নারীর প্রতি বৈষম্য থাকা আইনে বদল চাইবে সংস্কার কমিশন
Published: 15th, February 2025 GMT
অভিন্ন পারিবারিক আইন তৈরির দীর্ঘদিনের দাবি রয়েছে নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর। যে আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের উত্তরাধিকার, সন্তানের অভিভাবকত্ব, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদে সমান অধিকার থাকবে। তবে সংবিধান সমতার কথা বললেও সমাজে অসমতা থেকে যাচ্ছে। এই অসমতা দূর করতে রাজনৈতিক দলগুলোও পদক্ষেপ নেয়নি। সংবিধান ও আইনে এসব বৈষম্য দূর করতে পরিবর্তন চেয়ে সুপারিশ করতে যাচ্ছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন।
সম্পদ-সম্পত্তি, সন্তানের অভিভাবকত্ব ও হেফাজত, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদে নারীকে সমান অধিকার দেওয়া, বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে বিশেষ বিধানের মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের নিচে) মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার সুযোগ বন্ধ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করার মতো বড় ধরনের সুপারিশ আসছে।
সংবিধান, আইন ও সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নারীর প্রতি যত ধরনের বৈষম্য রয়েছে, তার নিরসন চাইব আমরা। সে লক্ষ্যেই এ মাসের শেষে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ জমা দেব। কিছু সুপারিশ থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য, কিছু সুপারিশ থাকবে পরবর্তী সময়ে যে সরকার আসবে, সেই সরকারের জন্য। এই কমিশন হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফসল। তাই নারীর জীবনে যত প্রকার বৈষম্য রয়েছে, তা নিরসনে সুপারিশ করা হবে।নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হকনির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিটি স্তরের কমিটিতে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্য ছিল গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও)। ২০০৮ সালে নিবন্ধন নেওয়ার সময় দলগুলো তা পূরণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল; কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা পূরণ করতে পারেনি নিবন্ধিত দলগুলো। এখন ২০৩০ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য আরপিও সংশোধন হয়েছে। নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশে নারী প্রতিনিধিত্ব ৪০ শতাংশের বেশি বা সমানসংখ্যক রাখার কথা বলা হতে পারে এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে মিল রেখে জাতীয় সংসদে নারীর জন্য ১০০ সংরক্ষিত আসন রেখে তাতে সরাসরি নির্বাচনের সুপারিশ থাকতে পারে বলে জানা গেছে।
নারী সংস্কার কমিশনে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে আন্দোলনও করেছেন। তাঁরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন কিছু হলেও পরিবর্তন করে যায়, সে চেষ্টা তাঁদের থাকবে।
নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশে নারী প্রতিনিধিত্ব ৪০ শতাংশের বেশি বা সমানসংখ্যক রাখার কথা বলা হতে পারে এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে মিল রেখে জাতীয় সংসদে নারীর জন্য ১০০ সংরক্ষিত আসন রেখে তাতে সরাসরি নির্বাচনের সুপারিশ থাকতে পারে বলে জানা গেছে।নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংবিধান, আইন ও সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নারীর প্রতি যত ধরনের বৈষম্য রয়েছে, তার নিরসন চাইব আমরা। সে লক্ষ্যেই এ মাসের শেষে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ জমা দেব। কিছু সুপারিশ থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য, কিছু সুপারিশ থাকবে পরবর্তী সময়ে যে সরকার আসবে, সেই সরকারের জন্য। এই কমিশন হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফসল। তাই নারীর জীবনে যত প্রকার বৈষম্য রয়েছে, তা নিরসনে সুপারিশ করা হবে।’
তবে সুপারিশ চূড়ান্ত করার আগে এই সময়ে খসড়া সুপারিশে ঠিক কী কী রয়েছে, তা তিনি বিস্তারিত জানাতে চাননি।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন হক বলেন, তাঁরা বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে ঢাকায় ১৩টি এবং ঢাকার বাইরে ৭টি জেলায় সভা করেছেন।
নারী সংস্কার কমিশন গঠনের আগে গত বছরের ২০ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছিল নারী সংগঠনগুলো। ওই সময় ‘নারীপক্ষ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন পারভীন হক আলোচনায় নেতৃত্ব পর্যায়ে ছিলেন।
ওই প্রস্তাবগুলো নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকবে কি না, জানতে চাইলে শিরীন হক বলেন, ‘হয়তো থাকবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র জন য দলগ ল ন রসন
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল
ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র
গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।
গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানেরইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।
ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।
ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।