বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও দেখার ওয়েবসাইট ইউটিউব ২০ বছরে পা দিল। ২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করেছিল ইউটিউব। তবে এটি শুরু থেকেই আজকের মতো উন্মুক্ত ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ছিল না। প্রতিষ্ঠাতারা প্রথমে এটিকে একটি অনলাইন ডেটিং সাইট হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।

তিন তরুণ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা স্টিভ চেন, চ্যাড হার্লি ও জাভেদ করিম ইউটিউবের ভিত্তি গড়েন। ২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ইউটিউব ডটকম ডোমেইন নিবন্ধিত হয়। শুরুতে সাইটটিতে ব্যবহারকারীরা নিজেদের লিঙ্গ পরিচয়, কাঙ্ক্ষিত সঙ্গীর লিঙ্গ ও বয়সসীমা নির্বাচন করে উপযুক্ত সঙ্গী খুঁজতে পারতেন। ভালোবাসা দিবসে ইউটিউবের ডোমেইন নিবন্ধনের পেছনে এটাই ছিল মূল কারণ। তবে সাইটটি প্রত্যাশিত সাড়া পায়নি। কেউ এতে আগ্রহ দেখাননি।

ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতে ইউটিউবের প্রতিষ্ঠাতারা ক্রেগলিস্টে বিজ্ঞাপন দেন। সেখানে ২০ ডলারের বিনিময়ে নারীদের ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করার আহ্বান জানানো হয়। তবে সেই উদ্যোগও ব্যর্থ হয়। ডেটিং সাইট হিসেবে ইউটিউব সফল না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতারা দিক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। ইউটিউবকে কেবল ডেটিং ভিডিওর জন্য না রেখে যেকোনো ধরনের ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়।

২০০৫ সালের ২৩ এপ্রিল ইউটিউবে প্রথম ভিডিও আপলোড করা হয়। ‘মি অ্যাট দ্য জু’ শিরোনামের সেই ভিডিওতে ইউটিউবের সহপ্রতিষ্ঠাতা জাভেদ করিমকে সান ডিয়েগো চিড়িয়াখানায় দাঁড়িয়ে হাতিদের সম্পর্কে বলতে দেখা যায়। এরপর ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে ইউটিউব আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। তবে তখনো এটি তেমন পরিচিতি পায়নি।

ইউটিউবের জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে। ওই সময় জনপ্রিয় মার্কিন কমেডি অনুষ্ঠান স্যাটারডে নাইট লাইভ-এর একটি হাস্যরসাত্মক স্কেচ ‘লেজি সানডে’ ইউটিউবে আপলোড করা হয়। ভিডিওটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এবং ইউটিউবও নজরে আসে বিশ্বের প্রযুক্তিপ্রেমীদের। তবে ইউটিউবই প্রথম ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ছিল না। এর এক বছর আগেই ভিমিও চালু হয়েছিল। কিন্তু ইউটিউবের সহজ ও ব্যবহারবান্ধব ইন্টারফেসের কারণে এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়।

ইউটিউবের জনপ্রিয়তা নজর এড়ায়নি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান গুগলের। ২০০৬ সালের নভেম্বরে ১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ইউটিউব অধিগ্রহণ করে গুগল। এর পর থেকেই ইউটিউব বিশ্বব্যাপী ভিডিও কনটেন্টের প্রধান প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইউটিউব কেবল একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট নয়। এটি বিনোদন, শিক্ষা, সংবাদ ও ব্যবসার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

সূত্র: ম্যাশেবল

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম ২০০৫ স ল র জনপ র য়

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ