চট্টগ্রামে বসন্ত উৎসব মানেই বোধন। ডিসি হিলে বোধনের বসন্ত উৎসব হয়ে উঠেছিল ঐতিহ্যের স্মারক। তবে সময়ের ঘাতে বোধনের বসন্ত উৎসবও ভাগ হয়ে গেছে। এক গ্রুপ বসন্তবরণ করে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলে, অন্য গ্রুপ মাতে পাহাড়তলী আমবাগান রেলওয়ে জাদুঘর সংলগ্ন পার্কে ফাগুন হাওয়ায়। আর বসন্ত উৎসবের প্রাণকেন্দ্র বসন্ত দিনে থাকে নীরব।
এবারও ১৪ ফেব্রুয়ারি গান, নাচ, আবৃত্তি, ঢোলবাদন, কথামালা, শোভাযাত্রায় সরগরম ছিল দুই গ্রুপের বসন্ত উৎসব। পহেলা ফাল্গুন ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করেছে বোধন আবৃত্তি পরিষদের দুই গ্রুপ। পাশাপাশি ১৫ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী চট্টগ্রামের সিআরবি শিরীষ তলায় অনুষ্ঠিত হয় প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের আয়োজনে বসন্ত উৎসব।
পাহাড়তলী আমবাগান রেলওয়ে জাদুঘর সংলগ্ন পার্কে ‘নিবিড় অন্তরতর বসন্ত এলো প্রাণে’ শিরোনামে বোধনের বসন্ত উৎসব সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয় ভায়োলিনিস্ট চিটাগংয়ের যন্ত্রসংগীতের মধ্য দিয়ে।
বোধন আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি সোহেল আনোয়ারের সভাপতিত্বে এ সময় কথামালায় অংশ নেন সংগঠনের উপদেষ্টা বাসুদেব সিনহা, নিপ্পন পেইন্টের সিনিয়র ম্যানেজার মানব কুমার সাহা ও সুবর্ণা চৌধুরী। এরপর বসন্তের হাওয়ায় দলীয় নৃত্যে অংশ নেন– স্কুল অব ক্লাসিক্যাল অ্যান্ড ফোক ডান্স, ওডিসি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, নৃত্যরূপ একাডেমি, মাধুরী ডান্স একাডেমি, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ, নৃত্য নিকেতনের শিল্পীরা।
এরপর নানা ভাব-বন্ধনের গাঢ়তায় গানে অংশ নেন সুরপঞ্চম, ধ্রুপদ সংগীত নিকেতন, আর কে মিউজিক একাডেমি, আন্তর্জাতিক বিশ্বতান ও নন্দিনী রায়। বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করেন বোধন আবৃত্তি পরিষদের আবৃত্তি শিল্পীরা।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিকালের আয়োজন। ঢোলবাদনের মধ্য দিয়ে বসন্ত শোভাযাত্রা পাহাড়তলীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে বসন্ত মঞ্চে যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করে মোহন সংগীত বিদ্যালয়। সংগীত পরিবেশন করে বাগেশ্বরী সংগীতালয়। নৃত্য পরিবেশনায় ছিলেন নৃত্যেশ্বর নৃত্যালয়ের শিল্পীরা। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশনায় ছিল বোধন। পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন– গৌতম চৌধুরী, পল্লব গুপ্ত, পলি ঘোষ, সুচয়ন সেনগুপ্ত, ঋত্বিকা নন্দী, ফাতেমা তুজ জোহরা, ইভান পাল, অংকিতা ভট্টাচার্য্য।
কথামালায় বোধন সভাপতি সোহেল আনোয়ার
বলেন, ‘নানা টানাপোড়েনের গ্লানি মুছে যায় এই
বসন্তে। এ ফাগুনেই রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বাংলার রাজপথ। বুকের রক্তে বাঙালি রক্ষা করেছে মাতৃভাষার মর্যাদা। বসন্ত আমাদের মনে দোলা দিয়ে যায়। আমাদের নতুন করে বাঁচতে শেখায়। আমাদের প্রাণোচ্ছল করে তোলে।’
বোধনের অনুষ্ঠান সম্পাদক মৃন্ময় বিশ্বাস বলেন, ‘সমাজ গঠনের জন্য বাঙালির উৎসব-পার্বণগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। সেই চিন্তা মাথায় রেখে বোধন ২০০৬ সালে চট্টগ্রামে প্রথমবারের মত বসন্ত উৎসবের সূচনা করেছিল। প্রতিবারের মতো এবারও দিনভর বর্ণিল আয়োজনে দিনটি উদযাপন করেছি আমরা। এতে সবার প্রাণবন্ত উপস্থিতি ও ইতিবাচক সাড়া আমাদেরকে আনন্দিত করেছে। সবার সহযোগিতায় এই ধারাবাহিকতা আগামীতেও বজায় থাকবে।’
পুরো দিনের এমন আয়োজন পরিবার নিয়ে উপভোগ করা স্নেহা চৌধুরী বলেন, ‘এই দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকি। দেশের চলমান পরিস্থিতির মাঝে এমন বর্ণিল আয়োজন আনন্দ ও স্বস্তি ফিরে দিয়েছে আমার মতো অনেকের মনে। প্রতিবারের মতো এবারও এমন দারুণ আয়োজনের জন্য বোধন আবৃত্তি পরিষদের সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বড়দের মতো প্রতিটি পরিবেশনা দারুণভাবে উপভোগ করেছে আমার সন্তানরাও। এমন আয়োজন সত্যি প্রশংসার দাবিদার।’
মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলে বোধন আবৃত্তি পরিষদের অন্য অংশের বসন্ত উৎসব শুরু হয় তালতীর্থ তবলা শিক্ষাকেন্দ্রের যন্ত্রসংগীত দিয়ে। যন্ত্রসংগীতে ছিলেন সুদেব কুমার দাশ। দলীয় সংগীতে ছিল সদারঙ্গ উচ্চারঙগ সংগীত পরিষদ, নজরুল সংগীত শিল্পী সংস্থা। একক সংগীত পরিবেশন করেন মহিমা দেব এয়ী, নীপা চৌধুরী।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বসন ত ব ত স র বসন ত উৎসব স গ ত পর আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে মাস্ক পরা যুবক, এরপর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন
লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে কার্যালয়ের নিচতলার একটি কক্ষে থাকা বেশ কিছু মালামাল ও নথিপত্র পুড়ে গেছে। আজ শনিবার ভোর চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পেট্রল ঢেলে কক্ষটিতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ভোরে মাস্ক পরা এক যুবক কার্যালয়ের পশ্চিম পাশের দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকছেন। কিছুক্ষণ পর কার্যালয়ের একটি কক্ষে আগুন জ্বলে উঠতে দেখা যায়। এর পরপরই মাস্ক পরা ওই যুবক আগের মতো দেয়াল টপকে কার্যালয় থেকে বের হয়ে যান।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসাইন বলেন, ‘মাস্ক পরা এক যুবক পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। তখন কার্যালয়ের ভেতরে আমাদের নিরাপত্তা প্রহরী ঘুমিয়ে ছিলেন। ওই নিরাপত্তা প্রহরী আগুনের বিষয়ে টের পেয়ে কে কে বলতেই মাস্ক পরা যুবক পালিয়ে গেছেন।’
মো. ফারুক হোসাইন আরও বলেন, স্টোররুমে দেওয়া আগুনে ২০০৮ ও ২০০৯ সালের ভোটারদের দ্বিতীয় ফরম পুড়ে গেছে। এ ছাড়া একটি অকেজো ডেস্কটপ, সিপিইউসহ কিছু সরঞ্জামও পুড়েছে। আগুন নেভাতে বেশি সময় লাগেনি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুর রশিদ বলেন, আগুনে অফিসের কিছু নথিপত্র পুড়ে গেছে। তবে বিষয়টি দ্রুত টের পাওয়ার কারণে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। দ্রুত আগুন নেভানো গেছে।
লক্ষ্মীপুরের জেলা নির্বাচন কার্যালয়