আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে: আখতার
Published: 16th, February 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা, জুলাই আগস্টে শহীদদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতে হাসিনার মত ফ্যাসিস্ট যেন জন্ম নিতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
রোববার রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণহত্যাকারী হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে নারী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সভাটির আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটির নারী বিষয়ক বিশেষ সেল।
সেলের সম্পাদক সাদিয়া ফারজানা দিনার সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখপাত্র সামান্থা শারমীন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, যুগ্ম সদস্যসচিব ডা.
আখতার হোসেন বলেন, জুলাই আগস্টে হত্যাযজ্ঞ চালানোর ঘটনা জাতিসংঘের রিপোর্টে বিস্তারিত উঠে এসেছে। এই মানবতাবিরোধীদের সঠিক বিচারের আওতায় নিয়ে না আসলে বাংলাদেশে নারী পুরুষ কারোই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, খুনি হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। ভারতে বসে হাসিনা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে, ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত সরকারের সঙ্গে কথা বলে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণ চান। তিনি বলেন, সামনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আসতেছে, সেখানে নারী প্রতিনিধিদের বেশি সংযুক্ত করতে হবে। তারা স্থানীয় সরকারে মানুষের কথা শুনে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে। নির্বাচনেও আমরা নারীদের আরো অংশগ্রহণ চাই।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের যে দল আসবে সেখানে আমরা নারীদের শুধু অংশগ্রহণ নয়, সিদ্ধান্তগ্রহণেও চাই। নতুন সংবিধানে নারীদের হিস্যা বুঝে নিতে হবে এবং গণপরিষদে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
নাসীর আরও বলেন, খুনী হাসিনাকে বিদায়ের পর আমরা সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চাই, এখানে নারীদের বড় অংশগ্রহণ রয়েছে। ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থায় নারীদের কেমন ব্যবস্থা হবে, জীবনযাত্রার মান কেমন হবে সেটি আমরা দলীয় অ্যাজেন্ডায় নিয়ে আসব।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ আমরা দেখতে চেয়েছিলাম, সেটি এখনও হয়নি। আমরা এখনও নারীরা ঘরে বাইরে সামাজিক স্বীকৃতির জায়গায় নিগৃহীত, নির্যাতিত হচ্ছে, তাদের অধিকার এখনও ফিরে পায়নি। নারীরা যে কোনো দাবির ব্যাপারে আওয়াজ তুললে তাদেরকে মব জাস্টিসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটির তীব্র নিন্দা জানাই।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আমরা জুলাইয়েও বলেছি, হয় আমরা থাকবো, নয় আওয়ামী লীগ থাকবে। এর মাঝামাঝি কোনো অবস্থান নাই। সোহেল তাজ বলুন, আর অমুক তাজ বলুন, কোনো তাজেই আর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। নইলে আমরা আবার আন্দোলনে নামব।
নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. মাহমুদা মিতু বলেন, অভ্যুত্থানের বড় শক্তি ছিল নারীরা। হাসিনার রাজাকার সম্বোধনের পর হল থেকে সর্বপ্রথম নারীরা বের হওয়ার পরই হাসিনার পতন ঘনিয়ে এসেছিল। অভ্যুত্থানেও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারীরা। নয়জন নারী মারা গেছে। এ ছাড়া দুই হাজার শহীদের মা, স্ত্রী জীবন্ত শহীদে পরিণত হয়েছেন। তবে তারা হারিয়ে যেতে বসেছেন।
তিনি বলেন, এখনও আওয়ামী লীগ বসে বসে ধর্ষণের হুমকি দেয়। আওয়ামী লীগ কীভাবে এখনও নারীদের লাঞ্ছিত করে, ইন্টেরিমকে তার জবাব দিতে হবে। পাড়ায় পাড়ায় যত ডেভিল আছে, তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে হবে। আমরা আর কোনো ফ্যাসিবাদ চাই না।
নারী সেলের সদস্য তাসনূভা জাবীন বলেন, রাজনীতি করবে রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটা সন্ত্রাসী বাহিনী। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পার্থক্য থাকবে তবে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ র জন ত র জন ত সরক র সদস য আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ
১৮৮৬ সালের ১ মেÑএকটি দিন, একটি দাবি, আর হাজারো শ্রমিকের আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতিহাসে রক্তাক্ত দাগ কেটে দিয়েছিল যে মুহূর্ত, তা আজ বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। তখনকার দাবিটি ছিল স্রেফ ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার। কিন্তু আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে শ্রমিকের দাবি শুধু সময়
নয়Ñমর্যাদা, সুরক্ষা ও ন্যায্যতার প্রশ্নও।
এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য “শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এদেশ নতুন করে”Ñএ যেন সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই বার্তা কেবল প্রাসঙ্গিক নয়, বরং তা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের জন্য এক যৌথ দিকনির্দেশনা।
বাংলাদেশের শ্রমচিত্র ও বাস্তবতা
বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত শ্রমনির্ভর। তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ, কৃষি ও নির্মাণ খাতে আরও কয়েক কোটি মানুষ নিয়োজিত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে শ্রমনির্ভর খাত থেকে। কিন্তু যাঁরা এই অর্থনীতির ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করছেন, সেই শ্রমিকরা কি পেয়েছেন তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা?
দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও বহু শ্রমিক পান না ন্যূনতম মজুরি, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা কিংবা ছুটি সংক্রান্ত মৌলিক সুবিধা। নারী শ্রমিকদের পরিস্থিতি আরও জটিলÑযত্রতত্র হয়রানি, মাতৃত্বকালীন সুবিধার অভাব, কিংবা নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে না তোলার ফলে এই খাতেও স্থিতিশীলতা আসছে না।
মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক: দ্বন্দ্ব নয়, দরকার সহমর্মিতা
এক সময় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক মানেই ছিল দ্বন্দ্ব, ধর্মঘট ও হুমকি। তবে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা বলছেÑসহযোগিতাই টেকসই উৎপাদনের চাবিকাঠি। মালিকপক্ষ যখন শ্রমিককে কেবল “ব্যয়” হিসেবে না দেখে “সম্পদ” হিসেবে বিবেচনা করেন, তখন প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। একইভাবে শ্রমিকও যদি বুঝেন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন মানে তার কর্মস্থলের স্থায়িত্বÑতাহলে দুপক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের
ভিত্তি গড়ে ওঠে।
এই বিশ্বাস গঠনের জন্য প্রয়োজন তিনটি স্তম্ভ:
নীতিগত স্বচ্ছতা Ñ ন্যায্য মজুরি, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা দায়িত্বশীল মালিকপক্ষ Ñ কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিতে উদ্যোগ সচেতন শ্রমিকশ্রেণি Ñ অধিকার আদায়ের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের মানসিকতা
নীতি ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও সংশোধিত ২০১৮ সংস্করণ অনুযায়ী শ্রমিকের অধিকার স্বীকৃত হলেও বাস্তবায়নের জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক খাতে (যেমন কৃষি, গৃহপরিচারিকা, গিগ-ওয়ার্কার) শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি এখনও প্রায় উপেক্ষিত।
এছাড়া, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা বীমা, এবং পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা আরও জোরদার হওয়া জরুরি। সরকার শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করলেও তা অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
এই প্রেক্ষাপটে ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে’ দেশ গড়ার বার্তাটি যেন শুধুই স্লোগানে সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং এটি হোক রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আর্থিক বিনিয়োগ ও মানবিক বিবেচনার এক বাস্তব প্ল্যাটফর্ম।
প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও নতুন শ্রম বাস্তবতা
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে শ্রমবাজার দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশন ও গিগ-ইকোনমি অনেক চাকরি বিলুপ্ত করছে, আবার নতুন দক্ষতা চাচ্ছে। বাংলাদেশ যদি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়, তাহলে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, পুনঃস্কিলিং এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এখানে মালিক ও রাষ্ট্র উভয়ের উচিত হবে, শ্রমিককে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে বিনিয়োগ করা, কারণ দক্ষ শ্রমিক ছাড়া কোনো শিল্পই টিকে থাকে না।
মে দিবস: উৎসব নয়, দায়বদ্ধতার প্রতীক
মে দিবস কেবল লাল পতাকা হাতে শোভাযাত্রার দিন নয়, এটি আমাদের মানবিক চেতনার প্রতিফলন। যে শ্রমিক ঘাম ঝরিয়ে ভবন গড়ে, কৃষি জমি চষে, রপ্তানি পণ্য তৈরি করেÑতার জন্য আমাদের উচিত মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা।
এবছর, আসুন আমরা সবাই রাষ্ট্র, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকÑএকটি মানবিক, উৎপাদনশীল ও শীদারিত্বভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যাই। শ্রমিকের হাতে গড়া এই বাংলাদেশ হোক তার জন্যই গর্বের জায়গা।
লেখক পরিচিতি:
মীযানুর রহমান
সাংবাদিক ও সমাজ বিশ্লেষক
মোবাইলঃ ০১৭৫৪১০৯০৭২
যোগাযোগ: : [email protected]