জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা, জুলাই আগস্টে শহীদদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতে হাসিনার মত ফ্যাসিস্ট যেন জন্ম নিতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।

রোববার রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণহত্যাকারী হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে নারী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সভাটির আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটির নারী বিষয়ক বিশেষ সেল।

সেলের সম্পাদক সাদিয়া ফারজানা দিনার সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখপাত্র সামান্থা শারমীন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, যুগ্ম সদস্যসচিব ডা.

মাহমুদা মিতু, নারী সেলের সদস্য তাসনুভা জাবীন, বৈষোম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম, আশরেখা খাতুন প্রমুখ।

আখতার হোসেন বলেন, জুলাই আগস্টে হত্যাযজ্ঞ চালানোর ঘটনা জাতিসংঘের রিপোর্টে বিস্তারিত উঠে এসেছে। এই মানবতাবিরোধীদের সঠিক বিচারের আওতায় নিয়ে না আসলে বাংলাদেশে নারী পুরুষ কারোই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, খুনি হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। ভারতে বসে হাসিনা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে, ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত সরকারের সঙ্গে কথা বলে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণ চান। তিনি বলেন, সামনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আসতেছে, সেখানে নারী প্রতিনিধিদের বেশি সংযুক্ত করতে হবে। তারা স্থানীয় সরকারে মানুষের কথা শুনে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে। নির্বাচনেও আমরা নারীদের আরো অংশগ্রহণ চাই।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের যে দল আসবে সেখানে আমরা নারীদের শুধু অংশগ্রহণ নয়, সিদ্ধান্তগ্রহণেও চাই। নতুন সংবিধানে নারীদের হিস্যা বুঝে নিতে হবে এবং গণপরিষদে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

নাসীর আরও বলেন, খুনী হাসিনাকে বিদায়ের পর আমরা সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চাই, এখানে নারীদের বড় অংশগ্রহণ রয়েছে। ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থায় নারীদের কেমন ব্যবস্থা হবে, জীবনযাত্রার মান কেমন হবে সেটি আমরা দলীয় অ্যাজেন্ডায় নিয়ে আসব।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ আমরা দেখতে চেয়েছিলাম, সেটি এখনও হয়নি। আমরা এখনও নারীরা ঘরে বাইরে সামাজিক স্বীকৃতির জায়গায় নিগৃহীত, নির্যাতিত হচ্ছে, তাদের অধিকার এখনও ফিরে পায়নি। নারীরা যে কোনো দাবির ব্যাপারে আওয়াজ তুললে তাদেরকে মব জাস্টিসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটির তীব্র নিন্দা জানাই।

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আমরা জুলাইয়েও বলেছি, হয় আমরা থাকবো, নয় আওয়ামী লীগ থাকবে। এর মাঝামাঝি কোনো অবস্থান নাই। সোহেল তাজ বলুন, আর অমুক তাজ বলুন, কোনো তাজেই আর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। নইলে আমরা আবার আন্দোলনে নামব।

নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. মাহমুদা মিতু বলেন, অভ্যুত্থানের বড় শক্তি ছিল নারীরা। হাসিনার রাজাকার সম্বোধনের পর হল থেকে সর্বপ্রথম নারীরা বের হওয়ার পরই হাসিনার পতন ঘনিয়ে এসেছিল। অভ্যুত্থানেও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারীরা। নয়জন নারী মারা গেছে। এ ছাড়া দুই হাজার শহীদের মা, স্ত্রী জীবন্ত শহীদে পরিণত হয়েছেন। তবে তারা হারিয়ে যেতে বসেছেন।

তিনি বলেন, এখনও আওয়ামী লীগ বসে বসে ধর্ষণের হুমকি দেয়। আওয়ামী লীগ কীভাবে এখনও নারীদের লাঞ্ছিত করে, ইন্টেরিমকে তার জবাব দিতে হবে। পাড়ায় পাড়ায় যত ডেভিল আছে, তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে হবে। আমরা আর কোনো ফ্যাসিবাদ চাই না।

নারী সেলের সদস্য তাসনূভা জাবীন বলেন, রাজনীতি করবে রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটা সন্ত্রাসী বাহিনী। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পার্থক্য থাকবে তবে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ র জন ত র জন ত সরক র সদস য আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও