতু লিমা অভিযোগ করেন, যে কক্ষে রাতের খাবারের আয়োজন চলছিল, সেখানে রাত ৯টার দিকে মব ঢুকে পড়ে। এরপর পুলিশ ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় এবং কাউকে বের না হতে নির্দেশ দেয়। মবে শতাধিক মানুষ ছিল। কিছু পুলিশ সাদাপোশাকে ছিলেন। তাই বোঝা যাচ্ছিল না, কে পুলিশ আর কে মবের লোক।

গির্জার এই সদস্য অভিযোগ করেন, ‘আমাদের প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল। রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমাকেসহ ছয়জনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাদের কয়েকজনকে চড়-থাপ্পড় মারা হয়েছে। পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাই তাঁদের মারধর করেছেন। তিনি তাঁদের জিজ্ঞেস করেছেন, ‘কেন তোমরা লোকজনকে ধর্মান্তর করছ?’

গোলমুড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজেন্দ্র কুমার বলেন, ‘কাউকে মারধরের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। বরং আমি তাঁদের জল খেতে দিয়েছি এবং তাঁদের সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করেছি। তবে আমি বাইরে যাওয়ার পর সোসাইটির কেউ হয়তো কিছু করে থাকতে পারে।’

রাজেন্দ্র কুমার বলেন, ওই রাতে বাসিন্দাদের থেকে মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ সেখানে গিয়েছিল। অভিযোগ ছিল, সেখানে ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য থেকে আসা প্রায় ৫০ জন মানুষ সমবেত হয়েছিলেন।

রাজেন্দ্র কুমার বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমরা তৎক্ষণাৎ অন্যায় কিছু করার বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাইনি। কেউ লিখিত কোনো অভিযোগও জমা দেননি।’

রাজেন্দ্র কুমার আরও বলেন, ‘এফআইআর করার আগের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আমরা থানায় একটি ডায়েরি করেছি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ-ছয়জনকে থানায় আনা হয়েছিল। আমরা জমায়েতটির প্রকৃতি নিয়ে তদন্ত করছি, এ ধরনের সমাবেশের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না, নেওয়া হলে কার নামে নেওয়া হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখছি। তাই এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

জামশেদপুরের উপপুলিশ সুপার (ডিএসপি) সুনীল চৌধুরী বলেন, বিষয়টি থানায় রেকর্ড করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।

গত বুধবার অল ইন্ডিয়া খ্রিষ্টান মাইনরিটি ফ্রন্টের সহসভাপতি ও সংখ্যালঘু অধিকারকর্মী অজিত তিরকে জামশেদপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ধর্মান্তরের মিথ্যা অভিযোগের অজুহাত তুলে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নিপীড়ন বাড়ছে।

অজিত তিরকে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আতাল মহল্লা ক্লিনিক প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে মাদার তেরেসার নামে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ওই জমায়েতে ধর্মান্তরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও হামলাকারী কিংবা অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জামশেদপুরের ডেপুটি কমিশনার কর্ণ সত্যার্থি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, গোলমুড়ি ও ভূঁইয়াদি এলাকায় সাম্প্রতিক ধর্মান্তরের অভিযোগ সংক্রান্ত দুটি ঘটনার বিষয়ে পুলিশ একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

কর্ণ সত্যার্থি বলেন, গোলমুড়ির ঘটনায় পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিল। সেখানে পুলিশ দুটি দলকে পেয়েছিল। একটিতে ছিল ১০০ থেকে ১৫০ জন। অন্য দলে ছিল প্রায় ৫০ জন। অভিযুক্ত হওয়ার কারণে নয়, বরং নিরাপত্তার জন্য খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে থানায় নেওয়া হয়েছিল।

কর্ণ সত্যার্থি আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জোরপূর্বক ধর্মান্তরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সেখানে যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে মাত্র দুই কি তিনজন অন্য ধর্মের ছিলেন। তাঁরা স্বেচ্ছায় প্রার্থনায় অংশ নিচ্ছিলেন। সমবেতদের বেশির ভাগই খ্রিষ্টান। প্রতিবেদনে জবরদস্তির কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

পুলিশ হেফাজতে মারধরের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডেপুটি কমিশনার বলেন, ‘এমনটি হয়ে থাকলে তা অন্যায়। অপরাধী ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে কার সঙ্গে কীভাবে আচরণ করা হবে, সেই ব্যাপারে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। আমরা ঘটনাটি আমলে নিচ্ছি এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মিলে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’

আরও পড়ুনভারতে উড়োজাহাজে সহযাত্রীর থাপ্পড়ের পর খোঁজও মিলছে না যাত্রীর: পরিবারের দাবি৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ